v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-18 16:06:57    
বিখ্যাত কাহিনীকার ওয়াং সিং তুং

cri
 

    চলচ্চিত্র সৃষ্টি করার সময় কাহিনীকারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সৃষ্টি থেকেই চলচ্চিত্রের নির্মান শুরু হয়। তাদের লেখা ভাল কী না। এটা চলচ্চিত্রের সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু চীনে কাহিনীকারের ভূমিকা দীর্ঘকাল ধরেই উপেক্ষিত হয়ে এসেছে। চীনের বিখ্যাত কাহিনীকার ওয়াং সিং তুং চীনের কাহিনীকারের মর্যাদাকে উন্নত করার জন্য অতুলনীয় অবদান রেখেছেন।

    ৫০ বছর বয়স্ক ওয়াং সিং তুং কথা বলতে পারেন খুব দ্রুত। খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি লেখার কাজ শুরু করেন। বিংশ শতাব্দীর আশি'র দশক থেকে ওয়াং সিং তুং পেইচিং ফিল্ম একাডেমি'র পান্ডুলিপি লেখার কোর্স সম্পাদন করেন। এরপর তিনি চীনের ছাং ছুন ফিল্ম স্টুডিওতে কাহিনীকার হিসেবে যোগ দেন। তখন থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ২০টি চলচ্চিত্রের কাহিনী লিখেছেন।

    সম্প্রতি তার কাহিনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র "শেং সি নিউ ইয়ু রু" চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনিমা হলে মুক্তি পেয়েছে। এই ফিল্মটি প্রয়াত হু হা হো থা শহরের পৌর সম্পাদক নিউ ইয়ু রু'র জীবন কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে। এই ছবি আন্তরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডারদের আত্মত্যাগের কথা গল্পের মত করে বলেছে। জীবনের শেষ ১০০ দিনের মধ্যে নিউ ইয়ু রু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছেন। ওয়াং সিং তুং তিন মাস ধরে হু হা হো থা শহরে নিউ ইয়ু রু'র সকল তথ্য সংগ্রহ করেন। নিউ ইয়ু রু'র স্ত্রী, বন্ধু, সহকর্মী এবং তার সঙ্গে পরিচিত সকল মানুষের কাছ থেকে ওয়াং সিং তুং চলচ্চিত্র তৈরী করার তথ্য সংগ্রহ করেন। ওয়াং সিং তুং কিছু খুঁটিনাটি বিষয় থেকে শুরু করে সামগ্রিকভাবে নিউ ইয়ু রু'র চরিত্রকে ফিল্মে রূপান্তরিত করেন। যেমন, টেক্সি ভাড়া নেয়ার সময় টেক্সি ডাইভারদের বাথরুম খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন । এই অবস্থা দেখে নিউ ইয়ু রু শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ২০০টিরও বেশি টয়েলেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তার ক্যান্সারের অবস্থা খুব গুরুতর হলেও তিনি বেকার মানুষদের সাহায্য করার চেষ্টা করে গেছেন নিঃস্বার্থভাবে। এই ছবি নিয়ে ওয়াং সিং তুং বলেন:

    "যে সব কাহিনী আমি পান্ডুলিপিতে লিখেছি তা সব নিউ ইয়ু রু'র জীবনেই ঘটেছে। আমি শুধু সেগুলো সংগ্রহ করে কিছু কিছু বেছে নিয়ে তারপর গোটা ফিল্মটি তৈরী করেছি। তথ্য সংগ্রহ করার সময় আমি খুব মনোযোগ দিয়েছিলাম। প্রতিটি ঘটনা যেন আসলের মতো ফুটে উঠতে পারে। তারপর কাহিনীটি লেখার সময় আমার লক্ষ্য অনুযায়ী ঘটনাগুলো ভালভাবে সাজিয়েছি এবং তা শিল্পের মতো ফিল্মে রূপায়নের চেষ্টা করেছি।"

