পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ,পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বেনজির ভুট্টো ১৩ নভেম্বর লাহোরেবলেন, প্রয়োজনে পিপলস পার্টি পার্লামেন্ট নির্বাচন প্রতিহত করবে । বেনজিরের এই ঘোষণার কারণে পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরেক দফা উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে । অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও পাকিস্তানের ওপরে চাপ দিন দিন বাড়ছে ।
১.পাকিস্তানের বিরোধী দল মুশাররফকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং সেনাপ্রধানের পদ ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে বেনজির ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন বৃহত্তম বিরোধি দল--পিপিপি এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচীও দিয়েছেন । আর এই কর্মসূচীকে ঘিরে মুশাররফের কঠোর অবস্থানের ফলে জরুরি অবস্থা জারির পরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশটি ।
১৩ নভেম্বর বেনজির ভুট্টো পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে তার অস্থায়ী বাসভবন থেকে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া টেলিফোন সাক্ষাত্কারে বলেন, আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে পিপিপি'র অংশগ্রহণের প্রশ্নই ওঠে না । তিনি বলেন, মুশাররফ প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি নতুন সরকারে কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না । তিনি মুশাররফকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকেও পদত্যাগ করার আহ্বান জানান । এই প্রথমবারের মতো তিনি মুশাররফকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগের কথা বললেন । তিনি বলেন, পিপিপি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী । জানা গেছে, নেওয়াজ শরিফ ইতোমধ্যে বেনজির ভুট্টোর আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং একে একটি ইতিবাচক ও বিরোধি দলের লক্ষ্য বাস্তবায়নের পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন ।
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি মুশাররফের মাথার ওপর রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত চাপ । যুক্তরাষ্ট্র বারবার মুশাররফকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্লামেন্ট নির্বাচন করার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে । এমনকি তারা পাকিস্তানকে সাহায্য করবে কি করবে না তা পুনরায় বিবেচনা করার কথা বলে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকি ঝুলিয়ে রেখেছে । ব্রিটিশ কমনওয়েলথের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষ সম্মেলনে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ২২ নভেম্বরের আগে পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ সেনাপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ না করলে কমনওয়েলথে পাকিস্তানের সদস্যপদ স্থগিত করে দেওয়া হবে ।
এসব চাপ মোকাবিলা করার জন্য মুশাররফ তড়িঘড়ি করে দেশের বিরোধী দলগুলোর সমর্থন আদায় করার জন্য আগামী বছরের ৯ জানুয়ারী সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন । প্রাথমিকভাবে বেনজির ভুট্টো এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এর প্রশংসা করেছিল । এদিকে ১৫ নভেম্বর মুশাররফের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্তমান কার্যমেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে । এ কারণে এর আগেই সম্ভবত পাকিস্তানের হাইকোর্ট সেনাপ্রধানের পদে থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মুশাররফের বিরুদ্ধে যে রিট মামলা হয়েছিল তার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে । যদি সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলে তাহলে তিনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন মেয়াদে শপথ গ্রহণ করবেন । এছাড়া, মুশাররফ জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার সঠিক সময় ঘোষণা না করলেও সম্প্রতি পাকিস্তানের অ্যাটর্নিজেনারেল মালিক কাইয়ুম বলেছেন, জরুরি অবস্থা একমাসের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে ।
জরুরি অবস্থা জারির শুরুতেও বেনজির ভুট্টো ন্যায্য, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মুশাররফকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন । তিনি এখন সে অবস্থান থেকে সরে গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মুশাররফকে সমর্থন না করার আহ্বান এবং তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছেন । ভুট্টোর অবস্থান বদলের ফলে পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে । এ ছাড়া জরুরি অবস্থার মধ্যে বিশেষ করে পিপিপি'র লংমার্চের ওপরে আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও বেনজির ভুট্টো গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় পিপলস পার্টি ২০০ গাড়ির একটি বহর লাহোর থেকে লংমার্চ করে । এটি দেশের অভ্যন্তরে মুশাররফের প্রতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ।
বিশ্লেষজ্ঞরা মনে করেন, বেনজির ভুট্টোর অবস্থান পরিবর্তনে পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে এবং মুশাররফ ও বেনজিরের মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনা আপাতত দূর হয়ে গেছে । কয়েক দিন আগে মুশাররফ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ভবিষ্যতে তিনি কার সঙ্গে সহযোগিতা করবেন তা নির্বাচনের ফলাফল থেকে জানা যাবে ।
(ছাও ইয়ান হুয়া)
|