এখন শুনুন ওরা অনন্য । দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে অবস্থিত তিব্বতকে ' বিশ্বের ছাদ' ও ' পৃথিবীর তৃতীয় মেরু বলা হয় । তিব্বতও চীনের অন্যতম সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল । এ অঞ্চলে তিব্বতী জাতি ছাড়া হান , হুই , মেনপা , লুপা , নাসি , নু ও তুলুংসহ দশ বারোটি জাতির অধিবাসীরা বসবাস করে । সাংঘাতিক আবহাওয়ার কারণে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত দুর্বল । দীর্ঘকাল ধরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিক থেকে তিব্বত চীনের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল । কিন্তু এখন এই অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে । অর্থনীতি ও সমাজ দ্রুতভাবে বিকশিত করার পাশাপাশি তিব্বত পরিবেশ সুরক্ষার ওপরও ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে । আজ এ অনুষ্ঠানে এ বিষয় সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
তিব্বত একটি বিস্ময়কর জায়গা । এ অঞ্চলের ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিকে বিশ্বের শীর্ষ মালভূমি বলা হয় । তিব্বত সমুদ্র-সমতলের তুলনায় ৪ হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে অবস্থিত । কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে তিব্বতে যাওয়াকে একটি কঠিন সমস্যা বলে মনে করা হতো । নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হবার প্রথম দিকে তিব্বতে যাওয়ার জন্য ঘোড়ায় চড়ে অথবা হেঁটে যেতে হতো । তাতে কয়েক মাস সময় লাগতো ।
এতক্ষণ আপনারা যা শুনেছেন , তা স্বর্গীয় পথ নামে একটি লোক সংগীত । সংগীতে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে ।
গানে বলা হয়েছে , ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ একটি বিশাল ড্রাগণের মতো সুদূরের পথে প্রসারিত । তা তুষার মালভূমির জন্য সুখ ও আনন্দ বয়ে এনেছে ।
ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ এমন একটি বিস্ময়কর স্বর্গীয় পথ , যার মাধ্যমে সীমান্ত জনগণের জন্য সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে । ফলে তিব্বতে যাওয়ার জন্য এখন অনেক সুবিধা হয়েছে ।
ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হয়েছে গত বছর । এ রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রে ৩৩ বিলিয়ন ইউয়ান অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে । গত কয়েক বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ তিব্বতের বিভিন্ন বুনিয়াদী ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে অর্থ বরাদ্দ নিরন্তরভাবে বাড়ানোর পাশাপাশি তিব্বতে যাওয়ার আর কোন সমস্যা আর নেই । বর্তমানে সাধারণ মানুষ মোটর গাড়ি , রেল গাড়ি ও বিমানে এই বিস্ময়কর অঞ্চলে যেতে পারে । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ভাইস চেয়ারম্যান হাও ফেং বলেন ,
ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ গত বছর চালু হয়েছে । এতে তিব্বতের অনুন্নত যোগাযোগ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে । এর পাশাপাশি তিব্বতের বেসামরিক বিমান চলাচলও বিকাশ লাভ করেছে । এ পর্যন্ত ৩টি বিমান বন্দর নির্মাণ করা হয়েছে । এ ছাড়াও অন্য ২টি বিমান বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে । এ ছাড়াও সড়কের দৈর্ঘ্য ৪৫ হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে ।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি তিব্বত ভ্রমণে আসার জন্য অধিক থেকে অধিকতর পর্যটকদের আকর্ষণ করছে । তিব্বত পর্যটনের পর্যাপ্ত সম্পদে সমৃদ্ধ । এ অঞ্চলে অনন্য পরিবেশ , বিস্ময়কর ধর্ম ও আচার ব্যবহার দেখা যায় । প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক তিব্বত ভ্রমণে আসেন । এতে তিব্বতের জন্য বিরাট অর্থনৈতিক সুযোগ বয়ে এনেছে ।
