বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ বছরের ইতিহাস রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। বেশি ছাত্রছাত্রীদের এই বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার কারণ যেমন সুষ্ঠু শিক্ষাদান করছে তেমনি চীনের ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এশিয়ার প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছে।
নথ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনা ভাষা জনপ্রিয় করা সংক্রান্ত চীনের রাষ্ট্রীয় নেতৃস্থানীয় কার্যালয়ের নির্দেশে ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে চীনা ভাষা ও চীনের সংস্কৃতি শিক্ষাদান বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্যে গড়ে তোলা একটি ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশে চীনের দূতাবাস, চীনা ভাষা জনপ্রিয় করা সংক্রান্ত জাতীয় কার্যালয়, ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। ইনস্টিটিউট প্রথম শিক্ষামেয়াদে ৬০জন ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করেছে।
এই ইনস্টিটিউটের উপাচার্য ইলিয়াস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ চীনকে খুবই ভালোবাসেন এবং চীনা জনগণের প্রতি গভীর বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব পোষণ করেন। তারা চীনের সংস্কৃতি জানতে চান। তারা চীনে গিয়ে এই মহান দেশটাকে দেখতে চান। সুতরাং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মানুষের জন্য চীনের সংস্কৃতি জানার এক সেতু হিসেবে গড়ে উঠেছে।
তিনি আরো বলেছেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অসংখ্য টেলিফোন আসতে থাকে। তিন শোরও বেশি লোক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে চীনা ভাষা শিখতে চায়। তবে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে এখন শুধু একজন চীনা ভাষা শিক্ষক রয়েছেন। সুতরাং সকল শিক্ষার্থীদের চাহিদা আপাতত মেটাতে সম্ভব নয়।
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চীনা ভাষার প্রথম শিক্ষক অধ্যাপক চাং কাও সিয়াং ইয়ুন নান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন। ইলিয়াস চাং-এর কথা বলার সময় প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেছেন, অধ্যাপক চাং খুব চমত্কার শিক্ষক। তাঁর শিক্ষাদানের উপায় খুব ভালো এবং ছাত্রছাত্রীদের স্বীকৃতি পেয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে খুব পছন্দ করে। ক্লাসের বাইরেও তিনি ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করেন। সবসময় ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁর সাহায্যে বেশি ছাত্রছাত্রীর চীনা ভাষার মান উন্নত হচ্ছে। অধ্যাপক চাং একজন দুর্লভ প্রতিভা।
অধ্যাপক চাং কাও সিয়াং বলেছেন, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পর চার মাসের মধ্যে ভালো ফলাফল অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের বেশির ভাগ অবসর সময় চীনা ভাষা শিখছেন। তবে তাঁদের মধ্যে অনেকে খুব খেটে পড়াশুনা করছেন। তাঁদের চীনা ভাষায় দ্রুত উন্নতি হয়েছে। চীন সরকার এ বছর এই কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের ছয়জন শ্রেষ্ঠ ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশীপ দেয়ার কথা ঘোষণা করার পর ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা শেখার আগ্রহ আরো উন্নত হয়েছে। এসব ছাত্রছাত্রীদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন চীনের সঙ্গে ব্যবসা করছেন বা ব্যবসা করতে চান। অধ্যাপক চাং প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে চীনা নাম দিয়েছেন। শা হু একজন শ্রেষ্ঠ ছাত্র। এ বছর তিনি চীন সরকারের স্কলারশীপ পেয়েছেন।
২৪ বছর বয়সী শা হু খুব বুদ্ধিমান। প্রতিদিন তিনি বহু সময় দিয়ে চীনা ভাষা শিখেন। এছাড়াও তিনি চীনা ভাষার ওয়াবসাইটে চীনা খবর দেখেন। শা হু চীনা ভাষা বলা পছন্দ করেন। তিনি সংবাদদাতার সঙ্গে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় চীনা ভাষা বলেন।
ক্লাসে সবচেয়ে বয়স্ক ছাত্র হচ্ছেন ৬১ বছর বয়সী রাহমান । তিনি বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কবি। তিনি কয়েকটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, চীনের সংস্কৃতিকে তিনি ভালোবাসেন বলে তিনি চীনা ভাষা শেখছেন । তিনি চীনা ভাষায় কবিতা লিখতে চান।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউ। জানা গেছে, বিশ্বে এক শোরও বেশি দেশের ২৩০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা কোর্স চালু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের চীনা ভাষা শেখার চাহিদা মেটানোর জন্য চীনা ভাষা জনপ্রিয় করা সংক্রান্ত জাতীয় কার্যালয় ২০০৪ সাল থেকে চীনা ভাষা কোর্স চালুর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সংস্থার সঙ্গে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তুলছে। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে বিশ্বের প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।(লিলু)
|