v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-14 16:28:12    
চাও ছুনলি ও সুন হুইসির কাহিনী

cri
    ১ ডিসেম্বর ২০তম বিশ্ব এইডস দিবস । গত এক বছরে এইডস প্রতিরোধে অনেক মহত প্রাণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন । তাদের মধ্যে আছে এইডসকে পরাজিত করে পুনরায় জীবনের আলো উপভোগ করা ভাইরাসবহনকারী ,আছে জিনিস কুড়িয়ে আয় করা অর্থ দিয়ে এইডসরোগীদের সাহায্য করা শিশু , আছে পুনরায় পারিবারিক সুখী জীবন উপভোগ করা এইডসের কারণে বাবা মা হারানো অনাথ শিশু।

    সিয়াওলির পরিবারের ৭জনের মধ্যে তিনজন এইডস বা এইচ আইভি ভাইরাসে আক্রান্ত । এ কারণে সে অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় । ২০০৫ সালে সিয়াওলি প্রাথমিক স্কুলের পরীক্ষা পাস করে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয় । দারিদ্রের কারণে বাবা মা তার স্কুল ফি দিতে পারেন না বলে সিয়াওলি গ্রামের অন্য লোকদের সঙ্গে শহরে মজুরের কাজ করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু রওয়ানা হওয়ার আগে একটানা বৃষ্টির কারণে সিয়াওলি যাত্রা স্থগিত করতে বাধ্য হয় । এর পর সিয়াওলির ভাগ্যে পরিবর্তন আসে ।

    চাং নান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতক ছাত্র । ২০০৪ সাল সে এইডস প্রতিরোধ কাজের স্বেচ্ছাসেবক হয়। ২০০৫ সালে আকস্মিকভাবে চাং নান সিয়াওলির পরিচয় জানতে পারে ।

    এক বৃষ্টির দিন, চাং নান কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে এইডসরোগীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ছোট ছেলেমেয়েকে চাঁদার অর্থের খেলনা বিতরণ করে । একটি বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো , ছোট মেয়েটির বড় বোন স্থানীয় নর্মাল স্কুলের পরীক্ষা পাস করেও আর্থিক কারণে সে স্কুলে পড়াশুনা করতে পারে না । ব্যাপারটা জেনে সঙ্গে সঙ্গে চাং নান স্থির করল, সিয়াওলিকে সাহায্য করবে ।

    চাংনান ও অন্যান্য স্নেহশীল ও দয়ালু লোকদের সাহায্যে সিয়াওলি স্কুলে লেখাপড়া করতে শুরু করল । চাং নান চিঠি লিখে সিয়াওলিকে উত্সাহ ও সমর্থন দিতে যাবে । বৃষ্টির পানিতে শুকনো মাটি যেমন সরস ও নরম হয়ে যায় তেমনি চিঠিগুলোতে সিয়াওলির মন প্রশান্ত হয় । বাইরের সাহায্য থেকে সিয়াওলি অনেক ভালবাসা অনুভব করল ।

    নর্মাল স্কুলে সিয়াওলি সঙ্গীত , ছবি আঁকা এবং নাচ সহ অনেক বিষয় শিখছে যা আগে সে কখনো শেখেনি । গ্রামের ছেলেমেয়েরা তার মতো এ সব বিষয় কখনো শেখেনি , কথাটা ভেবে সিয়াওলি নিজে যতোটুকু শিখেছে তা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয় । সিয়াওলি বলে , সমাজের সহানুভূতি ও দয়ালু মানুষদের সাহায্য পাওয়ার পর আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে, তাদের মতো আমিও যাদের দরকার তাদেরকে সাহায্য করব । অন্যকে সাহায্য করে আমি নিজেও আনন্দ ও উত্সাহ পেয়েছি ।

    এর পর প্রতিটি শীত বা গ্রীষ্মকালীন ছুটি অথবা উত্সবের দিন সিয়াওলি গ্রামে ফিরে সেই সব অনাথ ছেলেমেয়েকে নিজের শেখা জ্ঞান ও কৌশল শেখায় । সিয়াওলির আচরণ দেখে চাং নান খুবই আনন্দিত । চাং নান বলে , আমরা আশা করি , তারা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ চালাতে থাকবে এবং এর বিস্তৃতি ঘটাবে । সিয়াওলি স্বেচ্ছায় নিজের শেখা জ্ঞান ও ভালবাসা অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে আমি খুব খুশি । একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমি যা করেছি তার জন্য গর্বিত ।

    সিয়াওলি বলে, অন্যদের চোখে আমি হতভাগা । কিন্তু আমি মনে করি , গরিব পরিবার আমাকে যা দিয়েছে তা আমার সারা জীবনের সম্পদ, যেমন দৃঢ়তা ও স্বাধীনচেতা মনোভাব। সমাজ আমাদের সমর্থন ও প্রেরণা দিলে বিনিময়ে আমরাও সমাজকে অনেক প্রতিদান দেব ।আরও বেশি বেশি মানুষ এই দলে যোগ দিয়ে সাহায্য যাদের দরকার তাদেরকে সাহায্য করবে বলে আমরা আশা করি ।

