v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-05 20:25:41    
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউয়ান ইউ ফুর কাহিনী

cri
    ইউয়ান ইউ ফু এখন চীনের হোনান প্রদেশের চুং ইউয়ান শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন । যখন তার সাক্ষাত্কার নেয়ার জন্যে আমরা তার কাছে গেলাম , তখন শরত্কালে ফসল তোলার মৌসুম চলছিল । ইউয়ান ইউ ফু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির দিনে ৪ শতাধিক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দূরবর্তী বাড়িতে ফিরলেন , তার বাবাকে ভূট্টা তোলার কাজে সাহায্য করতে ।

    ভোরবেলায় আমরা দেখতে পেলাম , ইউয়ান ইউ ফু একটি রেডিও সেট সংগে নিয়ে খেতে অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে ভূট্টা তুলছে । তিনি লম্বা নন এবং চশমা পরেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    আমার বাড়িতে ফেরার সুযোগ বেশি হয় না । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে এবং ব্যস্ত কৃষি মৌসুমে আমি বাড়িতে ফিরে আসি । মাঠে দাঁড়িয়ে বাতাস ও রোদের মধ্যে কাজ করা সত্যিই আরামদায়ক । মাঝেমধ্যে আমি একটি  রেডিও সেট সংগে নিয়ে কাজ করার সময় অনুষ্ঠান উপভোগ করি । এটি আমার জন্যে আনন্দের ব্যাপার ।

    চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে ১ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ৭দিনের ছুটি দিয়েছে । ইউয়ান ইউ ফুর অনেক সহপাঠী দলবেধে ভ্রমণে গেছেন । তবে তিনি ভাবলেন , তার বাবার বয়স এখন ষাটের ওপর । তার একার পক্ষে খেতের ভূট্টা তোলা কঠিন । তাই ইউয়ান ইউ ফু দ্রুত বাড়িতে ফিরার জন্যে উদগ্রীব হয়ে উঠলেন । ভাবলেন , তিনি বেশি কাজ করতে পারলে , তার বাবার কাজ কিছুটা লাঘব করা যাবে ।

    ইউয়ান ইউ ফুর বয়স যখন ৮ বছর , তখন তার মা মারা যান । তখন থেকে তার বাবা একাই বাড়ির গুরুভার কাঁধে নেন । তাদের থাকার কাঁচা ঘরের আয়তন দশ বারো বর্গমিটার মাত্র । তাদের বাড়ির আসবাবপত্র বলতে সেকেলে হয়ে যাওয়া একটি লম্বা টেবিল । আমাদের সংবাদদাতা ইউয়ান ইউ ফুর বাড়িতে ঢুকে দেখতে পেলেন , দেয়ালে টাংগানো রয়েছে কয়েকটি নতুন কাচের ফ্রেইম । এতে তার পরিবারের একটি গ্রুপ ফটো এবং তার ও তার ছোট বোনের পাওয়া পুরস্কার ।

    ইউয়ান ইউ ফুর বাবা বলেন , ছোটবেলায় তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না বলে তিনি প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর আর মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে পারেন নি । সুতরাং তিনি তার অপূর্ণ আকাংক্ষাকে পূর্ণ করতে নিজের ছেলেমেয়েদের দিয়ে । তিনি বলেন ,

    সেসময় আমিও স্কুলে যেতে চাইতাম । আমিও আরো বেশি শিখতে চাইতাম । পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আমি প্রাথমিক স্কুলে পড়তাম । এখন যুগের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে । এক বছরের মধ্যেও সমাজের লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হয় । সব জায়গায় শিক্ষা , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দরকার । এমন কি আমাদের চাষাবাদের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রয়োগ করা প্রয়োজন ।

    ইউয়ান ইউ ফুর বাবা তরুণ বয়সে লেখাপড়ার বেশি সুযোগ পান নি বলে ছেলেমেয়েদের ওপর তার সম্পূর্ণ ভরসা । ২০০৩ সালে তার এ আশা পূরণ হয়েছে । তার ছেলে ইউয়ান ইউ ফু হোনান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে । অথচ তিনি শিক্ষার ফি দিতে না পারায় সেখানে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন ।

