v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-16 16:06:56    
মালভূমির ভালবাসা

cri
    দক্ষিণ সিনচিয়াং সামরিক এলাকার সিছুয়েনহো ক্লিনিকের নার্সা ওয়াং রুই অত্যন্ত নম্র স্বভাবের ও মমতাময়ী নারী ।তবে তার মনোবল ইসপাতের মতোদৃঢ় । তিনি নিজের জ্ঞান ও ভালবাসা দিয়ে মাতৃভূমির সীমান্ত প্রহরী সৈন্যদের স্বাস্থ্য রক্ষার কাজ করে যাচ্ছেন । তিনি নানা অসুবিধার মধ্য দিয়ে পায় হেঁটে হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা ঘুরে বেড়ান । তিব্বতের আলি পর্বত এলাকা, সি ছুয়েন নদীর মিষ্টি পানি বা পবিত্র হ্রদের স্বচ্ছতা তার গভীর ও মহত ভালবাসার সাক্ষী ।

    তিব্বতের আলি এলাকা ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত । সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ৪৫০০ মিটারেরও বেশি । এ কারণে তিব্বতের আলি মালভূমি " বিশ্বের ছাদের ছাদ" নামে পরিচিত । আলি মালভূমির শানকাং সীমান্ত এলাকা প্রহরী কোম্পানি সৈন্যবাহিনীর এমন একটি কোম্পানি , যারা সবচেয়ে দূরের সীমান্ত এলাকায় পাহারার কাজে নিয়োজিত । শানকাং কোম্পানির একটি মৌসুমি চৌকি আছে , সেখানে যেতে হলে ৫০০০ মিটার উচু উচ্চতার দাবান এবং বিপদজনক গিরি পথ ও অজস্র বরফের নদী অতিক্রম করতে হয় । আবার কখনো কখনো ঘোড়ার লেজ ধরে উপরে উঠতে হয় । এরকম দুর্গম পথেও একজন দৃঢ়চেতা নারী বারবার দলের সঙ্গে সেখানে যেতেন । তার নাম ওয়াং রুই । গত ৮ বছরে তিনি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক উচুঁ এলাকায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে আসছেন ।

    যখন তিনি সীমান্ত এলাকার একজন সৈনিককে বিয়ে করেন তখন থেকেই ওয়াং রুই ও মালভূমির মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে । তখন তার স্বামী থাও ইয়ু সীমান্ত এলাকা কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন । স্বামীর কাছ থেকে ওয়াং রুই জানলেন , মালভূমির অত্যন্ত জঘন্য বৈরী প্রকৃতি পাহারারত সৈন্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে । ১৯৯৯ সালে চতুর্থ সামরিক মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির মনোবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক হওয়ার পর ওয়াং রুই এ অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন । তিনি স্বেচ্ছায় চরম বৈরী প্রকৃতির খালাখুনলুন মালভূমিতে যাওয়ার আবেদন জানান । খালাখুনলুন মালভূমিতে আসার পর প্রথম দিকে ওয়াং রুই সারা রাত ঘুমাতে পারতেন না । অন্ধকার ও বরফের মতো ঠান্ডা ঘর , বাইরে ঝড়ের মতো বাতাস আর ফোঁটায় ফোঁটায় চোখের পানি মালভূমিতে ওয়াং রুইর প্রথম স্মৃতি। শুধু তাই নয় , মালভূমির আবহাওয়ায় ওয়াং রুইয়ের নখ এবং ঠোঁট কালো হয়ে যায় । মালভূমিতে যে কষ্ট ও অসুবিধা এবং যে সুখ পায় ওয়াং রুই স্বয়ংভাবে অনুভব করতে পেরেছেন ।

    ভ্রাম্যমান চিকিত্সাকে সুযোগে হিসেবে ওয়াং রুই সীমান্ত এলাকা সামরিক অফিসার ও সৈনিকদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন । ওয়াং রুই ২৩বার সামরিক এলাকার সর্বোচ্চ সেনসিয়েন ওয়ান চৌকিতে গিয়েছেন এবং প্রতিবার সেখানে তিনি কমপক্ষে দশ বারো দিন করে থেকেছেন । সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে সেনসিয়েন ওয়ান চৌকির উচ্চতা হল ৫৩৮০ মিটার । যে কোনো লোক সেখানে গেলে মানসিক স্বাস্থ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । ওয়াং রুইও ব্যতিক্রম নন । প্রত্যেক বার গেলে তার মাথা ঘোরে , পা নরম এবং বমি হয় ।

