বোমেই হলেন ক্যামেরুনের একজন ছাত্র। তিনি চীনে ৯ বছর ধরে লেখাপড়া করেছেন। তিনি এখন ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডাক্টরেট করছেন। আমাদের সংবাদদাতা ইয়াং ওয়েই মিং তাঁর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। তিনি তাঁর চীনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের অনেক তথ্য জানিয়েছেন। আশা করি, তাঁর কথার মাধ্যমে আপনারা চীন সম্পর্কে এবং চীনে পড়াশোনাকরা বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবেন। এখন শুনুন অনুষ্ঠানটি।
তাঁর নাম সেকেদি বোমেই কোবেনজো। চীনে আসার পর তিনি নিজের চীনা নাম রেখেছেন। তা হলো বোমেই। নয় বছর ধরে চীনে পড়াশোনা করেছেন বলে, তিনি খুব ভাল চীনা ভাষা পড়তে পারেন। তিনি চীনে পড়াশোনার অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করে বলেছেন:
"১৯৯৮ সালে আমি চীনে এসেছি। প্রথমে পেইচিং ল্যাংগুরেজ এন্ড কালচার ইউনির্ভাসিটিতে চীনা ভাষা শিখেছি। তারপর পেইচিং চিয়াও থুং ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছি। তখন তার নাম উত্তর যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমার বিষয় ছিল ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জনিয়ারিং এন্ড ওটোমেশন প্রোগ্রাম। পড়াশোনা শেষে আবার ছিংহুয়া ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছি। এখন এখানে ডক্টারট করছি।"
ছিংহুয়া ইউনিভার্সিটি কেমন তা নিয়ে বোমেই বলেছেন:
"ছিংহুয়া হলো আমার সবচেয়ে প্রিয় ইউনিভার্সিটি। অনেক দিক থেকেই সেটি খুব ভাল। আমি এখানে পড়াশোনার আবেদন করার পর থেকে কোনো দিন কোনো বিষয়ে এতটুকু অসন্তুষ্ট হয়নি। আমার শিক্ষক অধ্যাপক ইয়াং হোয়াই জুং হলেন চমত্কার একজন মানুষ। তিনি হলেন আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভাল মানুষদের একজন। বিদেশী ছাত্রছাত্রী কার্যালয়ও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার কোনো সমস্যা হলেই তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার সমাধান করেছে। ছিংহুয়ার লাইব্রেরি এবং ল্যাবরোটারি খুব ভাল। খেলার স্টেডিয়ামও চমত্কার। তাই ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমার খুব পছন্দের।"
আগে তিনি নিজের দেশে কিছু ছবি দেখে আর সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে চীন সম্পর্কে কিছুটা জগতে পারেন। কিন্তু আসার পর দেখেছেন, চীন তার কল্পনার চেয়ে অনেক আলাদা।
"চীনে আসার পর দেখেছি আমার আগের কল্পনার অনেক কিছুই মেলে না। আগের চীন সম্পর্কে ছবি দেখে মনে হয়েছে চীনা মানুষরা সবাই কুংফু জানে। কিন্তু আসার পর দেখেছি তা নয়। অনেকেই মনে করে চীন আগের মতই আছে। কিন্তু আসলে চীনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।"
পেইচিংয়ে প্রায় নয় বছর ছিলেন তিনি। এই শহর নিয়ে তাঁর অনুভূতি অনেক। তিনি বলেছেন:
"পেইচিংয়ে অনেক বিখ্যাত ও সুন্দর দর্শনীয় স্থান আছে। তা আমি খুব পছন্দ করি। এখানে চীনের সংস্কৃতি খুব সমৃদ্ধ। আমি চীনের অ্যাক্রোবেটিকস দেখতে খুব পছন্দ করি। একে বিস্ময়কর ও মহান আর্ট হিসেবে আমি মনে করি। পেইচিং আমাকে অনেক উত্সাহ দিয়েছে। আমি ১৯৯৮ সালে পেইচিংয়ে এসেছি। তখনকার একটি সাধারণ শহর থেকে বর্তমানে উন্নত ও আধুনিক পেইচিং একটি শহরে পরিণত হয়েছে। পেইচিং দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। যেমন উ তাও খো যেখানে আমি থাকি, কেন্দ্র থেকে উত্তর দিকে অনেক দূরে। জায়গাটি আগে অপরিছন্ন ছিল। কিন্তু এখন অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। তাতে আমি অন্য ধরনের উত্সাহ পেয়েছি। চেষ্টা করলে যে কোনো পর্যায় থেকে নতুন আরেক পর্যায়ে উন্নীত হওয়া যায়।"
