পেইচিং হু কুয়াং পৌর মিলনায়তন ১৮০৭ সালে নির্মিত হয়েছে। এটা হচ্ছে চীনের ছিং রাজবংশের সময় স্থাপিত হু নান ও হু পেই দু'টো প্রদেশ থেকে পেইচিং-এ আসা মানুষের মৈত্রী সমিতি। পৌর মিলনায়তনে সিয়াং সিয়ান ছি, ওয়েন ছাং কে, ছু ওয়ান থাং ও ফেং ইয়ু হুয়াই রেন কুয়ানসহ বেশ কয়েকটি বিখ্যাত স্থাপত্যকলা রয়েছে। আজকের পেইচিং অপেরা জাদুঘরও এখানেই অবস্থিত।
প্রথমে হু কুয়াং। হু কুয়াং-এর পৌর মিলনায়তনের আয়তন ৪৩ হাজার বর্গমিটার এবং তা পেইচিং-এর সবচেয়ে বড় পৌর মিলনায়তনের মধ্যে একটি। তাহলে এর নাম কেন হু কুয়াং পৌর মিলনায়তন হল? অতীতকালে পৌর মিলনায়তনের ভূমিকা কী ছিল? পেইচিং অপেরা জাদুঘরের জেনারেল ম্যানেজার হুও চিয়েন ছিং এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন—
হু কুয়াং পৌর মিলনায়তনের নামটি অতীতকালে এ প্রদেশের নাম অনুযায়ী রাখা হয়। ছিং রাজবংশের রাজকীয় পরীক্ষা ব্যবস্থা অনযায়ী, পেইচিং-এ এসে পরীক্ষা দেয়া অধিকাংশ মানুষ এখানে থাকতো। সুতরাং পেইচিং-এ তখন অনেক পৌর মিলনায়তন তৈরী হয়। তখন পেইচিং-এ প্রায় ৫শ'টি পৌর মিলনায়তন ছিল এবং এর মধ্যে অধিকাংশ পৌর মিলনায়তন দক্ষিণ পেইচিং-এর সুয়ান উ জেলায় অবস্থিত। কেন পেইচিং-এ এত বেশি পৌর মিলনায়তন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? কারণ, সে সময় গরীব পণ্ডিত ও ছাত্রদের পেইচিং-এ এসে রাজকীয় পরীক্ষা ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার সময় পৌর মিলনায়তনে তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা হতো। যদি কেউ সাফল্যের সঙ্গে বিজয়ী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে তিনি তার অর্জিত টাকা দিয়ে পেইচিং-এ একটি অথবা কয়েকটি পৌর মিলনায়তন নির্মাণ করে দিতেন।
২০ শতাব্দীর ৮০-এর দশকে, পেইচিং সরকার, সুয়ান উ জেলা সরকারের সমর্থনে হু কুয়াং পৌর মিলনায়তনের সংস্কারের কাজ শুরু করে। পেইচিং অপেরা জাদুঘরের জেনারেল ম্যানেজার হুও চিয়েন ছিং বলেছেন, যদিও বর্তমানে অতীতের অনেক কিছুই নেই, তবুও অতীতকালের অধিকাংশ স্থাপত্যই পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় থিয়েটার হিসেবে বিশ্বের প্রধান ১০টি কাঠের কাঠামো দিয়ে তৈরী থিয়েটারের মধ্যে এটি একটি।
হু কুয়াং পৌর মিলনায়তনের আয়তন হচ্ছে ৩ হাজার ৫শ' বর্গমিটার এবং অভ্যন্তরীণ আয়তন হচ্ছে ২ হাজার ৮শ' বর্গমিটার। বর্তমান পৌর মিলনায়তনে কক্ষের সংখ্যা খুব বেশি না। এখানে প্রধানত রয়েছে থিয়েটার, অপেরা জাদুঘর ও খাবার কেন্দ্র। তাছাড়া হু কুয়াং পৌর মিলনায়তনের থিয়েটার পেইচিং-এর একমাত্র উন্মুক্ত পৌর মিলনায়তন।
পৌর মিলনায়তনের প্রবেশ পথে সুর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ে, লাল দেয়াল ও সবুজ টালি তখন আলোর প্রতিফলনে দেখতে উজ্জ্বল আনন্দময় হয়ে ওঠে। মিলনায়তনের অঙ্গনের মাঝখানে একটি প্রাচীন কুয়া রয়েছে। হু কুয়াং পৌর মিলনায়তনের কর্মকর্তা ওয়াং স্যুয়ে ওয়েই বলেছেন, কুয়াটির নাম হচ্ছে চি উ কুয়া। ছিং রাজবংশের সাহিত্যিক চি সিয়াও লান তাঁর সাহিত্যকর্মে এই কুয়াটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
চি সিয়াও লান তার লেখা 'পড়া কুটির'-এ এই কুয়া সম্পর্কে কিছু কথা লিখেছেন। তার অর্থ হচ্ছে রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এবং দুপূর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কুয়ার পানি মিষ্টি থাকে। কিন্তু অন্য সময় পানি তিক্ত থাকে। এর কারণ কেউ জানে না। এই কুয়ায় এখন কোন পানি নেই।
অঙ্গনের অন্য দিকে আপনাদের চোখের সামনেই রয়েছে বড় থিয়েটার। থিয়েটারের দুটো তলা রয়েছে এবং মৌলিকভাবে আদিকালের স্থাপত্য কাঠামো ও মঞ্চ সয্যাও বজায় রয়েছে। প্রথমে হু কুয়াং পৌর মিলনায়তনে থিয়েটার হল ছিল না। শুধু একটি মঞ্চ ছিল। কারণ শীতকালে উত্তর চীনে খুব ঠাণ্ডা। বাইরে অনুষ্ঠান পরিবেশন করা খুব অসুবিধা। সুতরাং ১৮৩০ সালে পৌর মিলনায়তন পুনঃসংস্কারের সময় এই থিয়েটার হল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
|