"নোআনজিইয়া" হচ্ছে মঙ্গোলীয় একটি মেয়ের নাম। সে অনেক দূরে বিয়ে করেছে বলে সারা জীবন আর স্বদেশে ফিরে আসতে পারে না। গানটি মঙ্গোলীয় ভাষায় গাওয়া। দীর্ঘ এই গানের সুর ধীরলয়ের। সুরের মধ্যে মেয়েটির করুন আর্তি ফুটে উঠেছে।
মঙ্গোলীয় হচ্ছে উত্তর চীনে বসবাসকারী একটি সংখ্যালঘু জাতি। তাদের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। নাচ গানেও মঙ্গোলীয়দের রয়েছে বিশেষ নৈপুন্য। বিস্তৃত তৃণভূমি, বিশাল মরুভূমি বা সবুজ গ্রাম জুড়ে যেন ছড়িয়ে রয়েছে লালিতো ভরা গান। মঙ্গোলীয় জাতির লোকসংগীতের সুর প্রলম্বিত এবং উষ্ণ। তালে তালে মঙ্গোলীয়দের সরল সাবলীল চরিত্র ফুটে ওঠে।
এখন আপনারা মঙ্গোলীয় জাতির লোকসংগীত "বোরুলাই" শুনছেন। "বোরুলাই" হচ্ছে একজন অনাথের নাম। এটি বোরুলাইয়ের জন্য তার বড় বোনের ঘুমপাড়ানি গান। গানের সুর মনোরম এবং হালকা বেদনার ছোঁয়া আছে। গানের কথা এমন, "দক্ষিণ পাহাড় শানডিং গাছে ভরা। বাবা সেই গাছ কেটে তোমার জন্য দোলনা বানাচ্ছে। শীতের আঁধার রাতে মা তোমাকে বিছানা ছেড়ে দুধ খাওয়ান। মা , বাবা, তোমরা কোথায়? বোরুলাই, আর কাঁদে না?"
এতোক্ষণ আপনারা মঙ্গোলীয় জাতির লোকসংগীত "বোরুলাই" শুনলেন। এই গানটি "তৃণভূমির শ্বাসপ্রশ্বাস" নামের মঙ্গোলীয় জাতির গানের অ্যালবাম থেকে বাছাই করা।
"তৃণভূমির শ্বাসপ্রশ্বাস" হচ্ছে মঙ্গোলীয়দের প্রধান প্রধান সংগীতের একটি বিশেষ অ্যালবাম। এর মধ্যে ২৪টি গান আছে। সবগুলো গান যন্ত্রের সংগতবিহীন কোরাস। এখন শুনুন চার জন গায়িকার সমবেত কণ্ঠে গাওয়া "বন্য রাজহংসীর গান"। এ গানটি শত বছর ধরে মঙ্গোলীয়দের মুখে মুখে ফিরছে। গানটিতে শীত আসার আগে বন্য রাজহংসীর অতিথি হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্বদেশ ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি গভীর ভালোবাসা নিবেদিত হয়েছে। গানের কথা এমন, "আগস্টে আসে শরত্। আবহাওয়ায় শীতলতা। ছোট্ট বন্য রাজহংসীর শীত সয়না। উষ্ণ বাসার খোঁজে দক্ষিণে উড়ে চলে। আকাশা জুড়ে ঝাঁক ঝাঁক বন্য রাজহংসী। পিছু পিছু উড়ে চলে ছোট্ট বন্য রাজহংসী। চলে যায় তার স্বদেশের দিকে।"
মঙ্গোলীয় জাতির লোকসংগীত বিষয় বৈচিত্র্যেপূর্ণ। তৃণভূমির রাখালিয়া গান মঙ্গোলীয় জাতির অন্যতম প্রধান সংগীত মঙ্গোলীয় মানুষের প্রাণের গান। ব্যাপক জনপ্রিয় মঙ্গোলীয় জাতির লোকসংগীত এই রাখালিয়া গান। এসব গানে গভীর তৃণভূমির আবহ রয়েছে।
এতোক্ষণ আপনারা "তৃণভূমির শ্বাসপ্রশ্বাস" অ্যালবাম থেকে "রাখালিয়া গান" শুনলেন। ইয়ো নো বু এই অ্যালবামের সবগুলো গান পুনর্বিন্যাস করে নতুন রূপ দিয়েছেন। ইয়ো নো বু চীনে নাম করা মঙ্গোলীয় সুরকার। অর্ধ শতাব্দী ধরে তিনি বিপুল ও বিচিত্র ধরণের সংগীত করেছেন এবং ঐতিহ্যবাহী সব গানের নতুন রূপ দিয়েছেন। বিশেষ করে তাঁর লেখা মঙ্গোলীয় লোকসংগীতগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়।
এখন আপনারা ইয়ো নো বুর পুনর্বিন্যাস করা যন্ত্রবিহীন কোরাস "চার ঋণ" শুনছেন। গানের কথা এমন, " বসন্তে বাতাস ভাসে। মাটিতে তাজা ঘাস। এমন সুন্দর জায়গা ছেড়ে যেতে মন চায় না, তবু যেতে হয়। বহু দূর পথে আমার বাড়ি। আমরা ঘোড়ায় পিঠে স্বদেশে ছুটি।"
ইয়ো নো বুর ৫০ বছরের সংগীত জীবনে তৃণভূমি হচ্ছে তাঁর চিরায়ত বিষয়। তৃণভূমির সংস্কৃতি তার সংগীতের উত্স। তিনি মনে করেন, মঙ্গোলীয় সংগীত প্রাচুর্য্যে ভরা। এখন শুনুন "গভীর মদ" নামে একটি দ্বৈতগান। গানের কথা এমন, "রুপালী বাটিতে গভীর দুধ মদ। বন্ধুরা, তাড়াতাড়ি মদ খাও। আমি গানে গানে তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।"
শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা "তৃণভূমির শ্বাসপ্রশ্বাস" নামে মঙ্গোলীয় লোকসংগীত অ্যালবামের কয়েকটি গান শুনলেন। আশা করি, গানগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|