v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-12 19:12:27    
বাংলা ভিশন টেলিভিশনের বিশেষ সংবাদদাতা রুহুল আমীন রুশদ-এ সাক্ষাত্কার

cri
প্রশ্ন: মি. রুশদ আপনি প্রথম কবে চায়না সফর করেছেন এবং কেন গিয়েছিলেন ?

উত্তর: ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। একজন সাংবাদিক হিসেবে সাংহাই নগরীতে সেই সম্মেলন কাভার করতে গিয়েছিলাম। সাংহাই খুবই আধুনিক একটি নগরী। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। সাংহাইয়ের সেই টাওয়ার থেকে শুরু করে তার নিচে চমত্কারএকটি জাদুঘর আছে, যেটা আমি দেখেছি। সাংহাইকে দেখে মনে হয়েছে এটি ফ্লাইওভারের নগরী। এত বেশি ফ্লাইওভার আমি ওখানে দেখেছি যে অবাক হয়ে গিয়েছি। আমি যখন গিয়েছিলাম তখনও সাংহাইয়ের উন্নয়নকাজ চলছিল। সাংহাইয়ের নতুন অংশ এমনভাবে সমৃদ্ধ করা হয়েছে যে এটাকে একটা আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শুধু বিশ্বব্যাংকের সম্মেলনই নয়, আমি শুনেছি যে সাংহাইতে প্রায় প্রতিদিন একটা করে সম্মেলন হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাংহাইকে সম্মেলনের ভেন্যু হিসেবে পছন্দ করে খুব নিরিবিলি এবং সবধরণের সুযোগ সুবিধার একটা জায়গা হিসেবে। চীনের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সহজে সবধরণের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় বলে সবাই পছন্দ করে। আমাদের সময় যারা ভলান্টিয়ার ছিলেন তারাও খুব সহযোগিতামূলক ছিলেন এবং ইংরেজিতে ভালো ছিলেন। আমি যতটুকু দেখেছি তাতে সব দিক থেকেই সাংহাইকে খুব ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন: আপনি কি সম্মেলনে অংশ নেওয়া ছাড়া কোনো চমত্কার জায়গা ঘুরে দেখেছেন ?

উত্তর: সম্মেলন কাভার করতেই এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে আশপাশের একটি দুটি জায়গা ছাড়া কোথাও ঘুরতে পারিনি। যেমন বিশ্ববিখ্যাত টাওয়ারটি দেখেছি, তার নিচের জাদুঘরটাও দেখেছি। প্রাচীনকালে সাংহাইয়ে চীনা ঐতিহ্য কি ছিল তার সবই সংরক্ষণ করা আছে সেখানে। দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি , আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন: পরে আপনি কোন প্রোগ্রামে গিয়েছিলেন চায়নাতে।

উত্তর: আমি এ যাবত মোট তিনবার চীন সফরে গিয়েছি। প্রথমবার গিয়েছিলাম সাংহাইতে। এরপরে আমি সেনঝেনেপরিবেশ সাংবাদিকদের কংগ্রেসে গিয়েছিলাম। পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের প্রতিনিধি হিসেবে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেনঝেন দেখেও আমি মুগ্ধ। আমি শুনেছি সেনঝেন নাকি এক সময় জেলেপল্লী ছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে একটি জেলেপল্লীকে একটি আধুনিক নগরীতে পরিণত করা সত্যিই বিস্ময়কর। এর চারপাশের দৃশ্য দেখেও আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।

প্রশ্ন: সর্বশেষ কোথায় গিয়েছিলেন ?

উত্তর: সর্বশেষ ২০০৫ সালে আমি গিয়েছিলাম বেইজিং নগরীতে। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সফরে গিয়েছিলেন, আমি চ্যানেল আই-এর পক্ষ থেকে কাভার করতে গিয়েছিলাম এবং চীন সরকারের সহযোগিতায় আমরা খুব ভালোভাবেই সে সফর কাভার করি। পাশাপাশি আমরা একটু ঘুরে দেখারও সুযোগপেয়েছিলাম।

প্রশ্ন: কয় দিন ছিলেন আপনি বেইজিং ?

উত্তর: বেইজিংয়ে আমি ছিলাম ৪ দিন। এরমধ্যে ৩ দিন ব্যয় হয়েছে সফর কাভার করতে। তবে কাভারেজের সময় আমরা গ্রেট হলে গিয়েছি, সেখানে সাক্ষাত অনুষ্ঠান হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেকগুলো জায়গায় আমাদের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন, আমরা সে জায়গাগুলোতেও গিয়েছি। আমি মুগ্ধ হয়েছি গ্রেট হল , তিয়েন আন মেন স্কোয়ার দেখে। আমার কাছে মনে হয়েছে চীনারা সবসময় বড় কিছু করতে চায়। গ্রেট হল আর তিয়েন আন মেন স্কোয়ার এত বড় এত প্রশস্ত যে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি।

প্রশ্ন: আপনি প্রতিবারই গিয়েছেন আমন্ত্রিত হয়ে। চীনের আতিথেয়তা আপনার কেমন লেগেছে ?

