v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-21 17:50:45    
তুরস্ক ও ইরানের জ্বালানি সহযোগিতা

cri

    তুরস্ক ও ইরান ২০ নভেম্বর আংকারায় বিদ্যুত্ ক্ষেত্রের সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি হচ্ছে চলতি বছরের জুলাই মাসের পর জ্বালানি ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় চুক্তি।

    এই চুক্তি অনুযায়ী, দু'দেশ ইরানে যৌথ-মালিকানার দুটি দুই গিগাওয়াট তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র আর বেশ কয়েকটি দশ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র ছাড়াও তুরস্কে একটি দুই গিগাওয়াট তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন করবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইরানের জ্বালানি মন্ত্রী পারভিজ ফাতাহ বলেন, যদিও কিছু দেশ এই চুক্তির কারণে অখুশি হবে। তবে ইরান ও তুরস্ক হচ্ছে দুটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র দেশ। তারা উভয় পক্ষের কল্যাণের লক্ষ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

    গত শতাব্দীর ৯০'র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে দু'দেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা শুরু হয়। এ বছর ১৩ জুলাই দু'দেশ জ্বালানি সহযোগিতা সংক্রান্ত অন্য একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী, তুরস্ক দরপত্র দাখিল না করে সরাসরি ইরানের দক্ষিণ ফারস প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র প্রকল্পের কাজে অংশ নিতে এবং সেখানে উত্পাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস ইরানের কাছে বিক্রি করতে পারবে। তা ছাড়াও ২০০৮ সাল থেকে ইরান ও তুর্কমেনিস্তান প্রতি বছর তুরস্কের মাধ্যমে ইউরোপে ৩০ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানী করবে।

    বিশ্লেষকগণ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তুরস্ক ও ইরান জ্বালানি সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।

    প্রথমতঃ অর্থনৈতিক চাহিদা। ইরান বিশ্বের একটি বৃহত্তম জ্বালানি সম্পদ সমৃদ্ধ দেশ। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের পরিমাণের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম সারিতে তার অবস্থান। কিন্তু তুরস্কের জ্বালানি সম্পদ খুব কম। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে তার ৯০ শতাংশই আমদানি নির্ভর। তুরস্ক জ্বালানি সম্পদ সমৃদ্ধ ইরাকের সঙ্গে প্রতিবেশী হলেও বর্তমান অবস্থায় জ্বালানি ক্ষেত্রে ইরাকের সঙ্গে সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ ইরাকের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। ফলে তুরস্ক ইরানের সঙ্গে তার জ্বালানি সহযোগিতা করার সম্ভাবনাই বেশি। ইরান তুরস্কের সঙ্গে জ্বালানির ব্যাপারে সহযোগিতা করলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরোপিত অর্থনৈতিক শাস্তি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। পরস্পরের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, তুরস্ক ও ইরানের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক মূল্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দাঁড়িয়েছে। এ বছরের শেষ দিকে এ পরিমাণ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে। জ্বালানি ক্ষেত্রের সহযোগিতা ক্রমাগত দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক মূল্যকে বৃদ্ধি করছে।

    দ্বিতীয়তঃ রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা। তুরস্কের পাশ্চাত্য দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার ঐতিহ্যিক মিত্রতার সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্ককে কাছে টানতে পারলে বর্তমানে ইরানের ওপর আরোপিত চাপ কিছুটা কমানোও সম্ভব হবে।

    তুরস্ক ইরানের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা করলে সে তিনটি সুবিধা পাবে। একঃ তুরস্কের "আন্তর্জাতিক জ্বালানি বারাদ্দী" বাস্তবায়ন করা, তুরস্কের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এর ফলে এ অঞ্চলসহ বিশ্বে তুরস্কের রাজনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। দুইঃ কুর্দিশ ওয়ার্কাস পার্টিকে দমনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির সময় নিজের রাজনৈতিক প্রভাবকেও খাটানো যাবে। তিনঃ ইরানের মাধ্যমে তুরস্ক ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করা যাবে।

    বিশ্লেষকগণ মনে করেন, যদিও বর্তমানে তুরস্ক ও ইরান জ্বালানি ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করছে। তবে এই সহযোগিতার পিছনে নিশ্চয়ই আরো কিছু কারণ রয়েছে। এই চুক্তির সবচেয়ে বড় বাধা হলো যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই তুরস্ক ও ইরানের জ্বালানি সহযোগিতার বিরোধিতা করে যাচ্ছে। কারণ, এ ধরনের সহযোগিতা হয়তো ইরানের পারমাণবিক সমস্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রস উইলসন বলেন, যদি তুরস্ক ইরানের সঙ্গে তার স্বাক্ষরিত প্রাকৃতিক গ্যাস সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি পরিত্যাগ করে, তাহলে মার্কিন সরকার তুরস্কের জন্য ইরাক ও মধ্য এশিয়ায় জ্বালানির ব্যাপারে যথাসাধ্য সাহায্য করবে। এই প্রস্তাবের জন্য তুরস্ক গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছে।

    তা ছাড়া সম্প্রতি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ইরানের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক শাস্তি আরোপের বিল অনুমোদন করেছে। এতে বলা হয়, ইরানের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে ২ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি পুঁজি বিনিয়োগকারী বিদেশী কোম্পানিকে শাস্তি দেয়া হবে। বুঝা যায়, ইরানের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা চুক্তি কার্যকর করলে তুরস্ককেও শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এসব অবস্থা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে তুরস্ক ও ইরানের জ্বালানি সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা এখন দেখার ব্যাপার। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)