এ বছর হল চীন ও জাপানের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার৩৫তম বার্ষিকী এবং চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ১৫তম বার্ষিকী । কিছু দিন আগে পূর্ব- চীনের নান থুন শহরে অনুষ্ঠিত নবম এশিয় শিল্পকলা উত্সব চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা বিনিমযের সম্মিলনীতে পরিণত হয়েছে ।
প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র কুছিনের রয়েছে দু হাজার বছরের ইতিহাস । চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তিনটি প্রতিবেশী দেশ । তিনটি দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাসও সুদীর্ঘকালের । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতাও দ্রুত বাড়ছে । চলচ্চিত্র তৈরী , শিল্পকলা , চীনা বক্সি-উসু ও খাবার তৈরী ক্ষেত্রে তিনটি দেশের সহযোগিতা দ্রুত বাড়ছে । জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চীনের সরকারী বিভাগগুলোর সাংস্কৃতিক বিনিময় বেশি ছিল । এখন তিনটি দেশের বাণিজ্য সংস্থা ও বেসরকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে বিনিময় অনেক বেড়েছে ।
এ শিল্পী দলের পরিচালক কিম জুন হি বলেছেন , দশ বছর আগে থেকেই চীন ও জাপানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা শুরু হয় । তিনি আশা করেন পরবর্তীকালে সহযোগিতা আরো বাড়বে । তিনি বলেছেন , চীন ও জাপানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ও অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল । আমি এ ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অংশ নিয়েছিলাম । সেই সময় নাট্যানুষ্ঠান পরিচালনা আমার দায়িত্ব ছিল । আমার মনে হয় , পরবর্তীকালে চীন ও জাপানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান আরো বাড়ানো উচিত । তিনটি দেশের শিল্পীরা এক সঙ্গে নাটক বা নৃত্যসংগীত পরিবেশন করতে পারেন।
ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক কারণে তিনটি দেশের সংস্কৃতির মধ্যে অনেক মিল আছে। গত বিশ বছরে তিনটি দেশের মধ্যে নৃত্য ও সংগীত ছাড়া চলচ্চিত্র ক্ষেত্রের আদান-প্রদানও বেড়েছে । গত শতাব্দীর আশির দশকে জাপানের সিরিজ নাটক ' আকাই গিওয়াকু ' চীনের দশর্কদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল । এ সিরিজ নাটকের জন্য চীনা দশর্কদের জাপানের টিভি নাটক দেখার আগ্রহ অনেক বেড়েছে । গত কয়েক বছর ধরে চীনের দশর্করা দক্ষিণ কোরিয়ার টি ভি নাটক খুব পছন্দ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাচীন টি ভি নাটক ' তায়ে চাং গেউম ' চীনে সম্প্রচারের সময় দশর্ক সংখ্যায় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল । চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীন ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত চলচ্চিত্র ' পেইচিং ওয়ো তে আই ' এবং ' ইয়ে সাংহাই ' শুধু চীনের কেন্দ্রীয় টি ভি কেন্দ্রে সম্প্রচার করা হয়েছে তাই নয় । ছবি দুটি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সাংস্কৃতিক বাজারেও প্রবেশ করেছে । চীনের সাংহাই শহরের সংস্কৃতি ও বেতার গোষ্ঠী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এ ধরনের সহযোগিতা করেছে। এ গোষ্ঠীর চলচ্চিত্র পরিচালক ধেন চুন চিয়ে বলেছেন , প্রথমে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান চীনের সিরিজ নাটক কেনে । নিজ দেশের বাজার উন্মুক্ত করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান চীনের সঙ্গে যৌথভাবে সিরিজ নাটক ও চলচ্চিত্র তৈরীর প্রস্তাব দেয় । আমি মনে করি , সাংস্কৃতিক বিনিময় এভাবেই প্রসারিত হবে । এ ক্ষেত্রে যার উদ্যোগ বেশি , লাভও তার বেশি হবে । পরিচালক ধেন চুন চিয়ে একাধিকবার চীনের শিল্পীদল নিয়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছেন। তিনি বলেছেন , চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ও শিল্পকলা এ দুটি দেশের জনগণ দেখতে পছন্দ করেন ।
চীন সরকার তিনটি দেশের মধ্যে বেসরকারী সহযোগিতাকে সমর্থন করে এবং সরকারী বিনিময়ের মাধ্যমে এ ধরনের সহযোগিতাকে বাড়াতে সাহায্য প্রদান করে । নবম এশিয় শিল্পকলা উত্সবের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী হল চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রীদের ফোরাম আয়োজন । তিনটি দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীরা মতবিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে মতৈক্যে পৌছান । চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রী সুন চিয়া চেন বলেছেন , চীন , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রীরা ফোরামে তিনটি দেশের মধ্যে সরকারী ও বেসরকারী বিনিময় বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন । তিনটি দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় তিনটির দেশের সরকারী সম্পর্ক উন্নয়নে মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে । সুন চিয়া চেন মনে করে , আমরা জনগণের পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেই । পরবর্তীকালে সাংস্কৃতিক ও ভাবাবেগের বিনিময়ের ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত । এ ধরনের বিনিময় তিনটি দেশের জনগণের বংশোপরমপরায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার অটুট ভিত্তি ।
তিনটি দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীরা ফোরামে নবম এশিয় শিল্পকলা উত্সবে' নানথুন ঘোষণা' স্বাক্ষর করেন । জাপানের সংস্কৃতি মন্ত্রী আওকি তামোতসু বলেছেন , দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর জন্য জাপান প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেবে ।
|