উত্তর: আমি চীনা আতিথেয়তায় মুগ্ধ। তারা কোঅপারেটিভ যে আমি আশা করিনি। তারা খুবই আন্তরিক ছিলেন। আমার দুর্বলতা ছিল আমি চীনাদের মত কাঠি দিয়ে খাবার খেতে পারিনি , আমাকে কাটা চামচ ব্যবহার করতে হয়েছে। এটুকুই শুধু আমার ব্যর্থতা ছিল ।

প্রশ্ন: পৃথিবীর একমাত্র স্থাপনা যেটা চাদ থেকে দেখা যায় সেই গ্রেট ওয়ালে গিয়েছেন কিনা ?

উত্তর: হ্যাঁ, আমি খুব ভোর বেলা গ্রেট ওয়াল দেখতে গিয়েছিলাম এবং দুপুরের পর পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। আমার খুবই ভালো লেগেছে । আমি যেদিন গিয়েছি সেই দিনও প্রচুর লোক গ্রেট ওয়াল দেখতে গিয়েছিল। এত ভীড় যে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। এরকম একটা ওয়াল সেই কবে তৈরি করা হয়েছে এখনো আছে ভাবলে অবাক লাগে। যারা এটা তৈরি করেছিল তাদের দেশ রক্ষার ভাবনাও অবাক করার মত।

প্রশ্ন: আপনি নিশ্চয় দেখেছেন পাহাড়ের ওপর দিয়ে গ্রেট ওয়ালটা গেছে এবং এটা কিন্তু করা হয়েছে ম্যানুয়ালি। তখন পাথর নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ বিষয়টা আপনার কেমন লেগেছে ?

উত্তর: আমি আসলে চীনা সবকিছুরই একজন মুগ্ধ দর্শক হয়ে গিয়েছি। আর গ্রেট ওয়াল দেখে বিস্মিত হয়েছি ৬৭০০ কিমি দীর্ঘ ওয়াল কিভাবে মানুষ শুধু গায়ে খেটে তৈরি করতে পারে। যে কারণে তারা এটা তৈরি করেছিল সেটা অনেকটাই সফল হয়েছিল , বিশেষ করে মঙ্গলদের আক্রমণ তারা ঠেকাতে পেরেছিল।

প্রশ্ন: আপনি নিশ্চয় একমত হবেন যে চীন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে দুদেশের মধ্যে চমত্কার কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে । এই সম্পর্ক আরো উন্নত করতে কি করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন।

উত্তর: আমি একমত যে চীন বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের বন্ধু। বাংলাদেশের জন্য তারা অনেক করেছে । বাংলাদেশে তাদের তৈরি কয়েকটি মৈত্রী সেতু রয়েছে। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রও তাদেরই করা। বর্তমানে বিদায়ী চীনা রাষ্ট্রদূত চাই শি, তার সাথে কথা বলে দেখেছি, তিনি অত্যন্ত ভালো বাংলা বলেন। এর মানে বাংলাদেশের প্রতি বাংলা ভাষার প্রতি চীনাদের দারুণ আগ্রহ আছে। তাছাড়া আমি অনেক চীনা নাগরিকের সাথে মিশে দেখেছি , যাদের অনেকেই বাংলাদেশে আছেন , তাদের ব্যবহার আমার খুব ভালো লেগেছে। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো উন্নত করা দরকার এবং দ্বিপাক্ষিকভাবেই হওয়া উচিত। চীন আমাদেরকে অনেক ধরণের ছাড় দেয়,আমরা অনেক অনুদান দেয় , ফলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: আপনি যেহেতু গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব তাই আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। চীন আন্তর্জাতিক বেতার কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো রিপোর্ট প্রচার করে না । অর্থাত তারা বলতে চাইছে যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না । এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন ?

উত্তর: চীন সরকার কোন দৃষ্টিতে দেখে সেটা আপনি বলেছেন , কিন্তু আমি মনে করি যে এখন তথ্য প্রবাহের যুগ। কাজেই বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবে যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের মত চীন বেতার যদি প্রচার করে আমার মনে হয় শ্রোতারা আরো ভালোভাবে নেবে। এটা চীনা কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে দেখতে পারেন। তারা যদি বাংলাদেশের জনগণের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখেই যতটা সম্ভব খবর প্রচার করে শ্রোতারা তাতে খুশিই হবে। আমি ছোটবেলা থেকেই চীন বেতারের বাংলা বিভাগের শ্রোতা। টেলিভিশনে কাজ করার কারণে এখন ঠিক সেভাবে শুনতে পারি না। আগে যখন শুনতাম তখন চিঠিও লিখতাম, চীন বেতার আমাকে অনেক কার্ড , ভিউকার্ড, স্টিকার পাঠিয়েছে। ছাত্রজীবনে এগুলে খুব ভালো লাগত।

_রুহুল আমীন রুশদ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

_আপনাকেও ধন্যবাদ, চীন বেতার কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ, যারা শুনছেন সেইসব শ্রোতাদেরকেও ধন্যবাদ।