    ১৯৭৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত ওয়াং সিং তুং এককভাবে বা অন্যদের সহযোগিতায় মোট ৩২টি ফিল্ম তৈরী করেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই মানুষের বাস্তব জীবন অনুযায়ী তৈরী । যেমন বিখ্যাত বিজ্ঞানী চিয়াং জু ইংয়ের জীবন নিয়ে তৈরী ছবি "চিয়াং জু ইং"। চিয়াং জু ইং হলেন বিংশ শতাব্দীর ৩০এর দশকে জন্ম নেয়া বিখ্যাত শারীরিক বিজ্ঞানী। সেই সময় চীনের বিজ্ঞানীদের গুণে কথা চিয়াং জু ইংয়ের কাছে থাকতো। তিনি কাজে খুব মনযোগী। দেশের জন্য নিজের অবদান রাখতে চান। কিন্তু খুব তরূণ বয়সে তিনি মারা যান। এই চলচ্চিত্রে জীবন্ত হয়ে উঠেছে চিয়াং জু ইং'র জীবন কাহিনী। ওয়াং সিং তুং এই ছবি'র জন্য চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে চীন সরকারের পুরষ্কার "হুয়া বিয়াও চিয়াং"এর শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরষ্কার পেয়েছেন।

    ওয়াং সিং তুংয়ের তৈরী আরেক কাহিনী "লি খাই লেই ফেং দা রি জি" খুব জনপ্রিয় হয়েছে। লেই ফেং হলেন বিংশ শতাব্দীর ৬০'র দশকে চীনা মুক্তি ফৌজের একজন সৈন্য। তিনি সব সময় আন্তরিকভাবে অন্যদের সাহায্য করেন। খুব কম বয়সে তিনি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। লেই ফিংয়ের কাহিনী প্রায় সবারই জানা। ওয়াং সিং তুংয়ের চলচ্চিত্রকে লেই ফিং'র বাস্তব জীবনের কাহিনী বলা হয়। এমন কাহিনী তৈরী করা খুব কঠিন ব্যাপার। কারণ দর্শকরা ছবি'র চরিত্র মানুষের বাস্তব জীবনের সঙ্গে তুলনা করেন। ওয়েই সিং তুং বলেন, তিনি তার লেখা কাহিনীতে মানুষের পবিত্রতার কথা প্রকাশ করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন:

    "আমার সব পান্ডুলিপি মানুষকে কেন্দ্র করে লেখা হয়। মানুষের ভালবাসা, চালচলন, ভাল-মন্দ সব দিকই রয়েছে। তাদের জীবনকে ভালভাবে গড়ে তোলার জন্য কাহিনীতে বাস্তবতা থাকতে হবে। আমার মনে হয় পান্ডুলিপি লেখার তিনটি পর্যায় আছে। তা হলো আকর্ষণীয়, মুগ্ধকর এবং সুস্থ চিন্তার খোরাক যোগায় এমন গল্প। একটি চলচ্চিত্র যদি এই তিন দিক থেকে নির্মিত হয় তাহলে তাকে বলা যায় একটি সফল ছবি।"

    কাহিনী তৈরী করার সময় তিনি কিন্তু বহু বার কাহিনীর বিষয়ের ওপর ভাবেন এবং বিজ্ঞজনের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি পান্ডুলিপি সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে এটি খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি প্রতিটি গল্পের বিন্যাস করার সময় খুব গভীরভাবে চিন্তা করেন। এবং কিছু খুঁটিনাটি জায়গায় মানুষের চরিত্রকে নিখুঁতভাবে সৃষ্টির চেষ্টা করেন। ওয়াং সিং তুং বলেন:

    "পান্ডুলিপি লেখার সময় আমি একজন লেখকের আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করি। বাস্তব জীবন সম্পর্কে প্রচুর অনুসন্ধান করি। মানুষের চরিত্র, তার বৈশিষ্ট, তার ভাষা, তার চিন্তাধারা, তার বিচরন, তার চলচলন, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং তারপর আমি পান্ডুলিপি লিখতে শুরু করি। অবশ্যই আমি নিজের আবেগ দিয়ে চরিত্রের আবেগ খোঁজার চেষ্টা করি। প্রতিটি পান্ডুলিপি কমপক্ষে এক বছর ধরে লিখি। কারণ জীবন সম্পর্কে জানার জন্য অনেক সময় লাগে। প্রথমে নিজেকে তৃপ্ত করি তারপর দর্শকদের মুগ্ধ করতে পারবো।"

    প্রতিটি পান্ডুলিপি লেখার জন্য ওয়াং সিং তুংয়ের সব সময় নিরপেক্ষ থাকতে হয়। বড় লোক হোক সাধারণ লোক হোক তিনি আন্তরিকতা দিয়ে তাদের জীবনের কথা প্রতিফলনের চেষ্টা করেন। তার পান্ডুলিপি নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরী হওয়ার পর তিনি সাধারণ দর্শকদের মতো সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখেন। দর্শকদের মনোভাব দেখে তিনি খুব সাহস পান এবং সন্তুশ্টি বোধ করেন। (ইয়াং ওয়েই মিং)