v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-19 19:25:07    
লিংকওয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্হাপনা পরিচালক  এ কে এম আজিজুর রহমানের সাক্ষাতকার

cri

প্র: মি: আজিজুর রহমান কবে থেকে আপনি চীনের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেছেন ?

উ : ১৯৮০ সাল থেকে আমি চীনের সঙ্গে ইনডাইরেক্টলি ব্যবসা শুরু করি । ১৯৮৬ সাল থেকে সরাসরি ব্যবসা শুরু করি চীনের সঙ্গে । তখন আমরা হংকং এর মাধ্যমে চীনের মাল আমদানি করতাম । এর পর থেকেই শেনঝেন মেলা ও কোয়াংচু মেলায় যাই এবং তখন থেকেই সরাসরি আমদানি শুরু করি । এখন আমরা নিয়মিতভাবে চীনের মালামাল আমদানি করি । তবে কোন কোন সময় ভায়া হংকং, থিয়েনজিন ও কোয়াংচু দিয়েও আমদানি করি । চীনের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রটি এখন আগের চেয়ে আরো উন্নত হয়ে উঠছে । আমরাও ব্যবসায় নিজেদের আরো সম্পৃক্ত করতে পারছি । চীনের মালামালের গুণগত মান অনেক ভালো, তা ছাড়াও চীন এখন তাদের পণ্যের কোয়ালিটি নিয়ন্ত্রণ করে পণ্য সরবরাহ করতে পারছে । এ কারনেই চীনের সঙ্গে ব্যবসা করতে আমরা ইন্টারেস্টেড । বিশেষ করে দামের ব্যাপারে চীন এখন খুব রিজনেবল । পৃথিবীর চাহিদা আনুযায়ি বিভিন্ন আইটেম চীন এখন তৈরি করে সরবরাহ করতে পারছে । চীনের কোয়াংচু'তে আমি চশমা সংক্রান্ত মেলায় গিয়েছি এবং চীনের ব্যবসায়িদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে লেটেস্ট ডিজাইনের চশমা আমদানি করেছি । বিভিন্ন সময়ে আমি কোয়াংচুসহ চীনের বিভিন্ন চশমা ফ্যক্টরিগুলো পরিদর্শন করেছি এবং তাদের আধুনিক চশমা তৈরির প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনেছি । তাদের ম্যাশিনারিজ ও প্রযুক্তিকে আমি আমার ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করছি এবং আমার বন্ধুরাও তাদের ফ্যাক্টরিগুলোয় এখন চীনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে । চীনের যে লেবার পলিসি রয়েছে, পাশাপাশি তারা যে সুযোগ- সুবিধা শ্রমিকদের দিচ্ছে তা জেনে আমরাও আমাদের কারখানায় তা ইমপ্লিমেন্টের চেস্টা করছি । চীনের ব্যবসায়িক দিক গুলোকে আমরা অনুসরন করার চেস্টা করে যাচ্ছি যাতে আমরাও যেন আমাদের দেশকে তাদের মত ডেভেলপ করতে পারি ।

প্র: চীন থেকে কী ধরনের পণ্য আপনি আমদানি করেন ?

উ : চীন থেকে আমি বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকি । যেমন, ফটোগ্রাফিক ক্যামিকেল, ফটোগ্রাফিক পেপার এবং ফটোগ্রাফি সংশ্লিস্ট বিভিন্ন ম্যাটেরিয়েল আমদানি করি । এ ছাড়াও চশমার ফ্রেম ও চশমার উন্নত মানের লেন্সও নিয়ে আসছি ।। এই মুহূর্তে আমরা ম্যাশিনারিজের কথা ভাবছি । আমার নিটিং ইন্ডাস্ট্রি আছে । আমি নিটিং ফেব্রিক্স তৈরি করি এবং তা রফতানিকারকদের কাছে সরবরাহ করি । আমাদের দেশে যে সব গার্মেন্টস আছে তারাও আমার তৈরি সুতা কিনে থাকে । এই নিটিং ইন্ডাস্ট্রির ম্যাশিনারিজগুলোর স্পেয়ার পার্টসও আমরা এখন চীন থেকে ইমপোর্ট করছি ।

প্র: আপনি বলেছিলেন আপনি ৮০'র দশক থেকে চীনের সঙ্গে ব্যবসা করছেন । প্রায় দু' দশক পার হয়ে গেল । এই যে দীর্ঘ সময়, এ সময় আপনি চীনের কী পরিবর্তন দেখেছেন ?

