দীর্ঘকাল ধরে চীনের কিছু কিছু গ্রামাঞ্চলে ঔষুধ কেনা হচ্ছে একটি কষ্টকর ব্যাপার। পশ্চাত্পদ অর্থনীতি, প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং জনগণের আলাদা আলাদা ও বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করা হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে ঔষুধ দোকান না থাকার প্রধান কারণ। কিছু কিছু গ্রামাঞ্চলে ঔষুধের দোকান আছে। কিন্তু সেখানে ঔষুধ সরবরাহের চ্যানেল বিশৃঙ্খল এবং ঔষুধের গুণগত মান সুনিশ্চিত নয়।
কৃষকদের ঔষুধ কেনার ক্ষেত্রে আরো সুবিধা ও নিরাপদ অবস্থা গড়ে তোলার জন্য ২০০৩ সালে চীন সরকার গ্রামাঞ্চলে ঔষুধ সরবরাহ এবং তত্ত্বাবধানসহ দুটি ব্যবস্থা যথাযথভাবে চালু করার উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যেই চার বছর পার হয়েছে। কৃষকদের ঔষুধ কেনার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে কি? সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন।
নান মা ফাং গ্রাম চীনের পূর্বাঞ্চলের শানতোং প্রদেশের চিবুও শহরের প্রান্তদেশে অবস্থিত। সারা গ্রামের লোকসংখ্যা হচ্ছে এক হাজারেও বেশি। আগে গ্রামে একটিও ঔষুধের দোকান ছিল না। গ্রামবাসীরা জেলা বা কাছাকাছি উন্নত গ্রামে গিয়ে ঔষুধ কিনতে বাধ্য হতো। ২০০৪ সালে সিয়ে হোংচিন নামে একজন গ্রামবাসী গ্রামে একমাত্র ঔষুধের দোকান খোলেন। তিনি বলেন,
সরকারের নীতি অনুযায়ী কর না দেয়ার শর্তে আমি এই ঔষুধের দোকান চালু করেছি। এই ঘর আমাদের গ্রামের। তাই ভাড়া খুব সস্তা। এক মাসের ভাড়া এক'শ রেনমিনপি'র কম।
সিয়ে হোংচিন-এর কাছে "সরকারের নীতি" হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে মাঝারি ও ছোট গ্রাম ও মহকুমায় ছোট ঔষুধের দোকান স্থাপনের উদ্দেশ্যে জনগণকে উত্সাহ দেয়ার জন্য নানা ধরণের শুল্ক মওকুফ করে দেয়া।
প্রতি বছর সিয়ে হোংচিন-এর ঔষুধ দোকান থেকে মুনাফা হিসেবে প্রায় পাঁচ বা ছ'হাজার ইউয়ান রেনমিনপি। দোকানের কাজ ব্যস্ত না থাকলে তিনি গৃহকর্মও করতে পারেন। নিজের ব্যবসায় তিনি সন্তুষ্ট এবং তাঁর প্রতিবেশী লি চুইনফোংও সন্তুষ্ট। কারণ লি চুইনফোং'র স্বামী বহুমুত্র রোগে আক্রান্ত। সারা বছর ঔষুধ কিনতে হয়। এখন তার প্রতিবেশী একটি ঔষুধের দোকান চালু করেছেন। এতে তাঁর অনেক সুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন,
আগে আমি কাছাকাছি সিকুয়ান গ্রামে গিয়ে ঔষুধ কিনতাম। দোকানটি এখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। আমি সাইকেল চালিয়ে ঔষুধ কিনতাম। এখন আমি সিয়ে হোংচিনের দোকান থেকে ঔষুধ কিনতে পারি।
চিবুও শহরের খাবার ও ঔষুধ তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর মহা-পরিচালক ওয়াং মৌছাং জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত সারা শহরে কম লোকসংখ্যাসম্পন্ন এ ধরণের মাঝারি ও ছোট-খাটো গ্রামে প্রায় ২২০০টি ঔষুধের দোকান স্থাপিত হয়েছে। ঔষুধ কোম্পানিগুলো এসব দোকানের জন্য সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে বলে ঔষুধের দামও কিছুটা কমেছে।
