v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-11 16:44:08    
চীনের সুই জাতি

cri
    দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশে চীনের অন্যতম সংখ্যালঘু জাতি-সুই জাতি বসবাস করে । এ জাতির নিজেদের লিখিত ভাষাও আছে । আজ এ অনুষ্ঠানে সুই জাতি সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি….

    এতক্ষণ আপনারা যা শুনলেন , তা সুই জাতির আতিথিদের মদ খেতে দেয়ার সংগীত । সুই জাতি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও অতিথিপরায়ন । অতিথিরা আসলে তাদেরকে গ্রামের প্রবেশ দ্বারেই মদ খেতে দিতে হয় । গ্রামবাসীরা এ পদ্ধতিতে তাদের অতিথিপরায়নতা ব্যক্ত করেন । কুইচৌ প্রদেশের সানতু সুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলা চীনের একমাত্র সুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলা । সুদীর্ঘকালের ইতিহাস , অনন্য সংস্কৃতি ও মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের কারণে সুই জাতির গ্রামগুলো কুইচৌ প্রদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় এলাকায় পরিণত হয়েছে । ২০০৬ সালে সুই জাতির সংস্কৃতির প্রতীক- সুই জাতির বিভিন্ন গ্রাম কুই চৌ প্রদেশের নতুন গ্রামাঞ্চল গড়ে তোলার কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । স্থানীয় সরকার যথাসাধ্য পরিবেশ রক্ষাকারী পর্যটন শিল্প উন্নয়নের চেষ্টা করছে । স্থানীয় কর্মকর্তা হু স্যু লি বলেন , বর্তমানে বিভিন্ন সুই জাতির গ্রামে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে ।

    ২০০৫ সালে তাদের জেলার বিভিন্ন সুই জাতির গ্রামে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের কর্মসূচী শুরু হয় । সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার বিপুল পরিবর্তন হয়েছে । তাদের উত্পাদন , সচ্ছলতা, আচার- ব্যবহার , প্রশাসন ও গ্রামের পরিবেশ সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে । সাধারণ মানুষের বাড়িঘরের বিষয়ে আরো বেশি লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে । গ্রামবাসীদের বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুত্ সরবরাহ খাতে স্থানীয় সরকার বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ করেছে । গত বছর সুই জাতির বিভিন্ন গ্রামে মাথাপিছু আয় ১৮৮৩ ইউয়ান এবং খাদ্যের পরিমাণ ৩৭৬ কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে । পর্যটন শিল্প উন্নয়নের কর্মসূচি চালু হবার পর অনেক বেশি পর্যটক বিভিন্ন গ্রাম ঘুরতে এসেছেন । ফলে গ্রামবাসীদের উপার্জনও বিপুলমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে ।

    তিনি বলেন , গত দু'বছরে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের কর্মসূচী চালু হবার পর গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । তাদের পাকা বাড়িঘর নির্মান করা হয়েছে , পাহাড়ে সুন্দর কৃষি জমি , মিষ্টি গানের সুর ও বিস্ময়কর সূচীকর্ম পর্যটকদের সামনে প্রদর্শিত হচ্ছে । সুই জাতির গ্রামের সৌন্দর্যময় পরিবেশ ব্যাপক পর্যটকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে । পর্যটকদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে বাইরের একটি বৈচিত্র্যময় পৃথিবীও যেন কাছে চলে এসেছে । আরো বেশি গ্রামবাসী এখন বুঝতে পেরেছেন , বাইরের পর্যটকদের কাছে তাদের ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে । সুতরাং পর্যটন শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের জাতীয় নৃত্য ও সংগীত আরো বিকশিত হয়েছে ।

    পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সুই জাতির নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির উত্তরাধিকার ও উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করা হয়েছে । সুই জাতির বহু অভিভাবক নাচ গান পরিবেশনের নৈপুণ্য তাদের সন্তানদের শিখিয়েছেন । বিদ্যালয়েও সূচীকর্মসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের ওপর প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হচ্ছে । চাকরি জন্য যারা শহরে গেছে , তারাও গ্রামে ফিরে এসেছে । পর্যটকদের কৌতূহল সৃষ্টির জন্য তারা লুসেন নামে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজান । আগে এ ধরনের বাদ্যযন্ত্র শুধু বসন্ত উত্সবে বাজানো হতো । সুই জাতির গ্রামের প্রধান উ হোং মিন বলেন , জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী আচার ব্যবহার বিশিষ্ট পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে গ্রামবাসীদের সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রা আরো বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে । পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন গ্রামবাসীদের জন্য অজস্র আনন্দ বয়ে এনেছে ।

    পর্যটকদের স্বাগত জানাবার জন্য গ্রামের ৫০ জনেরও বেশি সদস্যের একটি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে । পর্যটকদের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচবার নাচ গান পরিবেশন করা হয় ।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুই গ্রামে সুই জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে । চীনের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারের পরিচালনায় কুইচৌ প্রদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে যার যার বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পকে জোরদার করা হয়েছে । কুইচৌ প্রদেশের পার্টি-কমিটির ডেপুটি সম্পাদক ওয়াং ফু ইয়্যু বলেন , স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্প বিকশিত করার মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে । এ ছাড়াও বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকেও উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ ও রক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ।

    পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কুইচৌ প্রদেশের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সংখ্যালঘু জাতির আচার ব্যবহার কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করা হয়েছে । ২০০৬ সালে কুইচৌ ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়েছে । কৃষকরা পর্যটন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে । গত তিন বছরে কুইচৌ প্রদেশের পর্যটন শিল্পের আয় ৫০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে ।

    কুই চৌ প্রদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সুই গ্রামের গ্রামবাসীরা সচ্ছল হয়েছে । বাড়িতে বাড়িতে নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়েছে । গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান ব্যাপক উন্নত হয়েছে । এ বছরের প্রথম দশ মাসে সুই গ্রাম ভ্রমণে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সংখ্যা ১ লাখেরও বেশি হয়েছে । পর্যটন থেকে আয় ২০ লাখ ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । গ্রামবাসী মেন জে খুং বলেন ,

    আগে শহরে চাকরি করার জন্য গ্রামবাসীদের মাথাপিছু মাসিক আয় ছিল এক হাজার ইউয়ান । পর্যটন শিল্প উন্নয়নের কর্মসূচী চালু হবার পর গ্রামবাসীরা এখন আর শহরে চাকরি করতে যায় না । এখন গ্রামবাসীদের মাথাপিছু মাসিক আয় দ্বিগুণ বেড়েছে । গ্রামে বেশ কিছু ধরনের হস্তশিল্পজাত দ্রব্যও তৈরী করা হচ্ছে ।

    পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের দ্বারা যেমন সুই জাতির অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে , তেমনি এ জাতির মূল্যবান ঐতিহ্য ও আচার ব্যবহারও রক্ষা করা হয়েছে ।