ঊ : এ সময় চীনের যে পরিবর্তন দেখেছি তা বলতে গেলে অভূতপুর্ব । তাদের জিডিপি যে জায়গায় পৌঁছেগিয়েছে তাতে তারা পৃথিবীতে একটা বিরাট শক্তি । আমরা যদি তাদের সাথে সাথে আগাতে পারতাম তা'হলে আমাদের ও অন্তত কিছুটা উন্নতি হত । চীন সত্যিকার অর্থেই এখন একটা ব্যবসায়িক শক্তি। অতএব হিসেব করার এখানে কিছু নেই । সব সেক্টরে চীনা জনগণ যে ভাবে পরিশ্রম করে তা তুলনাহীন। আমি আমেরিকার বিভিন্ন সেক্টরও দেখেছি । চীনের মত দেখিনি । বিশেষ করে মাছের সেক্টরেও দেখেছি । আমি রাজশাহীতে মাছের খামার করেছি । মাছের খামারের কাজে আমার একজন পরিচালক চীনে গিয়েছিল তাদের অবস্হা দেখতে এবং আসার সময় তিনি চীনের কিছু ক্যাটালগ নিয়ে এসেছেন । তাতে যে ডেভেলপমেন্ট দেখলাম; তাতে তারা তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্বের যে কোন কিছুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে । তাই এখন আমি চিন্তা করছি মাছের খামারের জন্য উন্নত প্রযুক্তি তাদের দেশ থেকেই আনবো ।

প্র: এ প্রযুক্তিটা কেমন একটু ব্যাখা করবেন ? আমাদের দেশেওতো মাছের চাষ হচ্ছে। কিন্তু আপনি বলেছেন যে চীনে আরো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে ।

উ : তারা আধুনিক ম্যাশিনারিজ ব্যবহার করছে, অথচ আজও আমরা কোন ম্যাশিনারিজই ব্যবহার করতে পারছিনা । আমরা মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছের খাবারসহ কিছু কিছু ব্যাপারে নিজস্ব আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করার চেস্টা চালাচ্ছি । আধুনিক ম্যাশিনারিজ আমাদের নেই । যেমন ধরেন, পকুরে বাতাস দিতে হয় । অক্সিজেনের জন্য । তারা ম্যাশিনের মাধ্যমে সেটা করে । কিন্তু সেটা আমাদের দেশে নেই ।

প্র: এই প্রযুক্তি কি বাংলাদেশে একদম নেই ?

উ : আছে, তবে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র । যাদের বড় ধরনের প্রজেক্ট আছে এবং যারা এক্সপোর্ট- ইমপোর্ট করে তারা তাদের চিংড়ি মাছের প্রজেক্টে আমদানে করে ব্যবহার করছে । মিঠা পানির প্রজেক্টে এটা এখনো ব্যবহার হচ্ছে না । তার কারন হচ্ছে আমরা কম পুজি খাটাচ্ছি । এ ছাড়াও মাছের যে ভাইরাস অর্থাত মাছের চিকিতসার ক্ষেত্রেও আমরা পুরোপুরি প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারি নি ।

প্র: এ প্রযুক্তি কি চীনে আছে ?

উ : হ্যাঁ, চীনে আছে । সে জন্যই আমরা চীনের সঙ্গে ব্যবসা আরো বাড়াচ্ছি এবং আশা করছি আমরা এ বিষয়ে চীনের সাহায্য পাবো ।

প্র: বর্তমান সময়ে বলা হয়ে থাকে যে চীন প্রতিদিনই নয়, প্রতি সেকেন্ডে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টিকে আপনি কী ভাবে দেখেন ?

উ : অবশ্যই , প্রতি সেকেন্ডে যাকে বাংলায় বলে মুহূর্ত। প্রতি মুহূর্তেই চীনের জিডিপি'র হার বাড়ছে । কারন সেখানে সঠিক নেতৃত্ব এবং আধুনিক প্রযুক্তি আছে । তাদের মেধা আছে, তাদের বুদ্ধি আছে । সঠিক প্রয়োগ আছে । সে জন্যই তারা পারছে ।

প্র: একটি বিষয় আপনি লক্ষ্য করেছেন, যেহেতু আপনি চীনের বহু শহর ঘুরেছেন । ওখানে যত মানুষ আছে, পুরুষ হোক আর নারীই হোক, কর্মক্ষম যারা, তারা সবাই কাজ করছে । বাংলাদেশ বা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে দেখা যায় যে, নারীরা সাধারনত গৃহস্হালি কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ করছে না । এ বিষয়টিকে আপনি কী ভাবে দেখেন ?

