২৯ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেছেন। এর পর পরই তিনি ঘোষণা করেছেন, ১৬ ডিসেম্বর জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা হবে। পাশাপাশি সংবিধানের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে।
২৯ নভেম্বর সকালে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মুশাররফ প্রেসিডেন্ট পদে তার পাঁচ বছরের নতুন কার্য-মেয়াদ শুরু করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি আবদুল হামিদ দোগার শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মুশাররফ বলেছেন, পাকিস্তান রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে । বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুশাররফের নির্বাচিত হওয়া পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য একটি মাইলফলক । তিনি বিশ্বাস করেন, পরবর্তী পাকিস্তান আরো শক্তিশালী হবে।
এদিন সন্ধ্যায় মুশাররফ জাতীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসদমন, দেশের পরিস্থিতির স্থিতিশীল উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এই কার্যক্রমে আইন, বিচার ও পার্লামেন্টের অনুমোদন রয়েছে। মুশাররফ ১৬ ডিসেম্বর জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার এবং সংবিধান পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধান কাজ হচ্ছে পার্লামেন্ট নির্বাচন। তিনি সকল পার্টির প্রতি পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ৮ জানুয়ারী অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচন করে তিনি তার কথা পুরোপুরি রক্ষা করবেন।
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুশাররফকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফকে পুনরায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে ২৯ নভেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও একটি অভিনন্দনবাণী পাঠিয়েছেন । শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুশাররফ পাকিস্তানে চীনের রাষ্ট্রদূত লুও চাও হুইকে বলেছেন, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হচ্ছে পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতির একটি কৌশলগত ভিত্তি। তিনি বলেছেন, তিনি তার নতুন কার্য-মেয়াদে পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্কের ওপর আরো গুরুত্ব দেবেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করবেন। তিনি পাকিস্তান-চীন সম্পর্কের সুদৃঢ় ভবিষ্যত্ সম্ভাবনার ওপর পূর্ণ আস্থাবান।
বিশ্লেষকগণ বলেছেন, মুশাররফ শপথগ্রহণের পর জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বয়ংসম্পূর্ণ করা ছাড়াও, দেশ ও বিদেশের রাজনৈতিক চাপও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। জরুরী অবস্থা জারি করার পর কমনওয়েলথ পাকিস্তানের সদস্য পদ স্থগিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলোও সাহায্য দেবে কিনা নতুন করে চিন্তাভাবনা করার কথা প্রকাশ করেছে। ২৮ নভেম্বর মুশাররফ সেনা প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এর পাশাপাশি তিনি মুশাররফকে জরুরী অবস্থা যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। পাকিস্তানের সব বিরোধী দল ও আইনজীবিরা বারবার বিক্ষোভ মিছিল করে জরুরী অবস্থা জারির প্রতিবাদ করে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকগণ মনে করেন, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করলেই কেবল পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক চাপ প্রশমিত হবে তা নয়, বরং তা হবে বিরোধী দলের আগামী জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে যৌথভাবে অংশ গ্রহণের জন্য কল্যাণকর।( লিলু)
|