পেইচিংয়ের উপকন্ঠের শিচিংসান জেলায় অবস্থিত চক্ষু হাসপাতালের পাশে একটি খাশির শিস্ কাবাব রেস্তোরাঁ আছে । চীনের অন্যতম সংখ্যালঘু জাতি-সারা জাতির লোক হান শাও আন এ রেস্তোরাঁর মালিক । তিনি অতিথিদের স্বাগত জানাতে ব্যস্ত ।
মালিক অতিথিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন । তার স্ত্রী রান্না ঘরে খাবার তৈরীতে ব্যস্ত রয়েছেন । মালিক হান শাও আন বলেন ,
তিনি বন্ধুদের পরামর্শ শুনে ব্যবসার জন্য পেইচিংয়ে এসেছেন । রেস্তোরাঁটি চালু করার পর ব্যবসা ভাল হয়ে উঠছে ।
মালিকের স্ত্রী হান লি লি বলেন ,
পেইচিংয়ে তারা আয় করেছেন । এটা পরিবারের সদস্যদের জন্য উপকৃত হবে । তাদের জন্মভূমিতে কৃষি জমি কম । বাড়িতে তার দুই জন বড় ভাই , তিন জন বড় বোন ও একটি ছোট বোন আছে । সুতরাং শুধু কৃষিকর্মের ওপর নির্ভর করলে চলে না ।
সারা জাতি উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে বসবাস করে । তারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী । মালিক হান শাও আনের বাড়ি ছিংহাই প্রদেশের পূর্বাংশের স্যুন হুয়া জেলায় অবস্থিত । এটাও চীনের সারা জাতির একমাত্র স্বায়ত্তশাসিত জেলা । এখানে বসবাসকারীরা প্রধাণতঃ কৃষি কাজে নিয়োজিত থাকে । কিন্তু পরিবেশের দুর্বলতার কারণে এখানের কৃষি উন্নয়ন মন্থর ছিল । সাধারন মানুষের আয়ও বেশি বৃদ্ধি পায় নি ।
যখন মালিক হান শাও আন জন্মভূমিতে ছিলেন , তখন তিনি ছিলেন একটি কোম্পানির হিসাব রক্ষক । তার স্ত্রী হান লি লি বাড়িতে কৃষি কাজ করতেন । কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে পড়ল । হান শাও আন ও পারিবারিক জীবন যাপনের সমস্যাও রয়েছে । জীবনযাপনের চাপ মোকাবেলা করার জন্য তিনি বাইরে চাকরি বা ব্যবসা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ । তারা বিয়ে করেছেন পাঁচ বছর হল । ব্যবসা করার জন্য তারা পেইচিংয়ে এসেছেন ।
তারা ২০০৪ সালে পেইচিংয়ে এসেছেন । পেইচিংয়ের দক্ষিণ পশ্চিম উপকন্ঠের ফুংথাই অঞ্চলে এক বছর রেস্তোরাঁর ব্যবসা করেছেন । তার পর তারা ব্যবসা করার জন্য সানতুং প্রদেশে গিয়েছিলেন । কিছু দিন পর আবার পেইচিং ফিরে এসেছেন ।
তার পর হান শাও আন ও তার স্ত্রী পেইচিংয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করে এসেছেন । তারা একটি খাশির শিস্ কাবাব রেস্তোরাঁ স্থাপন করেছেন । প্রতি দিন তারা খুব ভোরে উঠেন । গভীর রাতে ঘুমান । মাঝে মাঝে ব্যস্ততার কারণে তারা নাস্তাও খেতে পারেন না ।
তারা দুপুরে নাস্তা এবং রাত ১১টায় রাতের খাবার খান । মধ্যরাতে ঘুমান । সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকেন । কিন্তু মন খুব ভাল ।
যদিও দম্পতি প্রতি দিন খুব রাত করে ঘুমান । কিন্তু তারা আনন্দের সঙ্গে কাজ করেন ।
সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় সংবাদদাতা লক্ষ্য করলেন , মালিক হান শাও আন খুব প্রফুল্ল হয়ে উঠেছেন । বোঝা যায় , ব্যবসা করার জন্য তিনি ও তার স্ত্রী যে দূরের পেইচিংয়ে এসেছেন , তাতে তিনি খুব সন্তুষ্ট হয়েছেন । স্ত্রী হান লি লি তো সব সময় স্বামীর কাজকে সমর্থন করেন । তিনি মনে করেন , স্বামী যা যা করেছেন , তা সব ঠিক । কিন্তু পরিবার পরিজনের কাছে আলাদা হওয়ার জন্য তিনি তাদেরকে নিয়েও খুব চিন্তা করেন ।
তাদের জন্মভূমিতে বাড়ির কাজে প্রায় সব কিছুই স্বামী সিদ্ধান্ত নেন । বাড়ির গৃহিনীরা শুধু বাড়ির কাজ করেন । ব্যবসা করার জন্য এবারে তারা দু'জনই পেইচিংয়ে এসেছেন । বাড়িতে একটি ৭ বছর বয়সী সন্তান আছে । খুশির ব্যাপার এই যে , এখন বাড়িতে টেলিফোন চালু হয়েছে । তিনি চার পাঁচ দিন পর পর পরিবার পরিজনের সঙ্গে ফোনে একবার কথাবার্তা বলেন । তার সন্তানও অভ্যস্ত হয়েছে ।
হান লি লি তার স্বামীর ব্যবসাকে সমর্থন করেন । মালিক হান শাও আনও পরিবার পরিজনের সুখী জীবনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন । তাদের দু'জনের পরস্পরের সহায়তায় খাশির শিস কাবাব রেস্তোরাঁর ব্যবসা আরো ভাল হয়েছে । হান লি লি সংবাদদাতাকে বলেন ,
তারা তাদের ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারিত করতে চান । রেস্তোরাঁর ব্যবসা ও সেবার বিষয় সম্প্রসারিত করার জন্য তারা জন্মভূমির বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজনকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন । হান লি লি'র ছোট ভাইয়ের স্ত্রীও এসেছেন । তিনি হান লি লিকে খাশির শিস কাবাব তৈরী এবং ঘর পরিষ্কার করতে সাহায্য করেন । এ ছাড়াও হান শাও আন ও হান লি লি'র ভাল বন্ধু মা ইউন মিনও এসেছেন । তিনি খাশির শিষ কাবাব তৈরীর কাজ করছেন ।
রেস্তোরাঁ আরো সম্প্রসারিত করার জন্য তারা আরেকটি ঘর ভাড়া করতে চান । বাড়িওয়ালা রাজী হয়েছেন । নববর্ষের আগে তাদের রেস্তোরাঁ আরো সম্প্রসারিত হবে ।
রেস্তোরাঁর কর্মী মা ইউন মিন বলেন , পেইচিংয়ে তার আরো কয়েকজন দেশের লোক ও বন্ধু আছেন । তারা সবাই ব্যবসা অথবা চাকরিতে ব্যস্ত আছেন । রেস্তোরাঁর কাজ করার জন্য কোন সাপ্তাহিক ছুটি নেই । সুতরাং দেশের লোকদের মধ্যে সাক্ষাত্ ও কথাবার্তার সুযোগ খুব কম । শুধু বসন্ত উত্সব উপলক্ষে দেশের লোকদের প্রীতি-সম্মিলনীর আয়োজন করা হয় ।
এ বছরের কোরবানী উত্সব উপলক্ষে পাইশাথাই-এ দেশের লোকদের একটি প্রীতি-সম্মিলনীর আয়োজন করা হয় । তারা একটি ছাগল জবাই করেছেন । সবাই আনন্দের সঙ্গে খাশির মাংস খেয়েছেন ।
জন্মভূমি প্রসঙ্গে তারা দু'জন অবিরামভাবে বর্ণনা করেছেন । তাদের জন্মভূমি সচ্ছল হয় নি । কিন্তু তারা তাকে খুব পছন্দ করেন । গ্রামের সব কিছু তাদের মনে আছে । সচ্ছলতা বাস্তবায়নের জন্য তারা বাইরে এসেছেন । এটাই তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ।
তাদের একটি ইচ্ছা আছে । আয় করার পর তারা তাদের বাবা মাকে মক্কায় হজ্ব করতে পাঠাবেন । তার পর তারা নিজেরাও মক্কায় হজ পালন করবেন ।
|