v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-12 18:41:07    
চীন -মার্কিন ছাত্র বিনিময় প্রকল্প ---দু'দেশের মৈত্রীর সেঁতু

cri
    বহু দিন আগে থেকেই চীনা ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে লেখাপড়া। অন্য দিকে চীনা ভাষা শেখার প্রতি বিদেশিদের আরো বেশি আগ্রহ বেড়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ছাত্রছাত্রীই চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে এখন বেশ উত্সাহী। যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছর আগে থেকে চালু হওয়া চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্রছাত্রীদের বিনিময় পরিকল্পনা পর্যায় ক্রমে মাকির্ন ছাত্রছাত্রীদের চীনকে উপলব্ধি ও জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের এই সম্পর্কে কিছু বলছি আমি ----

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন-চীন ছাত্র বিনিময় প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রের কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আরো জনপ্রিয় হয়েছে । আমাদের এ কার্যালয় এখন এর জন্য অনেক ব্যস্ত । যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্রছাত্রী বিনিময় প্রকল্প কার্যালয়ের পরিচালক ক্যারোলিন হেনডারসন সংবাদদাতাকে একথা বলেন । ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের সরকারী স্কুল ও পেইচিংয়ের চিং সান স্কুল ছাত্র বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ।এ চুক্তি অনুযায়ী চার জন মার্কিন ছাত্র চীনে এসেছে । তারা হল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ছাত্রছাত্রী বিনিময় প্রকল্পে অংশ নেয়া এবং চীনে আসা প্রথম কিস্তির ছাত্র ছাত্রী। তখন যুক্তরাষ্ট্রে শুধু নিউটন সরকারী স্কুলের ছাত্রছাত্রী বিনিময় পরিকল্পনা ছিল । তবে এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুল এ প্রকল্পে অংশ নিয়েছে । প্রতি বছর চীনে আসা মার্কিন ছাত্রের সংখ্যা কয়েক শোরও বেশি এবং এ সংখ্যা আরো বাড়ছে ।

    এ প্রেক্ষাপটে চীন-মার্কিন স্কুল বিনিময় প্রকল্প চালু হয়েছে । ৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে চীন-মার্কিন ছাত্র বিনিময় পরিকল্পনা সমন্বয় সংস্থা গঠিত হয় । এ সংস্থার সদর দপ্তর এ পরিকল্পনার উদ্যোক্তা—মাসাচুসেটস রাজ্যে স্থাপিত হয় । চীন-মার্কিন স্কুল বিনিময়ের মাধ্যমে দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক উপলব্ধি ও মৈত্রী বাড়ানোর নীতিতে চীন-মার্কিন স্কুল বিনিময় প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুলের স্বাগত পেয়েছে এবং প্রকল্পটি দ্রুতভাবে উন্নত হয়েছে । এ সংস্থা সেমিনার ও আলোচনাসভার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরকে চীন-মার্কিন ছাত্রছাত্রী বিনিময় পরিকল্পনায় অংশ নেয়ায় আগ্রহ সৃষ্টি করে । তা ছাড়া এ সংস্থা দু'দেশের কলেজের ছাত্রছাত্রীদের চুক্তি স্বাক্ষর এবং ছাত্রছাত্রী বিনিময় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে । হেনডারসন এখন প্রতি বছর কমপক্ষে দু'বার চীনে এসে পরিদর্শন করেন । তিনি মনে করেন , যুক্তরাষ্ট্রে চীন-মার্কিন ছাত্র বিনিময় প্রকল্পের জনপ্রিয় হওয়া বিশ্বের জন্য চীন-মার্কিন সম্পর্কের গুরুত্বকে প্রকাশ করেছে । তিনি বলেন , তাদের ধারণা হচ্ছে , যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জনগণের উপলব্ধি ও মৈত্রী জোরদার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । দু'দেশের আরো বেশি ছাত্রের পারস্পরিক উপলব্ধি বাড়ানো ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত পুঁজি বিনিয়োগ ।

    যুক্তরাষ্ট্রের মাসাচুসেটস নিউটন সরকারী স্কুলের চীন-মার্কিন ছাত্রছাত্রী বিনিময় প্রকল্পের পরিচালক ডোরার জন্য চীনে থাকার অভিজ্ঞতা কখনই ভুলে যাবে না । ২০০৬ সালের বসন্তকালে তার ও ৯ জন মার্কিন কলেজ ছাত্রছাত্রীর পেইচিংয়ে থাকার অভিজ্ঞতা খুব স্মরণীয় । তিনি বলেন , চীনে থাকার চার মাস খুব তাড়াতাড়ি কেটে গেছে । যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি ও তার ছাত্র সত্যিই চীনকে ত্যাগ করতে চান না । পেইচিংয়ের সুবিখ্যাত চিং সান স্কুল হল নিউটন সরকারী স্কুলের সহযোগিতাকারী স্কুল । বিনিময় হিসেবে এ ৯ জন মার্কিন ছাত্রছাত্রী চীনাদের বাসায় থাকতো এবং চীনা ছাত্রের সঙ্গে লেখাপড়া করতো । এভাবে তারা চীনা সংস্কৃতি ও চীনাদের জীবন সম্পর্কে সরাসরিভাবে উপভোগ করতে পেরেছে ।

