v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-16 20:54:07    
চীন যোগ্য গ্রামীণ কারিগর প্রশিক্ষণের চেষ্টা করছে

cri
    উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশ একটি কৃষি প্রধান প্রদেশ । কিন্তু এ প্রদেশে যোগ্য গ্রামীণ কারিগরের অভাব ছিল । সুতরাং ২০০৫ সালে এ প্রদেশে এক গ্রাম এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নামে একটি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে । যাতে গ্রামাঞ্চলের জন্য শিক্ষিত ও প্রায়োগিক নতুন কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ।

    এক গ্রাম এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নামে কার্যক্রম অনুযায়ী , যে সব ছাত্রকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে , তারা গ্রামের উন্নয়নে নিয়োজিত থাকবে । সরকার তাদের লেখাপড়ার খরচ বহন করছে । চিলিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , চিলিন বেতার ও টেলিভিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ছাংছুন কৃষি বিদ্যালয় ও ইয়ানপিয়ান কৃষি গবেষণা কেন্দ্রসহ ৫টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে এ কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে । গত ৩ বছরে ৬ হাজারেরও বেশি কৃষকদের ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ।

    জানা গেছে , এ সব ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য উপরোক্ত ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে । ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রায়োগিক দিক থেকে একটি কার্যকর কার্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে । চিলিন প্রাদেশিক কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের উপপ্রধান মা লি চুয়ান বলেন , গ্রামাঞ্চলের বাস্তব চাহিদা মেটানোর জন্য এ সব বিশ্ববিদ্যালয় গ্রামীণ কারিগর প্রশিক্ষণের কথা বিবেচনা করে একটি কার্যক্রম প্রণয়ন করেছে । তিনি বলেন ,

    তাদের পড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছে । এ সব প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের ফসল চাষ এবং পশু ও হাঁস-মুর্গী পালনের জন্য অনুকূল হবে ।

    এ সব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের অনুশীলনের ক্ষমতা সমৃদ্ধ করে দেয়ার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয় । বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মাঝে কৃষি কাজও চর্চা করতে হয় । ফলে বাস্তব অনুশীলনে তাদের লেখাপড়া ও জ্ঞান কার্যকরভাবে কাজে লাগানো হয়েছে । চিলিন প্রদেশের সুং ইউয়ান শহরের দাই ওয়া থানার মিন লে গ্রামকে চিলি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে । এ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা ছাই তে চ্যুন বলেন ,

    গত কয়েক বছরে এ কেন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুশীলনের জন্য বেশি সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে । জ্ঞান চর্চার জন্য প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এ কেন্দ্রে আসে ।

    এ বছরের জুলাই মাসে প্রথম দফা ১৫২৫জন গ্রামীণ ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছে । তারা যার যার জন্মভূমিতে ফিরে কৃষি কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সংবাদদাতা চিলিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন স্নাতকের সাক্ষাত্কার নিয়েছে । তারা গ্রামাঞ্চলে নিজেদের জ্ঞান ও কারিগরি অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ।

    গত দু'বছরে তারা বাস্তব অনুশীলনে অনেক বেশি শিখেছে । সেজন্য তারা খুব প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে । কারণ তারা যা যা শিখেছে , তা কৃষি কাজে লাগানো যাবে ।

    জানা গেছে , এ বছরের স্নাতকদের মধ্যে ৫৮০জন যার যার কারিগরি উদ্ভাবনের প্রযোজ্য বিষয় পেয়েছে । বিভিন্ন স্তরের সরকার তাদের উদ্ভাবনের কাজে বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকার প্রদান করেছে । চিলিন প্রাদেশিক সরকার স্নাতকদের উদ্ভাবনের কাজ সহায়তা করার জন্য তাদের ১ শো উদ্ভাবনের প্রকল্প বাছাই করেছে । নতুন গ্রামাঞ্চলের নির্মাণকাজে স্নাতকরা যাতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারে , সেজন্য বিভিন্ন শহর ও জেলা বৈচিত্র্যময় অগ্রাধিকারমূলক নীতিও প্রণয়ন করেছে । চিলিন প্রদেশের মেইহোখৌ শহরের পার্টি-কমিটির সম্পাদক ওয়াং ওয়েন মিন বলেছেন ,

    কৃষিজাত দ্রব্যের সবুজ সনদের অনুমোদন এবং পশু ও হাঁস-মুর্গী পালনের প্রযুক্তিগত পরামর্শসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তারা স্নাতকদের সাহায্য করবে । জন্মভূমিতে ফিরে আসা ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবনের কাজ সাহায্য করার জন্য শহরের পার্টি-কমিটি প্রতি বছর পার্টি-সদস্যদের চাঁদা থেকে ১ লাখ ইউয়ান নিয়ে ব্যবহার করে থাকে ।

    সরকারের সাহায্যে গ্রামীণ স্নাতকরা বিপুল উদ্দীপনার সঙ্গে কারিগরি উদ্ভাবনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে । ২৬ বছর বয়স্ক কাও চ্যুন মিন চিলিন প্রদেশের নুন আন জেলার গ্রামে ফিরে আসা একজন ছাত্র । চার পাঁচ বছর হল সে ফল খামারের কাজে নিয়োজিত হয়েছে , । জ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নততর করার জন্য ২০০৫ সালে সে চিলিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় । ওখানে সে ফল গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রযুক্তি শিখেছে । এখন সে ফল রোপণের কারিগরি কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ হাজার ইউয়ান আয় করে থাকে । কাও চ্যুন মিনের বাবা কাও স্যু মিন বলেন ,

    ১৯৯৬ সালে তারা ফল গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেছেন । এর পরবর্তী কয়েক বছরে তাদের কাজের বেশি অগ্রগতি হয় নি । ২০০৫ সালে তাদের উদ্যোগে ফল গাছ লাগানো গবেষণাগার গঠিত হয় । গ্রামীণ কারিগর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সাহায্যে তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ।

    কাও চ্যুন মিনের পরিচালনায় গ্রামবাসীরা সচ্ছল হয়েছে । গ্রামবাসী চিং চাং হাই বলেছে , কাও চ্যুন মিনের সাহায্যে সেও ফল গাছ লাগিয়েছে । এ বছর তার আয় চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে । এখন কাও চ্যুন মিনের কাছে ফল গাছ লাগানো বিষয়ক উন্নত মানের অভিজ্ঞতা শেখার জন্য চিলিন প্রদেশ এমন কি হেইলুংচিয়াং প্রদেশের কৃষকরাও তাদের গ্রামে আসেন ।

    বর্তমানে কাও চ্যুন মিনের মতো বিপুলসংখ্যক গ্রামীণ ছাত্রছাত্রী গ্রামে ফিরে এসেছে । তারা গ্রামে কৃষি কাজের নতুন প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছে ।

    গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চালু হওয়ার পর গ্রামীণ কারিগরের সংখ্যা দ্রুতভাবে বেড়েছে । এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিকে সচল করে তোলা হয়েছে , কৃষকরা সচ্ছল হয়েছে এবং কৃষকদের কৃষি কাজের কারিগরি ও নৈপুণ্যও সার্বিকভাবে উন্নত হয়েছে । (লিলি)