উত্তর চীনের অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে যানবাহন ব্যবস্থা অনুন্নত বলে কৃষক ও পশুপালকদের জীবনযাত্রা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতো । বর্তমানে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে ।
এতক্ষণ আপনারা যা শুনলেন , তা অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার নোয়েনজিয়া নামক একটি খুব জনপ্রিয় লোক সংগীত । এ গানে একটি মর্মস্পর্শী কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । গানে বলা হয়েছে , সুন্দরী মঙ্গোলীয় মেয়েটি নোয়েনজিয়া বিয়ে করার জন্য অনেক দূরে যাবে । পথের বিবিধ বাধা-বিঘ্নের জন্য মেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল । সে চিন্তা করল , বাইরে চলে গেলে নিজের জন্মস্থানে হয়তো আর ফিরে আসতে পারবে না । অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমিতে গত শতাব্দির শেষ নাগাদ যোগাযোগের এ ধরনের অবস্থা বিরাজ করতো । ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরবর্তী কয়েক দশকে তৃণভূমিতে বেশ কিছু পাকা মহা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে । চওড়া মহা সড়কে উত্পাদন ও জীবনযাপনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যবাহী গাড়ি অনবরত যাতায়াত করছে । এ সব গাড়ি তৃণভূমির গভীর অঞ্চলে চলে যাচ্ছে । তারা পশুপালকদের জন্য উত্পাদন ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আনন্দ বয়ে আনে ।
২০০১ সালে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার সবচেয়ে পশ্চিম প্রান্ত ও বহু দূরে অবস্থিত উটের জন্মভূমি- আরাসান অঞ্চলে আনন্দপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছিল । আরাসান জেলা সরকারের কার্যালয় থেকে ৭ শো কিলোমিটারেরও বেশি দূরে জেলা সরকারের কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি মহা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে । মরুভূমির গভীরে অবস্থিত এ অঞ্চলে প্রথমবারের মতো মহা সড়ক যানবাহন চালু হয়েছে । স্থানীয় মঙ্গোলীয়রা অত্যন্ত প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে । গ্রামবাসীরা উত্সবের পোষাক পরে উটে চড়ে নতুন পাকা মহাসড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছে । পায়ার নামে একজন গ্রামবাসী আবেগের সঙ্গে বললেন ,
মহাসড়ক নির্মান করা হয়েছে । এতে তারা অত্যন্ত খুশি । ৮০ বছরেরও বেশি বয়সী একজন বৃদ্ধ বললেন , আগে তিনি ভাবতেন , তিনি এ জীবনে নতুন মহাসড়ক দেখতে পারবেন না । এখন এ চিন্তারআর প্রয়োজন নেই । মহাসড়ক চালু হওয়ায় গ্রামবাসীরা ও তাদের বংশধররা উপকৃত হবে ।
আরাসানের পর অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার ১০১টি জেলার সবকটির সঙ্গেই মহাসড়ক চালু হয়েছে । এ পর্যন্ত অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৩ লাখ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে । অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকের তুলনায় এ সংখ্যা ৬০ গুণেরও বেশি । অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ায় মহা- সড়কের নির্মাণকাজ ও যানবাহনের ব্যাপারে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে ।
আগে তৃণভূমিতে পশু চরানোর জন্য পশুপালকদের স্থায়ী বাড়ি ছিল না । এখন যানবাহন ব্যবস্থা উন্নত হবার পর তাদের স্থায়ী বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে । তারা যে কোন সময় গাড়িতে করে দূরে যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারে । বিয়ে করার জন্য দূরের অঞ্চলে যাওয়ার ব্যাপারে মঙ্গোলীয় মেয়েদের আর চিন্তাও নেই । অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী হোহোহাট শহরের অধিবাসী ম্যাদাম উলানিরা বলেন ,
আগে মায়ের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রথমে রেলগাড়ি , তার পর বাস ও গরুর গাড়িতে চড়ে যেতে কমপক্ষে চার পাঁচ দিন লাগতো । এখন মহাসড়ক চালু হওয়ার পর গাড়িতে করে এক দিনই যথেষ্ট ।
অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ায় মহাসড়কের নির্মাণ কাজ ও যানবাহন ব্যবস্থা দ্রুত বিকাশ লাভ করায় সীমান্ত অঞ্চলের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধিসহ সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের জনগণের জীবনধারাকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । মহাসড়ক বরাবর অঞ্চলগুলোতে সাধারণ মানুষের ব্যবসা ভাল হয়েছে এবং সংখ্যালঘু জাতির জনগণ সচ্ছল হয়ে উঠেছে । লি কুও ছি একটি রেস্তোরাঁর মালিক । তিনি বলেন ,
মহাসড়ক চালু হওয়ার পর রেস্তোরাঁর অতিথিদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে ।
যানবাহন ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে অজস্র দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টিও আকৃষ্ট হয়েছে । অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার মনোরম ও বিস্তীর্ণ তৃণভূমি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে । পেইচিং থেকে আসা একজন পর্যটক চাং ছি বলেন ,
আগের চেয়ে এখন যানবাহনের ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে । এটা দূর থেকে আসা পর্যটকদের জন্য খুব সুবিধাজনক । ফলে তৃণভূমি ও তৃণভূমির পর্যটন শিল্প ব্যাপক পেইচিংবাসীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে ।
একবিংশ শতাব্দি শুরু হবার পর পশ্চিম চীনের ব্যাপক উন্নয়ন সংক্রান্ত চীন সরকারের মহা পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে দেয়ার জন্য অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকারের উদ্যোগে মহাসড়ক নির্মাণকাজের পদক্ষেপকে দ্রুততর করা হয়েছে । এ অঞ্চলের যোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তা হাও চি ইয়ে বলেন ,
অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ায় ৮ শো কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক ছাড়া ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাজপথ ও বিপুলসংখ্যক গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হয়েছে । ফলে যানবাহনের মাধ্যমে আশেপাশের ৮টি প্রদেশের সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সহজেই যুক্ত হবে ।
বর্তমানে এ লক্ষ্যমাত্রা সম্পন্ন হয়েছে । ২০০৩ সালে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ায় মহাসড়ক নির্মাণ খাতে সবচেয়ে বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে । সে বছর এ অঞ্চলে আগের চেয়ে সবচেয়ে দীর্ঘতম ও উন্নত মানের মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে । এটি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক গঠনকাজের সাফল্যের পরিচায়ক । অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার বিভিন্ন জাতির জনগণ আরো সচ্ছল হয়েছে ।
মহাসড়ক নির্মানের ফলে লক্ষণীয় সাফল্য অন্তঃর্মঙ্গোলীয় জাতির জনগণের জন্য আশা ও সুখ বয়ে এনেছে । ২০১০ সালের মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের যানবাহন ব্যবস্থার আরো আধুনিকায়ন হয়ে উঠবে এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির জনগণ আরো সচ্ছল হবে । (লিলি)
|