ঘুম হচ্ছে আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয় । অনেকে কাজের ব্যস্ততা বা নান ধরনের চাপের কারণে রাতে সময়মত প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুমাতে পারেন না । কেউ কেউ বিশ্রামের জন্য দিনের বেলায় দীর্ঘ সময় ধরে বিছানায় শুয়ে থাকেন এবং কিছুটা ঘুমিয়ে নেন । তারা মনে করে, এতে হয়তো রাতের ঘুমের অভাব পুরণ হয়ে যাবে । এটি খুবই ভুল ধারণা । এ ধরনের ঘুম তেমন কোনো কাজে আসে না । সময় মতো ঘুমানোই হলো আসল কথা । বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে এলোমেলো ঘুম এবং নিদ্রাহীনতা স্বাস্থ্যের জন্য যে ক্ষতি বয়ে আনে সে সম্পর্কে কিছু বলবো । চলুন তাহলে শুরু করা যাক আজকের অনুষ্ঠানটি ।
অকেজো ঘুম হল এলোমেলো বা অনিয়মিত ঘুমের আরেকটি নাম । যদি আপনারা টেলিভিশন দেখার সময় অথবা গাড়িতে ঘুমান, রাতে অনেক দেরী করে ঘুমান এবং আলস্য করে ভোরবেলা না জাগেন, তাহলে সেই ঘুমকে ধরতে হবে অকেজো ঘুম । দীর্ঘকাল ধরে এ ধরনের ঘুমের অভ্যেস থাকলে, সহজেই শরীরে কিছু জটিল রোগ বাসা বাঁধতে পারে । এ ধরনের অনিদ্রার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে । আমি কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি । আপনারা মনোযোগ দিয়ে শুনুন ।
১. শরীরে অতিরিক্ত মেদ থাকা
প্রতিদিন খাবার খাওয়ার সময় অনেকেই মনোযোগ দিয়ে এবং পরিমাণ মত খাবার খেয়ে থাকেন । কিন্তু তারপরও তারা অনেক মোটা হয়ে যান । তা খুব সম্ভবত বিশৃঙ্খল ঘুমের কারণে হয়ে থাকে । আর এ ঘটনা ঘটে সম্ভবত অকেজো ঘুমের কারণে । অনিদ্রা, বিষন্নতা এবং অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে কেউ কেউ ঘুমানোর দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেন । ফলে জেগে উঠার পর শরীরে ক্লান্তি, ঝিম লাগা এবং মাথার ঘোরার লক্ষণ দেখা দেয় এবং কোন খাবার খেতেই ইচ্ছে করে না । খাওযার রুচি একদমই থাকে না । অনিদ্রায় ভোগা লোকেরা মাঝে মাঝে অনেক খাবার খেতে পারে আবার অতি ক্লান্তির সময় কিছুই খেতে পারে না । দীর্ঘকাল ধরে এমন চলতে থাকলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ বেড়ে যাবার আশংকাই বেশি ।
২. বিষন্নতা
সবসময় মন খারাপ, ক্লান্তি এবং সহজে রেগে যাওয়া হলো বিষন্নতার অন্যতম লক্ষণ । অকেজো ঘুমের পর মন খারাপ কিংবা কাজের মনোযোগহীনতা দেখা দিতে পারে । কাজের চাপ বেড়ে গেলে, রাতে অনেক দেরীতে ঘুমানোর অভ্যাস এবং দীর্ঘকাল ধরে অনিদ্রার কারণে সহজে বিষন্নতা রোগ দেখা দিতে পারে । তখন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যই উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এমনকি এতে আত্মহননের প্রবণতা দেখা দিতে পারে, যা অত্যন্ত বিপদজনক ।
৩. নাক ডাকা
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় নাক ডাকলে কেউ কেউ মনে করেন খুব মধুর ঘুম হয় । আসলে নাক ডাকলে মোটেও গভীর ঘুম হয় না । এছাড়া দীর্ঘকাল ধরে রাতে নাক ডাকার জন্য গলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি দিনেরবেলায় মাথাব্যথা হতে পারে মনোযোগ কম যেতে পারে । কর্মক্ষেত্রে যে কোনো জটিল পরিস্থিতিতে সহজে অন্যদের সঙ্গে রাগারাগি করার ঘটনা ঘটতে পারে । আর এ সবের উত্স হচ্ছে অকেজো ঘুম ।
৪. চুল পড়া
প্রতিদিনই আমাদের কিছু না কিছু চুল পড়ে যায় । কিন্তু যদি অতি মানায় চুল পড়তে থাকে ,তাহলে কম সময়ের মধ্যে মাথায় টাক পড়ে যাবে । গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, ঘুমের সময়ের সঙ্গে চুল পড়ার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ঘুমের গুণগতমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে । যারা অকেজো ঘুম বেশি ঘুমায় তাদেরই চুল পড়ে যাওয়ার আশংকা বেশি থাকে ।
বন্ধুরা, এতক্ষণ আমি আপনাদেরকে এলেমেলো বা অকেজো ঘুমের কারণে স্বাস্থ্য হানির কথা জানালাম । আশা করি এ থেকে সবাই বুঝতে পেরেছেন উত্কৃষ্ট ঘুম আপনাদের স্বাস্থ্যের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ । আশা করি, যারা বেশি বেশি চাপের মধ্যে থাকেন তারা ভালভাবে নিজেদের ঘুমের সময়টা সমন্বয় করে নিয়ে নিয়মিত ঘুমাবেন এবং স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখবেন ।
|