উ : চীনে নারী - পুরুষ বলতে কিছু বুঝায় না, সবাই মানুষ । পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে তারা সবাই কাজ করছে । একজন প্রাপ্ত বয়স্ক তাকে কাজ করতে হবে এবং কাজ করলেই সে কেবল খেতে পারবে । এই জিনিসটা তাদের ভেতর আছে বলেই তারা কাজ করতে পারছে । এমনই দেখেছি যে সাপ্তাহিক ছুটিতে যেতে হলেও তাদের অনেক নিয়ম কানুন মেনেই ছুটিতে যেতে হয়। যেহেতু আমি গার্মেন্টস সেক্টরে আছি , আমি দেখতে পাচ্ছি যে বাংলাদেশের নারীরাও অনেক এগিয়ে আসছে । আমি আশা করি আগামীতে তারা আরো এগিয়ে আসবে । আর আগামী দশকে আমরাও আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো চীনের সহায়তা নিয়ে । চীনতো আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু । অকৃত্তিম বন্ধু এই মুহূর্তে । আমরা চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তি আশা করি । আধুনিক প্রযুক্তি তারা নিজেরাই তৈরি করে । তাদের জীবন মান এখন অনেক সহজ । তারা কাজ করলেই একটা স্ট্যান্ডার্ড জীবন মেনটেইন করতে পারে । আমি আশা করি সে জন্য তারা আমাদের প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করতে পারবে । আমি এটকুই আশা করি, এবং আমার বিশ্বাস যে, চীন সরকার আমাদের দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য কৃষি ক্ষেত্রের যে টেকনোলজি তারা ব্যবহার করছে তা দিয়ে আমাদেরকেও সাহায্য করবে ।

প্র: আপনি আমার সাথে একমত হবেন যে, চীন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে নানাভাবে সাহায্য করছে । হয়তো ওদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে । তারপরও ওরা অন্য দেশকেও সাহায্য করতে চায় । এ বিষয়টিকে আপনি কী ভাবে দেখেন ?

উ : এটা তাদের একটা মহত্ গুণ । উন্নত দেশগুলো যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য না করে তাহলেতো উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত হতে পারবে না । সে জন্যই চীনের সমর্থন আমদের খুব বেশি প্রয়োজন ।

প্র: সব ক্ষেত্রেই চীন নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদের সাহায্য করে যাচ্ছে। তাই না ?

উ : একটা উন্নত দেশ হিসেবে চীন আমদের খুব কাছাকাছি দেশ । যদিও মাঝখানে অন্য একটি দেশ আছে, তারপরও তারা আমাদের অনেক কাছে । ইউরোপ ও আমেরিকার চেয়ে উন্নত টেকনোলজি নিয়ে আসা খুব সহজ । এবং কাছে বলেই আমরা খুব সহজেই তাদের কাছ থেকে আমদানি করতে পারবো ।

প্র: আপনি জানেন যে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে সত্তুর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চমত্কার কুটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে । একে আপনি কী ভাবে মূল্যায়ন করেন ?

উ : চীনের সঙ্গে আমাদের যে রাস্ট্রীয় সম্পর্ক রয়েছে তার ভেতর কোন খাদ নেই । যে সরকারই আসুক না কেন সবার সঙ্গেই একটা সুসম্পর্ক থাকবে ; যেটা অতীতেও ছিল । চীনের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণ এক হয়ে আছে ।

প্র: চীনের সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি, যাকে বলে প্রাচ্য সংস্কৃতি। বলতে গেলে তা প্রায় একই ধরনের। তাই না ?

উ : অবশ্যই। ব্যবসায়িক কাজে আমি চীনে গিয়েছি এবং আমার এক ব্যবসায়িক কলিগের বাসায় আমাকে আপ্যায়ন করেছে, আমি যে ভাবে বলেছি ঠিক সে ভাবেই । যদিও তার সঙ্গে আমাদের ধর্মীয় পার্থক্য রয়েছে । তারা আমার জন্য নতুন কাট্লারিজ কিনে এনে রান্না করেছে । সত্যি, আমদের মতই তারাও অসম্ভব অতিথি পরায়ন ।

প্র: আপনিতো দীর্ঘদিন ধরে চীনের সঙ্গে ব্যবসা করছেন । আপনার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে । এখন নতুন যারা চীনের সঙ্গে ব্যবসা করতে চান, তাদের কি আপনি সি আর আই - এর মাধ্যমে কোন পরামর্শ দেবেন ?

উ : নতুন যারা বাংলাদেশ থেকে চীনের সঙ্গে ব্যবসা করতে চান । তাদের আমি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের মাধ্যমে বলতে চাই যে, আপনারা যারা ম্যনুফ্যাকচারার তাদের সঙ্গে অথবা তাদের যারা ডিস্ট্রিবিউটর তাদের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসা করবেন । তাহলে আপনারা প্রতারিত হবেন না । মধ্যবর্তি কারো সঙ্গে ব্যবসা করতে যাবেন না ।

প্র: জনাব আজিজুর রহমান চীন আন্তর্জাতিক বেতারের পক্ষ থেকে সাক্ষাত্কার দেয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।

উ : চীন আন্তর্জাতিক বেতারের কর্তৃপক্ষকেও আমার সাক্ষাত্কার নেয়ার জন্য ধন্যবাদ ।