চীনের প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও ২১ নভেম্বর সিংগাপুরে অনুষ্ঠিত তৃতীয় পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। এই সম্মেলনে ওয়েন চিয়া পাও " সম্মিলিতভাবে টেকসই উন্নয়নের ভবিষ্যত নির্মানেহাতে হাত ধরে সহযোগিতা " শিরোনামে একটি ভাষণ দিয়েছেন। তিনি তাঁর ভাষণে বিশ্ব জলবায়ু পরিবার্তন বিষয়ে চীনের নীতি তুলে ধরেছেন এবং উপযুক্ত দায়িত্ব ও ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সম্মেলনে প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় চীনের নীতিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, " জাতি সংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কাঠামো চুক্তিতে" নির্ধারিত মূল নীতি। ওয়েন চিয়া পাও বলেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোর নিজেদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব বিবেচনায় রাখা উচিত। তা ছাড়া তাদের মেনে নিতে হবে যে এখনও তাদের মাথাপিছু কাবন ডাইঅকসাইড নিঃসরনের মাত্রা অনেক উঁচুতে। ওয়েন চিয়া পাও বলেন, এ সব শিল্পোন্নতদেশকে "কিয়োডো চুক্তিতে" নির্ধারিত বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা" কড়াকড়িভাবে মেনে ২০১০ সালের পর অব্যাহতভাবে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরন কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনতে হবে। অন্য দিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত নিজ নিজ দেশের সামর্থ্য অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া এবং বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যথাসাধ্য অবদান রাখা।
চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু বতর্মানে চীনে মাথাপিছু কাবন ডাইঅকসাইড নিঃসরনের মাত্রাশিল্পোন্নতদেশগুলোর তুলনায় গড়ে তিন ভাগের এক ভাগও নয়। অন্য দিকে ১৯৫০ সাল থেকে ২০০০ সাল পযর্ন্ত কেবল শিল্পোন্নত দেশগুলোর কাবন ডাইঅকসাইড নিঃসরনের মাত্রা সারা পৃথিবীর মোট মাত্রার ৮ শতাংশ ছিল। সুতরাং ওয়েন চিয়া পাও মনে করেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামর্থ্য বাড়ানোর জন্যে বিশ্ব সম্প্রদায় ও শিল্পোন্ন দেশগুলোর সাহায্য জোরদার করা উচিত।
ওয়েন চিয়া পাও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে বৈশ্বিক সমস্যা যা বিভিন্ন দেশের জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি বলেন, চীন সরকার পরিবেশ সংরক্ষণকে রাষ্ট্রীয় এবং বিজ্ঞাসম্মত উন্নয়ন তত্ত্বকে প্রশাসনিক নীতি হিসেবে গণ্য করে। স্বদেশ, মানব জাতি এবং উত্তরাধিকারদের স্বার্থ বিবেচনা করে চীন সরকার বিষাক্ত গ্রীন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর ধারাবাহিক নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, চীন ষ্পষ্টভাবে বিষাক্ত গ্রীন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য মাত্রাউত্থাপন করেছে। এ অনুযায়ী ২০১০ সাল নাগাদ প্রতি ইউনিট জি ডি পির বিপরীতে জ্বালানী ব্যয় ২০০৫ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ কমানো হবে ।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সহজ কাজ নয়। জানা গেছে, চীনে এখনও ২ কোটি গ্রামবাসী ও ২ কোটি ২০ লাখ শহরবাসী দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবনযাপন করছে। ১,৩ বিলিয়ন চীনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্যে চীনে বিষাক্ত গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে। তা ছাড়া, চীন একটি বড় উত্পাদনকারী দেশ । চীনের তৈরী পণ্য সারা বিশ্বে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তিনি চীনের দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন, জাতি সংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কাঠামো চুক্তি" ও " কিয়োডো চুক্তি " অনুযায়ী চীন উপযুক্ত দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করবে।
এ ছাড়াও, ওয়েন চিয়া পাও জানিয়েছেন, আগামী বছর চীনে অনুষ্ঠেয় " পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইতে নেয়ার সামর্থ্য সম্পর্কিত ফোরামে" এই অঞ্চলের দেশগুলোরকিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার সামর্থ্য বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
২১ নভেম্বর পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে ওয়েন চিয়া পাও আসিয়ানের ১০টি দেশ ও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া , অষ্ট্রেলিয়া, ভারত এবং নিউজল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গে জলবায়ু পরিবতর্ন, জ্বালানী ও পরিবেশ সম্পর্কিত সিংগাপুর ঘোষণা" স্বাক্ষর করেছেন।
এতক্ষণ আজকের প্রধান প্রতিবেদন শুনলেন। আমাদের সঙ্গে থেকে অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য ধন্যবাদ।
|