v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-20 20:27:33    
চীনের বন্য প্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্র শিল্পী সি জি নুং

cri

    সি জি নুং হলেন চীনের একজন আলোকচিত্র শিল্পী। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে জাপানের টোয়ামা শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বন্য প্রাণী বিষয়ক চলচ্চিত্র উত্সবে তার আলোকচিত্র "জুই সিয়ুন ডিয়ান চিন সি হো" এশিয়ার শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র হিসেবে ছবি'র পুরষ্কার পেয়েছে। পাশা পাশি তিনি চীনের পরিবেশ সুরক্ষা ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পুরষ্কার "দি ছ্যু চিয়াং" পেয়েছেন। ৪৩ বছর বয়স্ক সি জি নুং এর গায়ের রঙ বেশ কাল। কারণ সারা দিন তাকে বনের ভেরত ঘুরে বেড়াতে হয়। তিনি সব সময় হাশিখুশি মেজাজে থাকেন। এর আগে সি জি নুং চীনের কেন্দ্রীয় টিভি স্টেশন সিসিটিভিতে কাজ করতেন। ১৯৯৮ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে একজন স্বাধীন আলোকচিত্র শিল্পী হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি পরিবেশ সুরক্ষার একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। সি জি নুং বলেন, বন্য প্রাণীী ছবি তোলার তার ছোটবেলা থেকেই শুরু।"আমি একটি সুন্দর গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়েছি।

    ছোটবেলায় আমার চার পাশে সহজই অনেক রকমের পশুপাখি দেখা যেত। আমি হাঁস ও পাখি পালন করেছি। রাতে প্যাঁচার আওয়াজ শোনা যেতো। স্কুলের আভিনায় অনেক বড় বড় ইউক্যালিপটাস গাছ ছিল। সে সময় মাঝে মাঝে নেকড়ের আওয়াজও শোনা যেতো।"সি জু নুং'র বাড়ি ইয়ুন নান প্রদেশের তালি বাই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে । সেখানে গাছপালা অনেক বেশি, পশুপাখির বিচরণও অনেক বেশি। তার দশ বছর বয়সে তিনি বাবা মা'র সঙ্গে ইয়ুন নান প্রদেশের রাজধানী খুন মিংয়ে উঠেছেন। পশুপাখি থেকে দূরে থাকা সি জি নুংয়ের জন্য খুব অস্থীর থাকতো। তাই ২০ বছর পর তিনি আবার নিজের প্রিয় বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।সি জু নুং বলেন, চীনে বন্য প্রাণীর ছবি তোলা খুব কঠিন। কারণ বড় ধরণের পশুর সংখ্যা কম এবং তারা মানুষের ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে চলাকেরা করে। তা সত্ত্বেও তিনি অনেক দূর্লভ ছবি তুলেছেন।সি জি নুংয়ের তোলা আলোকচিত্রের মধ্যে বেবুনের (Rhinopithecus Bieti) ছবি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের বেবুন ইয়ুন নান ও তিব্বত সীমান্তের ৩২০০ থেকে ৪৭০০ মিটার উঁচুর পাহাড়ে থাকে। এ প্রজাতির সংখ্যাও এখন খুব কম। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫০০টিতে।

    ১৯৯২ সালে বিশ্ব প্রকৃতি তহবিল এবং চীনের জাতীয় প্রাকৃতিক বিজ্ঞান তহবিলের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বেবুন রক্ষা করার প্রকল্প চালু হয়। সি জি নুং এই প্রকল্পের কর্মীদের সঙ্গে পাহাড়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তি তিন বছর ধরে তিনি বেবুন খুঁজতে থাকেন এবং তাদের জীবনধারার ছবি তুলতে থাকেন। তার আলোকচিত্র আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও পেয়েছে।দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সি জি নুং বন্য প্রাণীর জন্য ছবি তোলার সময় বহু বার বিপদে পড়েছিলেন। তিনি একবার পাহাড় থেকে ও পড়ে যান। একবার দ্রুত ছুটন্ত ঘোড়া থেকে পড়ে যান। একবার এক পাল ষাঁড় তার পাশ দিয়ে দৌঁড়ে পালায়। তার শরীরের চারটি পাঁজর ভেঙে যায়। তারপরও অদম্য এই আলোকচিত্র শিল্পী পিছ পা হন নি এবং বন্য প্রানীদের সম্পর্কে তার একটুও আগ্রহ কমেনি। তিনি মনে করেন, আলোকচিত্রের মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আরো নিবিড় সম্পর্ক ও গভীর ভালবাসা গড়ে উঠবে।বন্য প্রাণীর একজন আলোকচিত্র শিল্পী হিসেবে আরো বেশি মানুষ সচেতন হবে প্রকৃতিকে রক্ষার ব্যাপারে দ্বিধাহান চিত্তে এগিয়ে আসবে আজকের সি জি নুংয়ের এ একমাত্র আশা। তিনি বলেন:"প্রথম জীবনে আমি পাখি'র ওপর ছবি তুলতে শুরু করি। পএখন আমি মনে করি পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক অবনতি হয়েছে। সরকার এখন এর উপরে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। ধাপে ধাপে সাধারণ মানুষের সচেতনতাও গড়ে উঠছে। এ দেখে আমি খুব আনন্দিত।"

    ২০০১ সালে সি জি নুং "বন্য চীন স্টুডিও" প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ স্টুডিও স্তির চিত্র ও ভিডিও'র মাধ্যমে প্রকৃতি রক্ষার কাজ করে। এটি পেইচিং চিড়িয়াখানায় অবস্থিত। সি জি নুং মনে করেন এখন সবার সামাজিক পরিবেশ রক্ষার ধারণা আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। তিনি বলেন:"আরো বেশি তরুণতরুণীরা পরিবেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত হয়েছে দেখে আজ আমি খুব খুশি। যদি প্রত্যিটি লোক কিছু কিছু কাজ করে তবে আমাদের পরিবেশ অনেক উন্নত হতে পারে। যেমন আমরা এসি চালানোর সময় সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে রাখার একটি দাবি জানিয়েছি। অনেকেই তা এখন পালন করতে শুরু করেছে। কাজটি সহজ হলেও পরিবেশ রক্ষার জন্য খুব সহায়ক। সবাই এভাবে অবদান রাখতে পারে।সি জি নুং নিজে কখনো এসি ব্যাবহার করেন না। বাইরে কোথাও যেতে হলে তিনি সাইকেল চালিয়ে যান। সব সময় সঙ্গে থাকে চপ-স্টিক্স, তাতে রেস্তোরায় নতুন চপ-স্টিক্স সাশ্রয় করা যায়। সি জি নুং'র আলোকচিত্রে প্রাণী তুলের বর্তমান অবস্থান নিখুঁতভঅবে চিত্রায়িত হয়েছে এবং তা খুব চমত্কার। বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের সবাই সচেতনভাবে বন্য প্রাণী ও পরিবেশের উপরে দৃষ্টি রাখবে এটাই সি জি নুং ও তার স্টুডিওর স্বপ্ন।(ইয়াং ওয়েই মিং)