    সীমান্ত এলাকায় পাহারারত সৈন্যিকদের কাছে গিয়ে ওয়াং রুই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে হাজার হাজার তথ্য সংগ্রহ করেন । এই সব তথ্য –উপাত্ত কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই তাকে নিজ হাতে বিশ্লেষণ করতে হয় । মালভূমির আবহাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ওয়াং রুইর মাথা মাঝেমাঝে ব্যথা হয় । যখন তিনি গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতেন তখন প্রহরী সৈন্যরা তাকে ইমেইল করে বিশ্রাম নিতে বলতেন । সৈন্যদের আন্তরিকতা ও যত্নে ওয়াং রুই উষ্ণতা অনুভব করতেন । এথেকে তিনি মনোবল অটুট রাখার সাহস পেতেন । সীমান্ত এলাকায় পাহারারত সেনা কমান্ডারদের সমর্থনে ২০০৫ সালের মার্চ মাসে ওয়াং রুই সৈন্যবাহিনীর জন্য প্রথম" মালভূমির মানসিক উপদেষ্টা ওয়েবসাইট" তৈরী করেন । সীমান্ত এলাকার সামরিক অফিসার ও সৈন্যরা এর মাধ্যমে তার সঙ্গে মত বিনিময় করতে পারেন । গত দু'বছরে তিনি এই সাইটের মাধ্যমে মানসিক সমস্যা সম্পর্কে প্রায় ২০০০ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ।

    ওয়াং রুই খুব আন্তরিক মানুষ । তিনি সবসময় মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন । প্রহরীরা তাকে পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজেদের মনের কথা বলেন । ছোটো ওয়ান নামে একজন সৈন্য ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারান। চাচার হাতে তিনি বড় হন । একমাত্র চাচাটিও মারা যাওয়ার পর ছোটো ওয়ান খুব অসহায় বোধ করতে থাকেন । এ সময় ওয়াং রুই তার কাছে গিয়ে তার খুব সেবা যত্ন নেন । চাচাকে হারানোর পর ওয়াং রুইয়ের মতো স্বজন পেয়ে ছোটো ওয়ান ভীষণ খুশী ও মুগ্ধ হন ।

    একদিন ওয়াং রুই জানতে পারলেন , নতুন সৈন্য কাও পিংয়ের বাবা মার কথা খুব মনে পড়ে এবং বারবার বাড়ি যেতে চান । কাও পিংয়ের গল্প শুনে ওয়াং রুই তার সঙ্গে একবার দেখা করতে চাইলেন । প্রথমে ওয়াং রুইকে দেখে কাওপিং ঘাবড়ে যান । ওয়াং রুই হেসে হেসে নম্রস্বরে তাকে বললেন, তুমি আমাকে ডাক্তার ওয়াং অথবা দিদি ডাকতে পার । দিদি শব্দটি শুনে কাও পিং যেনো সত্যি নিজের দিদিকে দেখতে পেলেন এবং মন খুলে নিজের কথা ওয়াং রুইকে বললেন।

    সীমান্ত প্রহরী সামরিক অফিসার ও সৈন্যরা অসুবিধায় পড়লে ওয়াং রুই মনোযোগের সঙ্গে তাদে কষ্টের কথা শোনেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করেন । রান ছিয়াংশেন হলেন ব্যাটালিয়নের উপপ্রধান । তিনি কখনো ভূলতে পারবেন না যে , ডাক্তার ওয়াং রুইর সাহায্যে তিনি আবার উঠে দাঁড়াতে সক্ষম পেরেছেন । ২০০৪ সালে এক দিন ক্যাডার প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় হঠাত রান ছিয়াংশেনের হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেল এবং মাথা ঘুরে উঠল । তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর আর উঠে দাঁড়াতে পারলেন না । অনেক বড়বড় হাসপাতালও তার রোগের কারণ ধরতে পারল না । সুস্থ হওয়ার আশাই ছেড়ে দিলেন রান ছিয়াংশেন । ওয়াং রুই তার এ অবস্থা শুনেও হতাশ হন নি । তিনি অনেক চিকিত্সার বই পড়ে এবং রান ছিয়াংশেনের অবস্থা বুঝে সে অনুসারে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন । দুমাসের চেষ্টার পর তিনি রান ছিয়াংশেনের রোগের কারণ ধরতে পারলেন এবং চিকিত্সা শুরু করলেন । ওয়াং রুইয়ের চিকিত্সায় রান ছিয়াংশেন আশ্চর্যজনকভাবে আবার উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হলেন । ৮ বছরে ২৯০০ দিন রাত ওয়াং রুই খালাখুনলুন মালভূমির প্রতিটি জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন ।তিনি নিজের জ্ঞান ও ভালবাসা দিয়ে সীমান্ত এলাকার সৈন্যদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করেছেন । তার নিরলস প্রচেষ্টায় সীমান্ত এলাকার সৈন্যদের মানসিক সমস্যার হার অনেক কমে গেছে ।

    এই ৮ বছরে ওয়াং রুই নিজের পরিবারপরিজনের যত্ন একেবারেই নিতে পারেননি । একজন মা ও একজন স্ত্রী হিসেবে ওয়াং রুই নিজের ছেলে ও স্বামীর জন্য কিছুই করতে পারেননি । এজন্য তার খুব দুঃখবোধ আছে । তিনি নিজের সকল ভালবাসা সীমান্ত প্রহরীদেরকে বিলিয়ে দিয়েছেন।