মিং রাজবংশের সমাধি পেইচিং শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ইয়ানশান পর্বতমালার অংশ বিশেষ অঞ্চলে নির্মিত। সমাধির পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিকে পাহাড় এবং এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে একটি আঁকা বাঁকা পথ এ পথটি পেইচিং-এ এসে পৌছেছে। ছাংলিং সমাধি হচ্ছে ১৩টি সমাধির মধ্যে প্রধান। অন্য ১২টি সমাধি ছাংলিং-এর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে অবস্থিত।
লি মেই উল্লেখ করেছেন যে, ছাংলিং সমাধিতে সমাহিত রয়েছেন চু তি। তিনি ছিলেন মিং রাজবংশের সমাধি নির্মাণকারী প্রথম রাজা। রাজা চু তি ছিলেন একজন প্রতিভা দীপ্ত ও দূরদর্শিতা সম্পন্ন মানুষ। তার পেইচিংকে রাজধানী হিসেব প্রতিষ্ঠিত করার কারণ ছিল ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যে আগ্রাসকদের হাত থেকে পেইচিংকে রক্ষা করা। এর পাশাপাশি তিনি পেইচিং শহর, নিষিদ্ধ নগর (ফরবিডেন সিটি) এবং মহাপ্রাচীরও নির্মাণ করেছেন। চু তি'র নির্মাণ করা দেয়া ছাংলিং হচ্ছে মিং রাজবংশের প্রথম সমাধি ক্ষেত্র। পাহাড়ের অভ্যন্তরে সমাধি এবং উপরিভাগের স্থাপত্যকলা একে পূর্ণাঙ্গ সমাধিতে পরিণত করেছে।
ছাংলিং সমাধির স্থাপত্য নিষিদ্ধ নগরের গঠন কাঠামোর আদলে তৈরী লাল দেয়াল ও হলুদ টালি ও অসমতল প্রাসাদে সম্রাট চু তি'র অপূর্ব মর্যাদা ফুটে ওঠেছে। সমাধিস্থানের প্রধান স্থাপত্য হচ্ছে লিং এন প্রাসাদ। প্রতি বছর রাজকীয় ব্যক্তিবর্গ এ স্থানে এসে পূর্ব-পুরুষদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। প্রাসাদ নির্মাণের উপকরণ হচ্ছে নানমু। প্রাসাদটিতে ৬০টি ১২মিটার উঁচু ও ১ মিটার ব্যাস সম্পন্ন নানমু রয়েছে। নানমু হচ্ছে এক ধরনের মূল্যবান কাঠের খুটি। তা খুব শক্ত ও সহজে নষ্ট হয় না। এ কাঠের এক ধরনের বিশেষ সুগন্ধও রয়েছে। গাইড লি মেই জানিয়েছেন যে, প্রাচীনকালের পরিবহণের কাজ খুব সহজ ছিল না। সুতরাং এ সব নানমুগুলো কেটে ডিজাইন করে নিয়ে আসা ছিল অনেক কঠিন কাজ। তিনি বলেছেন—
এ সব কাঠ দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুননান ও সিছুয়ান প্রদেশের বন থেকে সংগ্রহ করা হয়। কারণ কাঠগুলো খুব বড়, প্রথমে মানুষ গাছ কেটে বনে রেখে দিতো। গ্রীষ্মকালে যখন বন্যা হতো তখন বন্যার পানিতে ভাসিয়ে বন থেকে নদীপথে গন্তব্য স্থলে নিয়ে যাওয়া হতো এসব নানমু। নদীপথে নিয়ে যাওয়ার সময় কাঠগুলোকে বেধে ভেলার মত করে নিয়ে আসতো পেইচিং-এ। এর পরে শীতকালে যখন বরফ পড়তো তখন হাজার হাজার শ্রমিক সমতল বরফের উপর দিয়ে টেনে ধীরে ধীরে কাঠগুলো পেইচিং-এ সমাধিস্থানে নিয়ে যেতো। সুতরাং এ সব কাঠ টেনে নিয়ে যেতে প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর লাগতো এবং প্রায় ২০ হাজার লোককে দিন রাত কাজ করতে হতো।
লিং এন প্রসাদের পর চার-দিক ঘিরে আর একটি ঐতিহ্যিক স্থাপত্য বিশিষ্ট একটি উঁচু মিং স্থাপত্য রয়েছে। তা হচ্ছে মিং রাজবংশের রাজ প্রাসাদের প্রতিনিধিত্বমূলক স্থাপত্য। ভেতরে রয়েছে একজন রাজার সমাধি। পাথরে উত্সর্গের কথা উত্কীর্ণ।
|