পাকিস্তানের অ্যাটনি' জেনারেল মালিক মুহাম্মদ কাইয়ুম ২৬ নভেম্বর বলেছেন, পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ২৯ নভেম্বর সেনা প্রধানের ছেড়ে দিয়ে বেসামিরিক নাগরিক হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রেসিদেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন।
কাইয়ুম বলেন, মুশাররফের শপথ অনুষ্ঠান রাজধানী ইসলামাবাদের প্রেসিডেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রীম কোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি আব্দুল হামিদ দোগার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন।
২২ নভেম্বর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের দশজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি বঞ্চে সেনা প্রধানের থাকা অবস্থায় মুশাররফের নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা অভিযোগগুলোর সর্বশেষটি খারিজ করে দিয়েছে। ২৩ নভেম্বর মুশাররফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ গ্রহণ বৈধ বলে রায় দেওয়া হয়েছে। ২৪ নভেম্বর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, মুশাররফ ৬ অক্টোবরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। ফলে নতুন পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য তিনি বৈধ প্রেসিডেন্ট ।
চলতি বছরের ২ অক্টোবর পাকিস্তানের দু'জন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পাকিস্তানসুপ্রিম কোটে মুশাররফের প্রেসিডেন্ট নিবর্চনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেন । তারা আর্মিতে উল্লেখ করেন, সংবিধান অনুযায়ী সেনা প্রধান পদে থেকে মুশাররফের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা নেই। তারা নির্বাচন স্থগিত ঘোষণ ঘোষণ করার জন্যে আবেদন করেন। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ৫ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে আয়োজনের পক্ষে আদেশ জারি করি ৬ অক্টোবরের নির্বাচনে মুশাররফ বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হন।
মুশাররফ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানে বিভিন্ন বিরোধী দলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাতীব্রতর হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, ২৬ নভেম্বর ছিলো প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রও প্রধান বিরোধী দল--- পাকিস্তানের পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বেনজির ভুট্টো লারকানায় স্থানীয় নির্বাচন কমিশনে তার মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, মুশাররফের জারি করা জরুরি অবস্থার প্রতিবাদেপিপলস শেষ পযর্ন্ত নির্বাচনেঅংশগ্রহণ থেকে সরে দাঁড়াতে পারে।
এর পাশাপাশি পাকিস্তানের আরেকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী পাকিস্তান মুসলিম লীগের বড় অংশের নেতা নেয়াজ শরিফ ২৬ নভেম্বর রাতে পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে জমা দিয়েছেন। শরিফ দু'দফা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে তত্কালীন সেনা প্রধান মুশাররফ পাকিস্তান নেওয়াজ সরকারকে উত্খাত করে ক্ষমতা দখল করেন এবং প্রধানমন্ত্রনেওয়া শরিফ গ্রেফতার হন। পরের বছরে শরীফ ও তাঁর ভাই সৌদি আরবে নির্বাসিত হন। এ বছরের ১০ সেপ্টেম্বর নেওয়াজ শরিফ লন্ডন থেকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পরপরই পাকিস্তান সরকার তাকে আরব সৌদি আরবে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। ২৬ নভেম্বর শরীফ সৌদি আরব থেকে পাকিস্তানের পূর্বাংশের শহর লাহোরে ফিরে আসেন। বেনজির ভূট্টো শরিফের প্রত্যাবর্তনকেস্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শরিফের দেশে ফিরে আসা একটি ভালো ইঙ্গিত। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রাণশক্তি বাড়বে।
একই দিন মুসলিম লীগ (কায়েদ-ই-আযম) এর চেয়ারম্যান চৌধুরী সুজাত হোসাইনও পার্লামেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। তিনি সংবাদদাতাদের সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙক্ষনে বেনজির ভূট্টো ও শরিফের আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবেন।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, পার্লামেন্ট নির্বাচন আগামী বছরের ৮ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে। এখন যেহেতু মুশাররখের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার পথে সকল বাধা দূর হয়ে গেয়ে তাই ভবিষ্যত পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মুশাররফই । তবে বেনজির ভুট্টো ও শরিফ এখনো পাকিস্তানে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। এর আগে ভুট্টো বলেন, তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচন প্রতিহত করবেন। তবে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ায় ধরে নেওয়া যায় তার মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে শরিফ দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে আবার তাকে বহিষ্কার করা হলেও এবার তিনি সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরে এসেছেন। জনমত মনে করে, পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মহলে এই তিন জন ব্যক্তির মধ্যকার সংগ্রাম ও সহযোগিতা অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|