v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-30 15:16:12    
উট মঙ্গোলীয়

cri

    মরু , পপলার গাছ ও উট হচ্ছে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার আরাসান অঞ্চলের অনন্য বৈশিষ্ট্য । এ অঞ্চলের লোকেরা উটের প্রতি ভীষণ

    অনুরাগী । উট তাদের জীবনের একটি প্রয়োজনীয় অংশে পরিণত হয়েছে । তারা উটের লোম দিয়ে তৈরী কাপড় পরেন , উট দৌড় এবং উটের দুধ খেতে পছন্দ করেন । তাদের জীবনধারাকে উট থেকে আলাদা করা যায় না ।

    আরাসান লোকদের জীবনযাত্রায় উটের প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ পেয়েছে । বিস্তীর্ণ মরুতে উট কম্পাস ও আবহাওয়া বিভাগের ভূমিকা পালন করে । মরু এলাকায় উটকে মানুষের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু বলা হয় ।

    এরচিনা অঞ্চলের মেনক্ নামে একজন বৃদ্ধ পেইচিং থেকে আগত সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দিলেন । তিনি তার উটদের খুব আদর করেন । দীর্ঘকাল ধরে মরুভূমিতে জীবনযাপন করার কারণে তার চেহারা কালো পাথরের মতো হয়ে গেছে । সংবাদদাতাকে দেখে তিনি খুব আবেগ প্রবন হয়ে উঠলেন । তার চোখে ফুটে উঠল জলকনা । উটের বিষয়টি বলতে গেলে তিনি প্রফুল্ল হয়ে উঠলেন । তিনি যেন একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক কবিতা আবৃত্তি করলেন । স্থানীয় লোকেরা তাকে কৃষ্ণ উট বলে ডাকে । তিনি এ নাম খুব পছন্দ করেন ।

    আগে উট এ অঞ্চলের একটি প্রধান যাতায়াতের বাহন ছিল । বিপুল পরিমাণ মালামাল পরিবহনের জন্য সাধারণতঃ ৫ হাজার উট নিয়ে একটি দল গঠন করা হতো। এ ধরনের দলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পশুজাত দ্রব্য ও লবণ মরু থেকে বাইরে পাঠানো হতো এবং এক মাসের মধ্যে পেইচিং থেকে খাদ্য , চা ও বস্ত্র মরুতে আনা হতো ।

    উট মরুতে বসবাসকারীদের জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করতো । তারা মরুতে ভারী মালামাল বহন করতো ও পশু পালকদের সেবা করতো । সুতরাং পশু পালকরা উটের প্রতি খুব স্নেহ প্রবন থাকতো ও আদর করতো । উট ও মানুষের মধ্যে গভীর অনুভূতি রয়েছে । মানুষের নিত্য জীবনযাত্রায় উট ও মানুষের মধ্যে বহু স্নেহপূর্ণ কাহিনী প্রচলিত রয়েছে ।

    বৃদ্ধ মেনক্ উটের প্রতি অনন্য অনুভূতি পোষণ করেন । তিনি বলেন , উট খুব বুদ্ধিমান , তাদের স্বভাব পরিশ্রমী, নমনীয় , সহিষ্ণুতাপূর্ণ এবং কর্তার প্রতি ভক্ত । ১২ বছর বয়সে এক দিন যখন বৃদ্ধ মেনক্ উট চরাচ্ছিলেন , তখন হঠাত্ প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয় । বৃদ্ধ সারা রাত উটের লম্বা ও নিবিড় লোমের ভিতরে নিরাপদে আশ্রয় নিলেন । উট জন্মস্থান খুব পছন্দ করে । তারা নিজের জন্মস্থান থেকে চলে যেতে চায় না । বাইরে থেকে জন্মস্থানে প্রত্যাবর্তন করলে তারা উত্ফুল্লের সঙ্গে চিত্কার করতে থাকে । তারা নিজেদের বাড়িও খুব চেনে । চোখ কাপড়ে বাঁধা থাকার পর কয়েক শো কিলোমিটার দূরে গিয়েও তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারে । বাড়ি ছেড়ে দেয়ার বহু বছর পর তারা নিজেদের বাচ্চা নিয়েও বাড়ি ফিরে আসতে পারে ।