    সুন হুইসির বয়স ১২ বছর । সে উত্তর চীনের হারবিন শহরের সিয়াওহোং মাধ্যমিক স্কুলের প্রথম শ্রেনীতে লেখাপড়া করে । জিনিস কুড়ানোর অভিজ্ঞতা তাকে এইডসের কারণে বাবামা হারানো অনাথ ছেলেমেয়েদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে ।

    ৬ বছর বয়সে এক দিন সুন হুইসি একটি পুরনো পত্রিকা দেখিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে , এই সব ছেলেমেয়ে এতো জীর্ণশীর্ণ কেন । মা জানান, তাদের বাবা মা এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন । তারা এখন অনাথ হয়ে গেছে । তাদের মধ্যে অনেকে বাধ্য হয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায় ।

    ছবিতে এসব অনাথ ছেলেমেয়ে ৬ বছর বয়সী সুন হুইসির মনে গভীরভাবে দাগ কেটে যায় । বাবামা হারানো এই সব ছেলেমেয়ের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিল সুন হুইসি । সে নিজের জমা করা ২২২ ইউয়ান এসব হতভাগা ছেলেমেয়েকে দান করার সিদ্ধান্ত নিল । ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে চাঁদা তোলা অর্থ দিয়ে এইডসের কারণে বাবামা হারানো অনাথ শিশু পল্লী হোনান প্রদেশের সাংছাই জেলায় প্রতিষ্ঠিত হল । কিছু দিন পর অনাথ শিশু পল্লীর ছেলেমেয়েরা হারবিন শহর থেকে পাঠানো ৪০০০ ইউয়নের বিশেষ চাঁদার নতুন বই পেয়েছে । অন্য চাঁদার অর্থের চেয়ে এটা নগন্য বটে । তবে এই সব ছেলেমেয়ের কাছে এই উপহারের বিশেষ তাত্পর্য আছে । উপহার দিয়েছে তাদের মতো প্রথামিক স্কুলের ছাত্র মাত্র ৬ বছর বয়সী সুন হুইসি।

    আসলে সুন হুইসির পারিবারিক অবস্থা তেমন ভাল নয় । সে যে বইগুলো দান করেছে সে সবই কুড়ানো জিনিস বিক্রির অর্থ দিয়ে কেনা । প্রতিদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার দুপাশে পড়ে থাকা জিনিসপত্র আছে কি না সুন হুইসিন তা লক্ষ্য করে । পুরানো সংবাদপত্র থেকে খালি কোকাকোলার বোতল—সবই সুন হুইসির চোখে মূল্যবান জিনিস । সপ্তাহের ছুটিতে নানা প্রদর্শনী বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জায়গা থেকে সে এই সব জিনিস কুড়াতো । প্রথম দিকে মা ছেলেকে সমর্থন করেন নি । কিন্তু অবশেষে সুন হুইসি নিজের কাজ দিয়ে মাকে মুগ্ধ করেছে । মা নিজের ভুল স্বীকার করেছেন এবং নানা দিক থেকে ছেলেকে এইডসের জন্য দুর্ভাগা অনাথ ছেলেমেয়েদের সাহায্য করার কাজে সমর্থন করেন ।

    গত বছরের বসন্ত উত্সবে সুন হুইসি মার সঙ্গে শিশু পল্লীতে গিয়ে সেখানকার অনাথ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে উত্সব কাটিয়েছে । সে তাদের জন্য জিনিস কুড়িয়ে আয় করা ১০০০ ইউয়ান দিয়ে কেনা নতুন বই উপহার দিয়েছে । সুন হুইসি বলে, আমি এসব অনাথদের কিছু উষ্ণতা , কিছু ভালবাসা দিতে চাই । আমি জানি, আমার সামর্থ্য নগন্য । কিন্তু যদি সবাই নিজের ভালবাসা দান করে তাহলে এইডসের কারণে বাবামা হারানো অনাথ ছেলেমেয়েরা আর দুর্ভাগা থাকবে না ।

    গত ৭ বছর সুন হুইসি জিনিস কুড়িয়ে আয় করা অর্থ, বসন্ত উত্সবকালে নানা নানি, বাবামা বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া টাকা পয়সা সহ মোট ২০ হাজার ইউয়ান দিয়ে ২০০০টি নতুন বই কিনেছে এবং এই বইগুলো সবই অনাথ শিশু পল্লীকে দান করেছে । সুন হুইসি পরিশ্রম দিয়ে নিজের আশাআকাঙক্ষা বাস্তবায়ন করেছে , বাবা মার কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেছে এবং বয়স্ক মানুষদের কাছে বিস্ময় বয়ে এনেছে ।