সংবাদদাতা চিবুও শহরে সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় জানতে পেরেছেন যে, কৃষকদের জন্য আরো বেশী ঔষুধের দোকান স্থাপনের পাশাপাশি সরকার ঔষুধের গুণগত মানের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনাও জোরদার করেছে। আগে মাত্র জেলা পর্যায়ে ঔষুধ তত্ত্বাবধান দপ্তর ছিল। বর্তমানে মহকুমায়ও খাবার ও ঔষুধ তত্ত্বাবধান দপ্তর স্থাপিত হয়েছে। বিশেষ তত্ত্বাবধানকারীরা ঔষুধের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করেন। তা ছাড়াও, ঔষুধের তত্ত্বাবধানে সহায়তার জন্যে গ্রাম পর্যায়েও প্রায় ৩০০০ জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। যারা নকল বা বাতিল ঔষুধগুলোর তথ্য যোগান। তাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়। ফলে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চিবুও শহরের ফোংহুয়াং মহকুমার খাবার ও ঔষুধ তত্ত্বাবধান দপ্তরের পরিচালক বিয়ান লিকুও বলেন,
অযোগ্য ঔষুধ ব্যবসায়ীরা এখন পালিয়েছে। আমাদের অঞ্চলে তাদের আসার সাহস নেই। কারণ এখন আমাদের তত্ত্বাবধান খুব কঠোর।
পশ্চিম চীনের কুয়াংসি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে স্থানীয় গ্রামাঞ্চলের ঔষুধ সরবরাহ এবং তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা গঠনেও সাফল্য এসেছে। শানতোং প্রদেশ থেকে এখানকার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। ভৌগোলিক অবস্থা একটু জটিল বলে কুয়াংসি অঞ্চল ঔষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন। স্থানীয় সরকার ঔষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা গঠনে গ্রামব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উত্সাহ দিয়ে আসছে।
কুইলিন শহরের লিপু জেলার হুয়াংচু নামের একটি ছোট্ট ও প্রত্যন্ত গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব অসুবিধাজনক। সেখানে ঔষুধ সরবরাহ সুনিশ্চিত করার জন্যে স্থানীয় সরকারের সমন্বয়ে একটি কোম্পানি সারা জেলার ১৪০টিরও বেশী ঔষুধ সরবরাহ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই কোম্পানি ঔষুধ বিন্যাসের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। কোম্পানির ম্যানেজার কুও দেলিয়াং বলেন,
আমারা বড় বা ছোট গ্রামে সমানভাবে ঔষুধ সরবরাহ করি। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ঔষুধ সরবরাহ কেন্দ্রের মধ্যে কারো কারো ব্যবসা ভাল, কারো কারো ভালো নয়। কিন্তু সাধারণভাবে বলতে গেলে, এতে কোম্পানি এবং সরকার উভয়ের উপকার ও কল্যাণ বয়ে এনেছে।
জাতীয় খাবার ও ঔষুধ তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর মুখপাত্র ইয়ান চিয়াংইং বলেছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঔষুধ সরবরাহ উন্নয়ন ও সুসংবদ্ধ করার জন্য চীনের অনেক জায়গার স্থানীয় সরকার নীতিমালা জারি করে গ্রাম ও মহকুমায় ঔষুধ সরবরাহ কেন্দ্র নির্মাণে উত্সাহ দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গার মহকুমার ক্লিনিক বা ঔষুধ দোকানের মধ্যে অধিকাংশই ঔষুধের বিন্যাস বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে গ্রামাঞ্চলের ঔষুধের উত্সের চ্যানেল আরো স্পষ্ট এবং ঔষুধের গুণগত মানও আরো নির্ভোরযোগ্য হয়েছে। তিনি আরো বলেন,
কয়েক বছরের প্রচেষ্টার মাধ্যমে সারা দেশের ৬ লাখেরও বেশী প্রশাসনিক গ্রামের ৮৫ শতাংশ গ্রামে ঔষুধ তত্ত্বাবধান ও সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কৃষকদের ঔষুধ কেনার নিরাপত্তা কার্যকরভাবে সুনিশ্চিত করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১০ সাল পর্যন্ত ঔষুধের সরবারহ ব্যবস্থা সকল প্রশাসনিক গ্রামে চালু হবে এবং ঔষুধ তত্ত্বাবধান ব্যবস্থাও আরো জোরদার করা হবে। (লিলি)
|