    উট খুব বুদ্ধিমান । তারা আগে থেকে ঝড় ও দুর্যোগের পূর্বাভাস আভাস পেয়ে থাকে । সুংপুর আরাসান অঞ্চলের একজন পশুপালক । উট প্রসঙ্গে তিনি আবেগের সঙ্গে বলেন ,

    উটের বেশি মায়া-মমতা আছে । তারা মালিকের কাছে ঝড়বৃষ্টির পূর্বসতর্কতা জ্ঞাপন করতে পারে । উটের বাচ্চা মারা গেলে তারা দিন রাত তাদের কাছে দাঁড়িয়ে আছে । সাত আট দিন তারা কিছুই খায় না ।

    আরাসান অঞ্চলের লোকেরা উটকে খুব পছন্দ করে । তারা উটকে নিজের পরিবার পরিজনের চোখে দেখেন । পশুপালকরা উট অসুস্থ , বয়স্ক অথবা হারিয়ে গেলে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে । উট পালকরা উটকে আদর করতে সন্তানদের পরামর্শ দেন । এ ছাড়াও তারা তাদেরকে উট পালনের বেশ কিছু জ্ঞানও শেখান । তারা উটের রঙ ও স্বভাব অনুযায়ী তাদেরকে বৈচিত্র্যময় নাম দেন ।

    মরুর তরী বলে অভিহিত উট পরিবেশ সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। মরুভূমিতে উট হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । উট না থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে । এটা মরুর পরিবেশের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে । পাইংদেই আরাসান অঞ্চলের উট ও মরুর পরিবেশ রক্ষা সমিতির প্রধান । তিনি দীর্ঘকাল ধরে মরুর পরিবেশ রক্ষা কাজে নিয়োজিত হয়েছেন । উটের বংশ বিস্তারের মাধ্যমে মরুর পরিবেশ সংরক্ষণ করা তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা । মরুর পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে উটের ইতিবাচক ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,

    মরুতে উট চরানো তৃণভূমির জন্য উপকৃত । তাতে তৃণভূমির অবনতি ঠেকানো যায় । উট অন্যান্য পশুর মতো শিকড়সহ ঘাস একেবারে খেয়ে ফেলে না । উটের পা নরম বলে তৃণভূমির বেশি ক্ষতিও হবে না । পক্ষান্তরে মরুতে উট ঘুরে বেড়ানোর কারণে তৃণভূমির ঘাস ও অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য কল্যাণকর ।

    প্রাচীনকাল থেকে প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে উটের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। উটকে মানুষের নির্ভরযোগ্য বন্ধু বলা যায় । পশুপালকদের উদযাপনী অনুষ্ঠানে উট পুরুষদের সাহস ও পুরুষত্বেরও প্রতীক ।

    উট দৌঁড় আরাসান অঞ্চলের লোকদের একটি খুব জনপ্রিয় খেলা । এখানে প্রতি বছরের শরত্কালে নাদামো নামে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । চীনের ঐতিহ্যবাহী নববর্ষ-বসন্ত উত্সব উপলক্ষে রঙবেরঙের রেশমী ফিতায় উটে সাজানো হয় । আত্মীয়-স্বজনের দেখার সময় উট দৌড় প্রতিযোগিতাও হয় ।

    পশুপালকরা উটকে আদর করে । এটা উট বিষয়ক সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । এতে যেমন ব্যাপক পশুপালক তেমনি বিপুলসংখ্যক শহুরে অধিবাসীদের দৃষ্টিকেও আকৃষ্ট করেছে । উট দৌড় প্রতিযোগিতা পরিদর্শনের জন্য বেশ কিছু শহুরে অধিবাসী নিজেদের গাড়িতে করে তৃণভূমিতে আসেন । ফলে স্থানীয় অর্থনীতিও দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে ।

    উট মানবজাতির ভাল বন্ধু এবং পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখে । এ ছাড়াও তার ব্যাপক অর্থনৈতিক মূল্যও আছে । তার দুধ ও মাংস প্রোটিন সমৃদ্ধ । তার লোম ও চামড়া দিয়ে তৈরী নানা রকম জিনিসপত্রও খুব জনপ্রিয় ।

    মরুর পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য উট পালনের কাজ বিকশিত করার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে উট সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে । ফলে পশুপালকদের জীবনযাত্রার মান এবং উট বিষয়ক সম্পদের উন্নয়নের কাজও অনেক উন্নত হয়েছে ।(থান ইয়াও খাং)