    তখন চীনে প্রতিবছর ইউয়ান ইউ ফুর মত দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পড়ার সুযোগ হারিয়ে ফেলেন । চীন সরকার তাদের অবস্থার ওপর নিবিড় দৃষ্টি রেখেছে । বস্তুত ২০০০ সাল থেকেই চীন সরকার সারা দেশে জাতীয় শিক্ষা সহায়তা ঋণ দেয়ার নীতি চালু করে । তবে এ নীতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় কিছু না কিছু সমস্যা দেখা দেয় । গত কয়েক বছরে চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সহায়তা ঋণ দেয়ার নীতি বাস্তবায়নের জন্যে নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে ।

    ২০০৫ সালে ইউয়ান ইউ ফু আবার হোনান চুং ইউয়ান শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । এ সম্পর্কিত একটি চিঠি পাওয়ার সংগে সংগে তিনি একটি " জাতীয় শিক্ষা সহায়তা ঋণ নেয়া সংক্রান্ত" দিকনির্দেশনাও পান । এ দিকনির্দেশনায় জানানো হয় যে , যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয় , তারা কিভাবে জাতীয় শিক্ষা সহায়তা ঋণ নিতে পারবেন । ইউয়ান ইউ ফু বলেন ,

    এবারও আমার বাবা প্রথমদিকে একটু চিন্তিত ছিলেন । সেই বছরও আমি অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম । তখনো আমার পড়ার সুযোগ ছিল ।

    বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রথমদিনে ইউয়ান ইউ ফু জাতীয় শিক্ষা সহায়তা ঋণ নেয়ার জন্যে একটি আবেদন-ফরম পূরণ করে দাখিল করেন । এক মাস পর থেকে তিনি ঋণ বাবদ প্রতিবছরের জন্যে ৫ হাজার ইউয়ান পাওয়া শুরু করেন । এ অর্থের ভেতরে তিনি ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষা ফি দেন এবং বাকী অর্থ তিনি দৈনন্দিন জীবনযাপনে ব্যয় করেন । এতে ইউয়ান ইউ ফুর বাবা একান্তই নিশ্চিন্ত হন । তিনি বলেন ,

    আমি সত্যিই সরকারের এ নীতিতে মুগ্ধ । আমার পরিবারের অবস্থা ভালো নয় । শিক্ষা ফি দেয়ার সামর্থ্য নেই । সরকার আমার ছেলেকে সুদহীন ঋণ দিয়েছে । এ নীতি তো বেশ কল্যাণকর । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর এ ঋণ শোধ করা যাবে ।

    ইউয়ান ইউ ফু প্রতিবছর এ শিক্ষা সহায়তা ঋণ নিতে পারেন । তাকে আর শিক্ষা ফির জন্যে মাথাব্যাথা করতে হয় না । তিনি তার সমস্ত মনোযোগকে লেখাপড়ার ওপর নিবদ্ধ করেন । প্রথম শিক্ষা বর্ষশেষে তিনি নিজের কৃতিত্বের জন্যে প্রাদেশিক বৃত্তি পান । বাড়ির বোঝা লাঘবের জন্যে ইউয়ান ইউ ফু অবসর সময় সবসময় কিছু কাজও করেন । তার শিক্ষক ইয়াং ছাও ফাং বলেন ,

    জাতীয় শিক্ষা সহায়তা ঋণের সাহায্যে ইউ ফু শিক্ষা ফি দিতে সক্ষম হয়েছেন । অবসর সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবার হলে থালা-বাসন ধোওয়ার কাজ করেন । এর সুবাদে তিনি বিনা পয়সায় খাবার হলে খেতে পারেন । গত বছর তিনি আবার প্রাদেশিক বৃত্তি পেয়েছেন । এভাবে তিনি মোটামুটি নিজের সাধারণ খরচ মেটাতে পারছেন ।

    ইউয়ান ইউ ফু একজন সচেতন ছেলে । প্রতিবার বাড়িতে ফিরে তিনি সবসময় তার বাবাকে খেতের কাজ করতে মানা করেন । তিনি যতদূর সম্ভব নিজেই বাড়ি ও খেতের সমস্ত কাজ সেরে ফেলেন , যাতে তার বাবা বিশ্রামের জন্যে বেশি সময় পান । তিনি তার বাবার জন্যে একটি রেডিও সেটও কিনে দিয়েছেন । কেন না , তার বাবা স্থানীয় অপেরা পছন্দ করেন । ইউয়ান ইউ ফু বলেন ,

    এটি কোনো উপহার বলা যায় না । আমি আমার দৈনন্দিন খরচ বাঁচিয়ে বাবার জন্যে এ রেডিও সেট কিনেছি । বাবা কোনো কথা না বললেও তিনি আসলে খুব আনন্দিত হয়েছেন ।