চীনের সপ্তম আন্তর্জাতিক লোকশিল্প উত্সব সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে । ১৯৯০ সালে চীনের প্রথম আন্তর্জাতিক লোকশিল্প উত্সব অনুষ্ঠিত হয় । এ উত্সব চীনের ও বিদেশের লোকশিল্পীর জন্য পারস্পরিক বিনিময় ও অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে । বতর্মান উত্সবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা মনে করেন , লোকশিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক যুগের গতিধারার সমন্বয় করতে হবে এবং এতে আধুনিক যুগের উপাদানগুলো মেশাতে হবে । যাতে আরো বেশি তরুন তরুণী লোকশিল্প পছন্দ করে ।
চীনের সাহিত্য ও শিল্পকলা ফেডারেশনের উদ্যোগে এ উত্সব আয়োজন করা হয় । বিশ্বের ২৩টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় একহাজার লোকশিল্পী বর্তমান লোকশিল্প উত্সবে অংশ নিয়েছে । এ উত্সব চীনের বিখ্যাত পর্যটন নগর সুচৌ শহর ও পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে । শিল্পীদের বৈচিত্রময় অনুষ্ঠান পর্যটক ও নাগরিকদের সাধুবাদ পেয়েছে।
জার্মানীর পোমেরানিয়া লোকনৃত্য দলের জর্জ মিলার জানিয়েছেন , এ দলের লোকনৃত্য জার্মানীতে কয়েক শ' বছর প্রচলিত । এ ধরনের লোকনৃত্য শুধু জার্মানরা দেখতে পছন্দ করে তাই নয় , অন্যদেশের দশর্করাও পছন্দ করেন । এবার চীনে আসার সুযোগ পেয়ে খুশি আমি খুব খুশি । তিনি বলেন , জার্মানীর উত্তরাংশে প্রচলিত এ লোকনৃত্য ও সংগীতের ইতিহাস কয়েক শ' বছরের । এ নৃত্য ও সংগীত স্থানীয় আধিবাসীদের ইতিহাস ও রীতিনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত । তাই আমরা ঐতিহ্যিক জাতীয় নৃত্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছি । আমাদের সংগীত ও নৃত্য দল প্রায়ই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় । চীনে এটা আমাদের প্রথম সফর । আমি মনি করি , এ উত্সবের সাংগঠনিক কাজ ভাল। এখানে আমরা চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংগীত ও নৃত্য উপভোগের সুযোগ পেয়েছি । জর্জ মিলার আরো বলেন , লোকশিল্প উত্সবে আমি বিভিন্ন দেশের লোকশিল্প দেখেছি , প্রতিটি দেশের লোকশিল্পের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।
তাঞ্জানিয়া থেকে আসা শিল্পীদের বয়স কম । তারা ঐতিহ্যিক ঢাকঢোল বাজানোর সঙ্গে আধুনিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গেসমন্বয় করার চেষ্টা করেছে । তাদের পরিবেশনা দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে । শিল্পী দলের নেতা মাউরাস উইবিরিলি বলেন , লোকশিল্পের প্রসারের জন্য ঐতিহ্য বজায় রাখার সাথে সাথে সাহসের সঙ্গে সংস্কার করা উচিত । যাতে আধুনিক যুগের দর্শকরা দেখতে পছন্দ করেন । তিনি আরো বলেন , আমরা ঐতিহ্যিক বাদযন্ত্র দিয়ে আধুনিক সংগীতের সুর বাজাই । বাদযন্ত্র বাজানোর পদ্ধতিও আধুনিক । আমরা এক দিকে আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য গ্রহণ ও সংরক্ষণের চেষ্টা করছি । কারণ আমরা আমাদের ইতিহাস ভুলতে পারি না । অন্য দিকে আমরা অগ্রগতি চাই । আমাদের দর্শকের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ -তরুণী । তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা ঐতিহ্যিক বাদযন্ত্র দিয়ে আরো বেশি সুর বাজানোর চেষ্টা করছি । যাতে আরো বেশি দেশের লোক তাঞ্জানিয়ার সুর শুনতে পাবেন ।
মিঃ মাউরাসের মত অন্যান্য দেশের লোকশিল্পীরাও একই মনোভাব পোষণ করেন । লোকশিল্পের উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ ও প্রসার এক বিশ্বব্যাপী ব্যাপার । এ সমস্যার সুষ্ঠু মীমাংসা সহজ নয় । আধুনিক যুগে নাগরিকরা ব্যস্ত , জীবনযাত্রার পদ্ধতিরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে । এ সব লোকশিল্পের প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । পূর্বপুরুষদের দীর্ঘ দিনের জীবনপ্রণালী আজকের তরুণ তরুণীরা পছন্দ করে না , ঐতিহ্যিক লোকশিল্পের মর্যাদাও কমছে ।
বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ ইউনেস্কোর অধিবেশনে ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি রক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহিত হয়। ২০০১ সালে বিশ্বের সংস্কৃতির বৈচিত্রতা সংরক্ষণের কথা ঘোষণা গৃহিত হয় । ২০০৩ সালে অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ চুক্তি গৃহিত হয় । এ চুক্তিতে লোকশিল্পসহ অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণের গুরুত্ব জোরালোভাবে উল্লেখ করা হয়েছে । এ সব ব্যবস্থা বিশ্বায়ন ও সামাজিক সংস্কারের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে সমঝোতা ও বিনিময় বাড়াতে সাহায্য করেছে ।
আন্তর্জাতিক লোকশিল্প সংস্থার সদরদপ্তর অষ্ট্রিয়ায় অবস্থিত । এ সংস্থার সদস্য সংখ্যা ১৩০টির বেশি । এই সংস্থার উদ্দেশ্য হল ঐতিহ্যিক লোকশিল্প সংরক্ষণ তরান্বিত করা । এ সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান এটিয়েনে ভানকের্সবিল্ক চীনের মোট পাঁচটি লোকশিল্প উত্সবে অংশ নিয়েছেন । তিনি মনে করেন , ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ও শিল্পকে যুগের সঙ্গে পরিবর্তন করতে হবে , শুধু এই ভাবেই ঐতিহ্য বজায় রাখা সম্ভব হবে ।
চীনের সাহিত্য ও শিল্পকলা ফেডারেশন একটি বেসরকারী সংস্থা। এ সংস্থার আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিভাগের উপপ্রধান হুয়াং ওয়েন চুয়ান বলেন , আন্তর্জাতিক লোকশিল্প সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বেশি । পারস্পরিক বিনিময় ও অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা অন্য দেশের অভিজ্ঞতা শিখতে পারি । লোকশিল্প উত্সব বিভিন্ন দেশের জন্য বিনিময় ও অধ্যয়নের একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে । লোকশিল্প সংরক্ষণ ক্ষেত্রে পারস্পরিক অধ্যয়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
|