ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তিপূর্ণ বৈঠক ও মধ্য-প্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে মধ্য-প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন এ মাসের শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্যাপলিসে অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিপূর্ণ এ সম্মেলনকে ফলপ্রসূ করে তোলার জন্য সম্মেলনের আগেই বিভিন্ন পক্ষ তাদের তত্পরতা শুরু করছে।
প্রথমতঃ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ১৯ নভেম্বর জেরুজালেমে দু'ঘন্টাব্যাপী এক বৈঠক করেছেন। ইসরাইল সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, যৌথ বিবৃতি তৈরীর ক্ষেত্রে দু'পক্ষের মধ্যে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। ফিলিস্তিনের শীর্ষ আলোচনা প্রতিনিধি সায়েব এরেকাত বলেছেন, বৈঠকে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের নেতারা মতভেদ নির্মূল করার ব্যাপারে নিজেদের নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন এবং দু'পক্ষের প্রতিনিধিদের আলোচনা চালিয়ে যাবার অনুরোধ জানিয়েছেন। যাতে দু'পক্ষের মতভেদ কমানো সম্ভব হয়।
তাছাড়া, এ দিন ইসরাইল ফিলিস্তিনের জন্য দুটো বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করেছে।
একঃ ইসরাইলের মন্ত্রীসভার আরো ৪৪১জন ফিলিস্তিনী বন্দীকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত। তা ফিলিস্তিনের উত্থাপিত মধ্য-প্রাচ্য শান্তিপূর্ণ বৈঠকের আগে আরো ২ হাজার ফিলিস্তিনীকে মুক্তি দেয়া বিষয়ক অনুরোধের সাড়া। দুইঃ ওলমার্ট ইসরাইলের 'রোড ম্যাপ'-এর নতুন বসতি এলাকা নির্মাণ বন্ধ করা সংক্রান্ত অনুরোধের প্রেক্ষিতে, ভবিষ্যতে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে নতুন বসতি এলাকা নির্মাণ বা নতুন জমি অধিগ্রহণ করবেন না। ইসরাইল সরকার তার আধিবাসীদের অবৈধ বসতি এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে নেবে। এটা হচ্ছে ৮ নভেম্বর ইসরাইল-ফিলিস্তিন আলোচনা গ্রুপের মধ্যে কোন শান্তিপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরের আগে প্রথমে মধ্য-প্রাচ্য শান্তিপূর্ণ 'রোড-ম্যাপ' চুক্তির প্রথম পর্যায়ের অনুরোধ বাস্তবায়ন। এ বিষয়টি ওলমার্টের বসতি এলাকার সমস্যা সম্পর্কে প্রথম প্রতিশ্রুতি। ওলমার্টের এ ধরনের বক্তব্য ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের দ্বন্দ্ব প্রশমনের জন্য কিছুটা অনুকূল হবে। পাশাপাশি সৌদী আরবসহ নিকটবর্তী আরব দেশগুলোর সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রেও হবে অনুকূল।
অন্য আরেক খবরে জানা গেছে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তিপূর্ণ বৈঠক ত্বরান্বিত করার জন্য এ দিন ইইউ নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইইউ'র বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কাউন্সিলর বেনিতা ফেরেরো-ওয়াল্ডনার এবং কূটনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ প্রতিনিধি হ্যাভিয়ের সোলানার ১৯ নভেম্বর উত্থাপিত রিপোর্টটিকে অনুমোদনের মধ্য দিয়ে মধ্য-প্রাচ্য সংক্রান্ত শান্তিপূর্ণ সম্মেলনে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের যে কোন চুক্তিকে সমর্থনের পাশাপাশি আরব দেশগুলোকে ফিলিস্তিনের অর্থনীতি উন্নয়নে পুঁজি বিনিয়োগের তাগিদ দিয়েছে। তাছাড়া, আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ২২ নভেম্বর কায়রোতে মধ্য-প্রাচ্য শান্তিপূর্ণ বৈঠকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন। এক কথায়, সকল পক্ষ মধ্য-প্রাচ্য শান্তিপূর্ণ সম্মেলন ভালোভাবে আয়োজনের জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যদিও উপর্যুক্ত ক্ষেত্রে ইতিবাচক উপাদান রয়েছে, তারপরও বিশ্লেষকগণ মধ্য-প্রাচ্য শান্তিপূর্ণ বৈঠকের ফলাফলের প্রতি সতর্ক দৃষ্টিভংগী পোষণ করছে।
তারা বলেছেন, প্রথমতঃ যৌথ বিবৃতির ব্যাপারে ফিলিস্তিন-ইসরাইল কর্মগ্রুপ ৮ অক্টোবর থেকে কয়েক দফা আলোচনা করেছে। কিন্তু এখনও মতভেদের অবসান হয় নি। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট ১৯ নভেম্বর বলেছেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন অ্যান্যাপলিস সম্মেলনের পর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ ও দু'দেশের পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন মূল সমস্যা নিয়ে বাস্তবতার আলোকে আলোচনা করবে। তার অর্থ হচ্ছে যদি ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সম্মেলনে একটি বিবৃতি দেয় তাহলেও তার মধ্যে বাস্তবতার ছোঁয়া হয়তো বেশি থাকবে না।
দ্বিতীয়তঃ, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর বসতি এলাকার ব্যাপারে দেয়া প্রতিশ্রুতিতে ফিলিস্তিন অসন্তুষ্ট। ফিলিস্তিনের শীর্ষ আলোচনা প্রতিনিধি এরেকাত বলেছেন, যদি ইসরাইল সার্বিকভাবে পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের সকল অধিকৃত ভূ-ভাগে বসতি এলাকা নির্মাণ বন্ধ না করে, সেটিও হবে ওলমার্টের অর্থহীন দৃষ্টিভংগীর বাস্তবায়ন।
তৃতীয়তঃ সৌদী আরবসহ নিকটবর্তী আরব দেশগুলো সম্মেলনে অংশ নেবে কিনা এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। পশ্চিমা কূটনীতিকগণ বলেছেন, যদি এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে সৌদী আরব মধ্য-প্রাচ্য শান্তিপূর্ণ বৈঠকে তার নিম্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠাবে। মধ্য-প্রাচ্য শান্তিপূর্ণ বৈঠকের তাত্পর্যও তখন অনেক কমে যাবে। (খোং চিয়া চিয়া)
|