v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-23 11:33:14    
কৃষকরা গ্রামাঞ্চলের সাংস্কৃতিক গঠনে উপকৃত হয়েছে

cri
    গত শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে চীনের কয়েকটি সরকারী বিভাগের যৌথ উদ্যোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদেরকে জ্ঞান ও প্রযুক্তি শেখানোর লক্ষ্যে বই প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়। পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলো শহরের তরুন-তরুনীদের সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের যুবক-যুবতীদের হাতে হাত মিলিয়ে বন্ধু হওয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের সাংস্কৃতিক গঠনকেও ত্বরান্বিত করেছে।

    চীনের সংস্কৃতি বিষয়ক দারিদ্র্য বিমোচন কমিটি হচ্ছে একটি গণ কল্যাণমূলক বেসরকারী গোষ্ঠী এবং তা ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সকল কর্মী অবসর সময় ব্যবহার করে কৃষকদেরকে অবৈতনিক সেবা প্রদান করেন। তাঁরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদেরকে বিজ্ঞানের সাহায্যে দারিদ্র্যমোচনে সাহায্য করেন এবং সমাজের অন্যান্যদের যত্ন নেয়ার ভালো পরিবেশ গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। ১৯৯৪ সালে এই কমিটি এবং জাতীয় তথ্য ও প্রকাশনা অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে "হাজার হাজার গ্রামের গ্রন্থাগার" প্রকল্প শুরু হয়। তাদের আমন্ত্রণে প্রকাশনালয়, বই-এর দোকান এবং সাধারণ লোকেরা কৃষকদেরকে জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করার লক্ষ্যে বিশেষ লাইব্রেরী নির্মাণ করে। দশ বছরেরও বেশী সময়ে সারা দেশে মোট ৯০ হাজারেরও বেশী এ ধরণের লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয়।

    সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের থাংশান শহরের লোথিং জেলার চাও ছাই চুয়াং গ্রামের লাইব্রেরী পরিদর্শন করেছেন। চাও ওয়েনপিং নামে একজন কৃষক বলেন, তিনি লাইব্রেরীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক অনেক বই পড়েছেন এবং এসব জ্ঞান ফল চাষ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। যাতে ফলের উত্পাদনের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বলেন,

    সংস্কৃতি ক্ষেত্রে দারিদ্র্যমোচন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্রামে প্রবেশ করার মাধ্যমে আমরা অনেক জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হয়েছি। মিষ্টি তরমুজ এবং পিচ ফলের দারুণ উন্নতি হয়েছে।

    বই প্রদান কার্যক্রম চালু করার মাধ্যমে চীনা কৃষকদের বইপড়া ও লেখাপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়েছে। অনেকে বই থেকে শেখা জ্ঞান নিয়ে দারিদ্র্যমোচন এবং ধনী হয়েছেন। কিছু কিছু কৃষক তাদের বই পড়ার অনুভূতি লিখে বেতার সংস্থা এবং পত্রিকায় প্রবন্ধ পাঠান। প্রবন্ধ প্রকাশের পর তাদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেছে।

   "হাজার হাজার গ্রামের গ্রন্থাগার" কার্যক্রমে অনেক ভালো ফলাফল লাভে সক্ষম হয়েছে বলে সরকারী বিভাগ তার উপর আরো বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। ২০০৬ সালে জাতীয় তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগ "গ্রামীণ পুস্তক কক্ষ" প্রকল্প শুরু করে। নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারে পাঁচ বছরের মধ্যে সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে ২ লাখ গ্রামীণ পুস্তক কক্ষ নির্মাণ করা হবে এবং প্রতি পুস্তক কক্ষে প্রায় এক হাজার বই, ডজন খানেক পত্রিকা ও কয়েক'শ সিডি, ভিসিডি ও ডিভিডি থাকবে। তথ্য আর প্রকাশনা অধিদফতরের পত্রিকা প্রকাশনা বিভাগের মহা-পরিচালক ফান ওয়েইপিং জানিয়েছেন, সরকার অর্থ বিনিয়োগ করে বই কিনে এবং পুস্তক কক্ষের তত্ত্বাবধান করে। এ সব বই কৃষকদের খুবই উপযোগী।

    আমাদের বেছে নেয়া বইগুলো কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে। এ সব বই-এর বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, পার্টির নীতিমালা, আইন, বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের জ্ঞান। কৃষকরা বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বুঝতে পারেন।

