স্যু লিচেন এমন একজন তরুণী যিনি বিনয়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং ধীরেসুস্থে চলাফেরা করেন । অন্য তরুণীর চেয়ে তিনি অনেক বেশী শান্তশিষ্ট । এ কারণে ১৮ বছর বয়সে তিনি চীনকে মুগ্ধ করার মত মহান কাজ করে ফেলেছেন। ব্যাপারটা কী?
ঘটনাটি ঘটে ২০০৫ সালের ৬ এপ্রিল বিকেলে চীনের চেচিয়াং প্রদেশের ওয়েনচৌ শহরের তা নানমেন রাস্তার পাশে এক কফি হাউসে । কফি খাওয়া শেষে অতিথিরা চলে যাওয়ার পর স্যু লিচেন টেবিল সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছিলেন , হঠাত চেয়ারে তিনি বিশ্ববিখ্যাত ট্রেডমার্কযুক্ত কালো রঙয়ের একটি অতি দামী ব্যাগ দেখতে পান । এটা কার ব্যাগ? নিশ্চয়ই এটা এইমাত্র এখানে কফি খেয়ে গেছেন এমন কারের ব্যাগ হবে ? সঙ্গেসঙ্গে তিনি ব্যাগটা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেন । দোকানের নিয়ম অনুযায়ী অতিথিদের জিনিসপত্র পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং তালিকাভুক্ত করতে হবে । ব্যাগটা খুলে ভিত্তরের জিনিসগুলো দেখে দোকানের কর্তৃপক্ষরা চমকে উঠলেন ।
ব্যাগটিতে রয়েছে পাসপোর্ট, ১২০ ইউরো, ১.৬৩ লাখ ব্যাংক ড্রাফ্ট, এক কোটি ২০ লাখ টাকার ব্যাংকের একাউন্ট বই সহ দশ-বারটি ব্যাংক হিসাবের বই। কোফি হাউস কর্তৃপক্ষ এক দিকে পুলিশকে খবর দেয় এবং অন্য দিকে ব্যাগের ভেতরের নাম-কার্ডের মাধ্যমে ব্যাগের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে । সবশেষে ব্যাগের মালিক সবকিছু সহ নিজের ব্যাগটা ফিরে পেলেন । ব্যাগের মালিক হলেন ফ্রান্সে বসবাসকারী চীনা শিল্প ও বাণিজ্য সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান প্রবাসী চীনা মিঃ ওয়াং । নিজের হারানো জিনিস পেয়ে মিঃ ওয়াং খুব মুগ্ধ ও আনন্দিত । পুরস্কার হিসেবে তিনি স্যু লিচেনকে ১০ হাজার ইউয়ান দেন । কিন্তু স্যু লিচেন বিনয়ের সঙ্গে তা নিতে অস্বীকার করেন । তিনি বলেন, ধন্যবাদ, আমি নিতে পারি না । এটা একটি অতি সাধারণ ঘটনা ।
স্যু লিচেনের কফি হাউসে প্রতিদিন নানা ধরণের অতিথি আসেন । স্যু লিচেনকে দেখতে তারা বিশেষভাবে দোকানে আসেন । তারা জানতে চান , স্যু লিচেন কি ধরণের মেয়ে । এতো বেশি ইউয়ান হাতে পেয়েও তিনি লোভকে সংবরণ করে রেখেছেন । এক সাক্ষাত্কারে স্যু লিচেন সংবাদদাতাকে বলেন , তার মনে যে সবচেয়ে গভীর রেখাপাত করেছে তা হল পাঁচসদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবার । এ পরিবারের বাবা-মা এবং নানা-নানি নাতিকে নিয়ে কফি হাউসে স্যু লিচেনকে দেখতে আসেন । মা মেয়েকে বলেন , খুকী , দিদির কাছ থেকে শিখে নাও এবং তার মতো ভাল মানুষ হও ।
কফি হাউসে কাজ করতে গিয়ে প্রায়শই ভিন্ন ভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যায় । স্যু লিচেন বলেন , তার পাওয়া সবচেয়ে ছোট একটি জিনিস হল একটি সিগারেটের প্যাগেট । যে কোনো জিনিস পাওয়া গেলে তিনি তা খুলে দেখবেন না । জিনিসটা ছোট হোক বড় হোক দামি হোক সেটা তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেনই । তিনি বলেন , আমিও জিনিস হারিয়েছিলাম । জিনিস হারিয়ে আমি যে উত্তেজিত হয়েছি তা ভেবে স্বাভাবিকভাবেই অন্য লোকের কথা অনুভব করতে পারি । তাই আমরা সর্বাধিক প্র্রচেষ্টায় জিনিসের মালিককে খুজে বের করি ।
স্যু লিচেন বিমানে পেইচিংয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যান । তিনি সংবাদদাতাকে জানান ,আমি ১১ সেপ্টেম্বর বিমানযোগে পেইচিং যাওয়ার খবর পেয়েছি । এটা আমার প্রথম পেইচিং সফর এবং আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ । পুরস্কার পাওয়া সম্পর্কে নিজের অনুভূতি বলতে গেলে লাজ্জুক স্যু লিচেন বলেন, তিনি খুব আবেগপূর্ণ । তিনি আরও বলেন , এই পুরস্কার তিনি অসুস্থ মাকে দেবেন ।
কিছু দিন আগে স্যু লিচেনের মা সাপের কামড়ে আহত হন । স্যু লিচেনের জন্মস্থান ফুচিয়েন প্রদেশে সাপের কামড়ে আহত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে । তাই সাপ কামড় দেয়ার পর মা বেশি গুরুত্ব দেননি । ফলে চিকিত্সার দেরী হওয়ায় সাপের বিষ হৃদপিন্ডে ছড়িয়ে পড়ে । এক সময় মায়ের অবস্থা খুবই বিপদ্জনক হয়েছিল । ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্যু লিচেন ছুটি নিয়ে মাকে দেখাশোনা করতে ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছিলেন । ট্রেন থেকে নামার সঙ্গেসঙ্গে তিনি পেইচিংয়ে গিয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার খবর পেলেন । লিচেন মা'র অবস্থার জন্য চিন্তিত । কিন্তু টেলিফোনে মা তাকে বলেন , তুমি যাও , আমার জন্য কোনো চিন্তা করবে না । তুমি ভালভাবে নিজের যত্ন নাও ।
টেলিফোনে মা পুরস্কার সম্পর্কে কিছু কথা বলেননি । তাঁর মনে যার কথা সবচেয়ে বেশি কথা মনে পড়ে তাহল মেয়ের জীবন । লিচেন বলেন, তিনি তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে ফিরে আসতে চান । তিনি পুরস্কারটি তার মাকে দান করবেন ।
|