.jpg)
দক্ষিণ চীনের চিয়াং শি প্রদেশের চিং কাং শান হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। চিং কাং শান বিপ্লবী ঘাঁটির প্রতিষ্ঠা চীনের বিপ্লবের বিজয়ের জন্য মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল। চিং কাং শান বিপ্লবী ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৭তম জাতীয় কংগ্রেস থেকে অভিনন্দন জানানো হয়। সম্প্রতি চিং শি প্রদেশের টেলিভিশন কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি তথ্য মাধ্যম মিলে এ উপলক্ষে চিং কাং শানে "চীনের লাল সংগীতানুষ্ঠানের" আয়োজন করে। ইতিহাস, বর্তমান, ক্ল্যাসিক, ফ্যাশন, উত্সাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাস মিলে চীনের টেলিভিশন দর্শকদের জন্য চমত্কার একটি সংগীতানুষ্ঠান ছিল এটি। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের জন্য "চীনের লাল সংগীতানুষ্ঠান" এর বিশেষ বিশেষ অংশগুলো শোনাবো।
আপনারা শুনছেন শিল্পী দার্জির গাওয়া "সহযোদ্ধার স্মৃতি" গানটি। এটি সিনচিয়াংয়ে গত শতাব্দীর ৬০'র দশকের একটি লোকসংগীত। গানের কথায় নিজের সহযোদ্ধার আবেগময় স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। তিব্বতী গায়ক দার্জির দরদী গায়কও সুরে বেজেছে সেই আবেগ। দর্শক ও বিশেষজ্ঞদের অকুণ্ঠ সমাদর পেয়েছে এ গানটি। গানের কথা এমন, "থিয়েন শান পাহাড়ের নিচে আমার সুন্দর বাড়ি। সে বাড়ি ছেড়ে যেতে ভেঙে গেছে মন। সাদা পপলার গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আমার প্রাণের মেয়ে। তার সঙ্গে বিদায় বলতে দু'জনের মনে ঝরেছে অঝোরে বৃষ্টি ।"
"লাল সংগীত" মানে ক্ল্যাসিক বিপ্লবী গান। এ গানগুলোর মধ্যে রয়েছে গত শতাব্দীতে লাল ফৌজের গান, জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধের গান, মুক্তি যুদ্ধের গান আর নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর প্রচলিত সুস্থ ধারা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার গান। পেশাজীবী শিল্পী ছাড়াও চীনের লাল সংগীতানুষ্ঠানে ব্যাপক সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছেন। নিবিষ্ট মনে তাঁদের লাল গান শোনা ও গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে দেশকে ভালোবাসার অনুভুতি।
লাল সংগীতানুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বিশেষভাবে বিপ্লবী ঘাঁটি চিং কাং শানকে এই অনুষ্ঠানের জায়গা হিসেবে বাছাই করে। মধুর সুরে শিল্পীদের গান শুনতে ছুটে এসেছিলেন হাজার হাজার দর্শক ও পর্যটক। দর্শকদের একজন বলেছেন, "লাল সংগীত হচ্ছে এক ধরনের মানসিক পুষ্টি। তারা লাল গান গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে তীব্র ঢেউ ওঠে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাল সংগীতের কথার মতো আরো শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ আমাদের দেশ।"
.jpg)
এখন আপনারা উত্তর-পূর্ব চীনের একটি পপ সংগীত "ভাবির প্রশংসা" গানটি শুনছেন। এই গান গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে প্রথম গীত হয়। গানে বিংশ শতাব্দীর ৩০'র দশকে চীনের জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় চীনা নারীদের নিঃস্বার্থ ও দুঃসাহসিক শত্রু প্রতিরোধের কথা তুলে ধরা হয়েছে। শিল্পী লিউ ইয়াং-এর প্রকৃতি-প্রদত্ত কণ্ঠে উত্তর-পূর্ব চীনের গভীর ভাব ফুটে উঠেছে। গানের কথা এমন, "ভাবি, তোমার ছোট হাত দিয়ে আগে শত্রুদের লাশ কবর দাও। তারপর তোমার বড় পা দিয়ে আমাদের বিদায় জানাও। ভাবি, তোমার শরীর দিয়ে সূর্যালোক রুখে দাও, যাতে আমরা যুদ্ধে বিজয়ী হই।"
লাল সংগীতানুষ্ঠানের প্রতি আন্তরিক টানে কেবল বয়স্করাই নয়, ছুটে এসেছিলেন বহু তরুণ তরুণী। পেইচিং বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ছাত্রী লিউ শাও রোং লাল সংগীতানুষ্ঠানে আসার কারণ সম্পর্কে বলেন, "লাল সংগীতানুষ্ঠান একটি অসাধারণ অনুষ্ঠান। লাল সংগীত এমনই গান যে গাওয়ার সময় চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।"
বন্ধুরা, এখন আপনারা লিউ শাও রোং এর গাওয়া "ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি" গানটি শুনছেন। এ গানে চীনের ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির ঢেউ খেলানো বিস্তার বর্ণনা করা হয়েছে। গানের কথা এমন, "কে প্রাচীনকালের কথা ডেকে আনে? কে হাজার বছরের প্রত্যাশায় আছে? আমি দেখি পাহাড় পর পাহাড়? আমার ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি।"
লাল সংগীতানুষ্ঠানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বর্তমান গণ নিরাপত্তা মন্ত্রী, চিয়াং শি প্রদেশের সাবেক গভর্ণর মেং চিয়ান চুন বলেন, "লাল সংগীত হচ্ছে মানুষের সামনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিক শক্তি। লাল সংগীতের সুরের ভেতর দিয়ে বিপ্লবের রোমান্টিকতা, সুখ-শান্তি, বীরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ইতিহাস নিষ্ঠতার কথা ফুটে ওঠে। লাল সংগীত গায়ক ও দর্শকদেরকে মুগ্ধ করেছে।"
অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন চীনের লাল সংগীতানুষ্ঠানের প্রধান গান "সবচে লাল গান গাওয়া উচিত"। গানের কথা এমন, "পাহাড়ে উঠতে চাইলে সবচেয়ে উঁচুটায় উঠতে হবে। নদী পার হতে চাইলে সবচেয়ে বড়টা পার হতে হবে। গান গাইতে গাইতে ছোট বনের মুখ লাল হয়ে যায়। গান গাইতে গাইতে আমাদের জীবন সমৃদ্ধ হয়ে যায়। গান গাইতে গাইতে লাল চীন আরো উজ্জ্বল হয়ে যায়।" (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|