    গ্রামাঞ্চলের যুবক-যুবতীদেরকে যত্ন নেয়া এবং তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন করা হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান কাজ। ১৯৯৫ সাল থেকে চীনের সংস্কৃতি বিষয়ক দারিদ্র্য বিমোচন কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা আমন্ত্রিত হয়ে শহরের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটান এবং অতিথি হিসেবে শহরবাসীদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। এ ধরণের কার্যক্রমকে "হাতে হাত মিলিয়ে বন্ধু হওয়া" বলে গণ্য করা হয়। সংগঠকরা আশা করে, এ ধরণের তত্পরতার মাধ্যমে গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীরা শহরের ছাত্রছাত্রীদের মতো একই নীল আকাশের নীচে বড় হবে।

    এ ধরণের কর্মসূচীর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা জানতে পারে, শহরের জীবন ও বাইরের বিশ্ব কী রকম। শহরের ছাত্রছাত্রীরাও অনুধাবন করেছে যে, চীনে আরো কিছু দরিদ্র্য অঞ্চল রয়েছে। সেখানে ছেলেমেয়েদের জীবন-যাত্রার সুযোগ-সুবিধা তাদের চেয়ে খারাপ। কিন্তু জ্ঞানের প্রতি গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের আগ্রহ অনেক বেশি। এ পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২ কোটি জোড়া ছেলেমেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ অংশীদারিতে পরিণত হয়েছে।

    দশ বছরেরও বেশী সময়ে "হাতে হাত মিলিয়ে" বন্ধু হওয়ার কার্যক্রম শহর ও গ্রামাঞ্চল, হান জাতি ও উপজাতি এবং স্বাস্থ্যকর ও প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ত্বারান্বিত করে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের শহরের দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শহরে আসা কৃষি শ্রমিকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু কৃষক নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকে জন্মভূমিতে রেখে এসেছেন।

দাদা দাদিসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন তাদের যত্ন নিচ্ছেন। এসব ছেলেমেয়েকে"কৃষি শ্রমিকদের রেখে যাওয়া ছেলেমেয়ে বলে গণ্য করা হয়। সমাজ তাদের শিক্ষা ও বড় হওয়ার পরিবেশের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখছে। এ বছরের "হাতে হাত মিলিয়ে বন্ধু হওয়ার তত্পরতা" এ সব ছেলেমেয়ের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। শিশুদের সমস্যা ক্ষেত্রে চীনের শিশু ও কিশোর বিষয়ক প্রকাশনালয়ের উপ-সাধারণ সম্পাদক লু ছিন হচ্ছেন একজন বিখ্যাত শিশু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এ বছরের কার্যক্রম প্রধানত "কৃষি শ্রমিকদের রেখে যাওয়া ছেলেমেয়েদের"মানসিক সমস্যার উপর দৃষ্টি রাখা। তিনি বলেন,

   

   "কৃষি শ্রমিকদের রেখে যাওয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে অধিকাংশ দাদাদাদির সঙ্গে থাকে। আসলে ছেলেমেয়েরা তাদের বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাবা মায়ের যত্নের খুব প্রয়োজন। বাবামা পাশে না থাকায় এ সব ছেলেমেয়ে নিঃসঙ্গ। আমরা চিন্তা করছি, কী ভাবে এসব গ্রামীণ ছেলেমেয়েদেরকে দেয় সাহায্য আরো কার্যকর করা যায়।

    এ বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে এসব ছেলেমেয়ে শহরের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একটি হাসিখুশি ছুটি কাটিয়েছে। তারা বিনা পয়সায় এক বছরের "চীনা কিশোর পত্রিকা" পেয়েছেন। পত্রিকার মাধ্যমে তারা সারা দেশের ছেলেমেয়েদের কথা জানতে পারবে এবং পত্রিকার উদ্যোগে নানা ধরণের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে। ফলে তারা শহরের ছেলেমেয়ের মতোই আনন্দময় পরিবেশে শিশুকাল কাটাতে পারবে।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার "সামাজতান্ত্রিক নতুন গ্রামাঞ্চল নির্মাণের" প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে সাংস্কৃতিক গঠনকাজ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীন সরকারের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা অনুসারে আগামী কয়েক বছরে সরকার গ্রামাঞ্চলের সংস্কৃতির উন্নয়নে পুঁজি বিনিয়োগ বাড়াবে। যাতে সারা দেশের কৃষকরা সাংস্কৃতিক উন্নয়নের সাফল্য ভোগ করতে পারেন। (লিলি)