তিব্বতের পরিবেশ অসাধারণ । নীল আকাশ , স্বচ্ছ হ্রদের পানি , তুষার আবৃত পাহাড় , মনোরম পোতালা ভবন এবং অনন্য রীতি-নীতিতে ভরপুর এ অঞ্চল । চীন , দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি নদীর উত্পত্তিস্থল এ অঞ্চলে । এ ছাড়াও তিব্বত চীনসহ পূর্ব গোলার্ধের আবহাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলেছে । সুতরাং পরিবেশ সুরক্ষাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে গণ্য করা হয় ।
তিব্বতের নীল আকাশ ও স্বচ্ছ পানি সুরক্ষা করার জন্য তিব্বতের স্থানীয় সরকার শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ- এর ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে । যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষণ হতে পারে , সে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুমোদন দেয়া হবে না । ফলে তিব্বতের দূষণের আশংকা একেবারে নিবারণ করা হয়েছে ।
ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ নির্মাণের ব্যাপারে পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে । তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে ৪ শো কিলোমিটার দূরে ছুনা নামে ৩ শো বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা একটি হ্রদ আছে । ওখানকার স্বচ্ছ হ্রদের পানি ও বিস্তীর্ণ তৃণভূমি থাকায় কৃষ্ণগ্রীব সারস , রাজহাঁস , বন্য হাঁস ও তিব্বতী ভেড়াসহ নানা ধরনের বন্য প্রাণীর বংশ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে । ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ থেকে ছুনা হ্রদ মাত্র চল্লিশ পঞ্চাশ মিটার দূরে । ইয়ান ফেই চেং এ রেলপথ নির্মাণকাজের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছিলেন । তিনি ছুনা হ্রদের পরিবেশ সুরক্ষার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন ,
রেলপথটি নির্মাণের পাশাপাশি ছুনা হ্রদের পানি যাতে দূষিত না হয় , সেজন্য বালিসহ বস্তা ব্যবহৃত হয়েছে ।
ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হয়েছে এক বছরের একটু বেশি হল । ছুনা হ্রদের পানি আগের মতোই স্বচ্ছ । হ্রদে ও হ্রদের তীরে কৃষ্ণগ্রীব সারস , রাজহাঁস ও বন্য হাঁস এখনও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
চীনে যেমন সরকার তেমনি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাও পরিবেশ সুরক্ষার ওপর মনোযোগী । যেমন বহু স্বেচ্ছাসেবক ছিংহাই-তিব্বত রেল গাড়িতেও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচারের কাজ করেছেন । তিব্বতের পরিবেশ সংরক্ষার জন্য তারা তিব্বত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের পরামর্শ দিয়েছেন । স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার একজন কর্মকর্তা ইয়াং সিং বলেন , ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হওয়ার পর প্রতি বছর ৯ লাখ পর্যটক তিব্বত ভ্রমণে আসেন । এটা তিব্বতের পরিবেশ সুরক্ষার ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে ।
ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হওয়ায় পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেশি চাপ পড়েছে । রেলগাড়িতে পর্যটকদের প্রতি পরিবেশ সুরক্ষার প্রচার কাজ চালানো খুব প্রয়োজন ।
এ ছাড়াও তিব্বতের স্থানীয় সরকার দূষণমুক্ত জ্বালানী ব্যবহারের ওপর খুব গুরুত্ব দিচ্ছে । যেমন সৌর শক্তির সদ্ব্যবহার তিব্বতে খুব জনপ্রিয় হয়েছে । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ভাইস চেয়ারম্যান হাও ফেং বলেন ,
তিব্বত সৌর শক্তি সম্পদে খুব সমৃদ্ধ । সুতরাং এ অঞ্চলে সৌর শক্তি সদ্ব্যবহারের ভবিষ্যত্- সম্ভাবনা খুব উজ্জ্বল ।
জানা গেছে , বর্তমানে তিব্বতে সৌর শক্তি-চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদনের ক্ষমতা ১০ হাজার কিলোওয়াটে দাঁড়িয়েছে । বেশির ভাগ কৃষক পরিবারে সৌর শক্তি-চালিত চুলা বসানো হয়েছে । জ্বালানী শক্তি হিসেবে সৌর শক্তি টেলি-যোগাযোগ এবং বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান সম্প্রচারেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে । এতক্ষণ শুনলেন ওরা অনন্য ।
|