    ডোরা সংবাদদাতাকে বলেন , পেইচিংয়ে তিনি ও তার ছাত্রছাত্রীদের জীবন খুব আরামদায়ক এবং আনন্দময় হয়েছে। তাঁরা সবসময় চীনাদের অতিথিপরায়ন ও বন্ধুত্বকে উপভোগ করতে পেরেছে। বিশেষ করে এশিয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য যেন নিজের বাসায় ফিরে যাওয়ার মত ।

    চীনে এসব মার্কিন ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন সকালে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী চিং সা স্কুলের যে কোনো এক ক্লাসরুমে ক্লাস শুনতে পারে । বিকালে ডোরা এসব মার্কিন ছাত্রছাত্রীদেরকে চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শেখান । মাঝে মাঝে চীনা শিক্ষক তাদেরকে চীনা ভাষা শেখান ।

    চীনে থাকার সময় শুধু পেইচিংয়ের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট ডোরা ও তার ছাত্রছাত্রীদের মনে গভীর ছাড়া ফেলেছে । তারা মনে করেন , পেইচিংয়ে থাকা খুব নিরাপদ । তিনি বলেন , পেইচিংয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে নিরাপদ জনক।

    চীন-মার্কিন ছাত্রছাত্রী বিনিময় প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এখন ২০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে । এ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য সুফল অর্জিত হয়েছে । এ প্রকল্পে অংশ নেয়া কিছু মার্কিন ছাত্রছাত্রীদের জন্য চীনে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা তাদের জীবনকে পরিবর্তন করেছে । তারা চীন স্পর্কিত কাজ করেন এবং চীন সম্কর্পিত বিশেষজ্ঞ হয়েছেন । ১৯৮৬ সালে প্রথম কিস্তি বিনিময় ছাত্র হিসেবে চীনে আসার বেন লিবারম্যান তাদের মধ্যে অন্যতম । তিনি বলেন , তখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পারস্পরিক উপলব্ধি খুব কম । চীনে আসার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হল ভিন্ন সংস্কৃতিকে জানার আগ্রহ । তবে চীনে আসার পর পরই তিনি চীনাদের উষ্ণহৃদয় ও অতিথিপরায়ন তাকে অনুভব করেছেন এবং এ দেশকে পছন্দ করেছেন । তিনি বলেন , যদিও তখনকার চীনাদের জীবনযাপনের মান এখনকার চেয়ে ততটা ভালো নয় , তবে চীনারা তাকে খুব যত্ন নেয় ।

    চীনে লেখাপড়ার সময় লিবারম্যান পেইচিং চিং সান স্কুলের সাবেক প্রধান হো হুং সেনের বাসায় থাকতেন। হোন হুং সেনের পরিবার লিবারম্যানকে অনেক যত্ন নিয়েছে । লিবারমান খুব তাড়াতাড়ি চীনা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করেছেন । তিনি বলেন , তার চীনা ভাষা পেইচিংয়ের হু থুংয়ে শিখেছেন । তার চীনা বন্ধু তাকে একটি চীনা নামও দিয়েছেন , এখন তিনি এ নামও ব্যবহার করছেন ।

    লেখাপড়া শেষে লিবারম্যান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়েছেন । যদিও চীন ত্যাগ করেছেন তবে তিনি আরো পরিশ্রম করে চীনা ভাষা ও চীনা সংস্কৃতি শেখেন । চীনা ভাষা ভুলে না যাওয়ার জন্য গ্রীষ্মকালের ছুটিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চীনা রেঁস্তরায় কাজ করেন , এভাবে তিনি চীনা ভাষা চর্চা করতে পারেন ।

    কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি ইয়েলু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগে লেখাপড়া করেন । পরে হাভার্ড আইন ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে চীনের আইন গবেষণা করেন । তিনি পেইচিংয়ে একজন আইনবিদ হিসেবে এক বছর কাজ করেছেন । এখন প্রতি বছর তিনি চীনে কয়েক বার আসেন । প্রত্যেক বারই তিনি চিং সান স্কুলের সাবেক প্রধান হো হুং সেনের বাসায় যান । তিনি বলেন , প্রত্যেক বার পেইচিংয়ে আসেন যেন বাসায় ফিরে এসেছেন । লিবারম্যান হো হুং সেনকে চাচা ডাকেন । প্রত্যেক বার পেইচিংয়ে আসার আগে তাঁর চীনা চাচা ফোনে তাকে বার বার বলেন : বাসায় ফিরে আসো , বাসায় ফিরে আসো ।

    প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা , এতক্ষণ আপনারা চীন-মার্কিন ছাত্র বিনিময় প্রকল্প ম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন শুনলেন । আশা করি এ বিষয়টি আপনাদের ভালো লেগেছে ।