বোমেই চীনে আসার পর চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেন। চীনা ভাষা শেখার কিছু অভিজ্ঞতাও তিনি ভাগাভাগি করতে চান।
"প্রথমে খুব কঠিন ছিল। আগে আমি ইংরেজী, ফরাসী ভাষা শিখেছি, জার্মানও একটু একটু বলতে পারি। এসব ভাষায় বর্নমালা আছে। কিন্তু চীনা ভাষার প্রতিটি শব্দ ভিন্ন। বর্ন সাজিয়ে শব্দ তৈরী করা সম্ভব নয়। আলাদা আলাদাভাবে প্রতিটি শব্দ শিখতে হবে। তাই প্রথমে আমার মাথা প্রায় খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের পর আমি কিছু নিয়ম ধরতে পেরেছি। তখন থেকে আর এত কঠিন মনে হয়নি। এবং আমি মনে করি চীনা ভাষা লেখা সবচেয়ে কঠিন। শোনা ও বলা আমার জন্য একটু সহজ।"
চীনে আসার পর কিছু চীনা মানুষের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হওয়অ উচিত। বোমেইর বন্ধুত্ব তৈরী করার নিজস্ব পদ্ধতি আছে। তিনি বলেছেন:
"আমি বাসকেটবল খেলি। বাসকেটবল খেলার সময় অনেকের সঙ্গে পরিচিত হই। আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু হলো এজকন চীনা, তার বাড়ি শানতুং প্রদেশ। আমি মাঠে গিয়ে যদি কাউকে বাসকেটবল খেলতে গেখি তাহলে আমি তাদের জিজ্ঞেস করি: আমি কি তোমাদের সঙ্গে খেলতে পারি? তারা বলবে, ঠিক আছে, আসো। খেলার পর তারা কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে তুমি কোন দেশ থেকে এসেছো? তোমার নাম কী? বাসকেটবল খেলার মাধ্যমে আমি অনেক চীনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি।"
বোমেই বেড়াতে খুব পছন্দ করেন। চীনে আসার পর তিনি খুব খুশি হয়েছেন, কারণ চীনে এতো সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে, অনেক কিছু আবিষ্কার করা যায়। তিনি হংকং, কুয়াং চৌ, সু চৌ, হাং চৌ, উ হান, শাংহাই, শেন চেন, ইননার মঙ্গলিয়া, শেন ইয়াং ইত্যাদি অনেক জায়গায় ঘুরেছেন। বেশি জায়গায় ঘোরা তার চীনা ভাষা চর্চা এবং চীনা সংস্কৃতি জানার জন্য অনেক সহায়ক হয়েছে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে বোমেই বলেছেন:
"যদি আমি নিজেকে দুটি অংশে ভাগ করতে পারি তাহলে ভাল হবে। আমার এক অংশ পেইচিংয়ে থাকবে আরেক অংশ ক্যামেরুনে ফিরে যাবে। কারণ আমি পেইচিংয়ে এতো বেশি সময় ধরে থেকেছি যে পেইচিং যেন আমার দ্বিতীয় মাতৃভূমির মতো হয়ে গেছে।"
যারা চীনা পড়াশোনা করতে আসাবে তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দেয়ার কথা বলার পর কিছু ক্ষণ চিন্তা করে বোমেই বলেন:
"ছিংহুয়ায় স্নাতক ডিগ্রীর ছাত্রছাত্রীদের চাপ একটু বেশি। কারণ ছিংহুয়ার উচু মানের বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ছিংহুয়ায় পড়াশোনা করতে চাইলে তাদেরকে কঠোর পরিশ্রমের প্রস্তুতি নিতে হবে। চাপের নিতে পারলে তারা অনেক কিছু শিখতে পারবে। গবেষণার ক্ষেত্রে ছিংহুয়া খুব সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। আসলে যদি আগে জানতাম যে ছিং হুয়া এতো ভাল তাহলে প্রথম দিকে আমি ছিংহুয়ায় পড়ার জন্য আবেদন করতাম। কিন্তু ক্যামেরুনে ছিংহুয়ার নাম দেখে বুঝতে পারিনি যে এটা একটি সাইনটিফিক বিষয়ের বা আর্ট বিষয়ের ইউনিভার্সিটি। আসার পর জেনেছি ছিংহুয়ার বিজ্ঞান বিষয় খুব ভাল।"
বোমেই বলেছেন, তিনি আশা করেন পেইচিং শহর ভবিষ্যতে আরো সুন্দর হবে এবং বিদেশীদের জন্য আরো সুবিধা বাড়বে। আমরাও আশা করি চীনের অভিজ্ঞতা বোমেই'র জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এবং তার ভবিষ্যত আরো সুন্দর হবে।
(ইয়াং ওয়েই মিং)
|