পিকিং অপেরা চীনের সংস্কৃতির অন্যতম ও সবচেয়ে উত্কৃষ্ট অংশ। পিকিং অপেরার সুদীর্ঘ ইতিহাস ও সুগভীর সাংস্কৃতিক ভিত্তি রয়েছে । তবে আধুনিক সমাজে ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরা দশর্কদের উপভোগ্য ও অভ্যাসের সঙ্গে খাপ খাওয়ার একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । এ সমস্যা সমাধান হলে আজকের দশর্করাও ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরা থেকে চীনের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যকে অনুভব করতে পারেন । পেইচিং অপেরা বিদ্যালয়ের পিকিং অপেরা শিল্পীরা এ ক্ষেত্রে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ।
' চিং ইয়ু নু ' এক ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরা । পিকিং অপেরা মহলের শিল্পীরা ও পিকিং অপেরা অনুরাগীরা এটাকে পিকিং অপেরার অন্যতম ক্লাসিকাল অপেরা বলে অভিহিত করেন । এ অপেরার অন্যতম দৃশ্যের নাম হলো বিবেকহীন স্বামীকে মার দেয়া। এ অপেরায় প্রধান চরিত্র , বিবেকহীন স্বামীর স্ত্রী-- সাহসী ও বুদ্ধিমতী চিং ইয়ু নুর অভিনয় চমত্কার ।
পিকিং অপেরা ' চিং ইয়ু নুর ' কাহিনী এমনিঃ প্রধান চরিত্র চিং ইয়ু নু হলো প্রাচীনকালের একটি ভিখারী দলের প্রধানের মেয়ে । মেয়েটি যেমন বুদ্ধিমতী তেমনী সাহসী। শীতকালের একদিন চিং ইয়ু নু খিদেয় ও শীতে জর্জরিত ছেলে মোচিকে বাঁচালেন । ছেলেটি রাজকীয় পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্যে এলো । মো চি একটি সুদর্শন ছেলে । তাই চিন ইয়ু নু তাকে সাহায্য করলেন এবং রাজকীয় পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য তাকে প্রয়োজনীয় সব দিক থেকে সাহায্য দিলেন । মোচি রাজকীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজ সরকারের কর্মকর্তা হলেন । কিন্তু বড় লোক হওয়ার পর মোচি চিং ইয়ু নুকে তুচ্ছ করতে শুরু করেন । চিং ইয়ু নু এক ভিখারী দলের মালিকের মেয়ে বলে মোচি তাকে বিয়ে করতে চাইল না এবং তাকে হত্যা করার জন্য নদীতে ফেলে দিল ।তিনি মনে করেন চিং ইয়ু নু নদীতে পড়ে মরে গেল , তাই অভিজাত পরিবারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করার চেষ্টা করল । কিছু দিন পর মোচি অভিজাত পরিবারের কর্তা লিং চাচার মেয়েকে বিয়ে করতে স্থির করল । সে ভাবতেও পারে না যে চিং ইয়ু নু মরে নি । লিং পরিবারের লোকেরা নদীতে পড়া চিং ইয়ু নুকে বাঁচালেন । লিং চাচা চিং ইয়ু নুকে খুব আদর করেন এবং তাকে নিজের পোষ্য মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি মোচির অসত আচরণ জেনে তাকে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । কিছু দিন পর লিং চাচা মোচিকে নিজের পোষ্য মেয়েকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিলেন । এ প্রস্তাবের জন্য মোচি খুব খুশী । কিন্তু বিয়ের প্রথম রাত্রে মোচি চিং চাচার পরিবারের ভৃত্যদের হাতে মার খেল । অবশেষে চিং ইয়ু নু মোচির সামনে হাজির হল । চিং ইয়ু নুকে দেখে মোচি বিশ্বাস করতে পারে না যে মেয়েটি এখনও জীবিত আছে। সে মনে করে ভুতের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে । লিং চাচা ও চিং ইয়ু নু দুজন মিলে মোচির অসত আচরণের নিন্দা করলো । মোচি শেষে নিজের অপরাধ স্বীকার করল এবং চিং ইয়ু নুকে বিয়ে করল ।
ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরায় চিং ইয়ু নু ছিল এক নরম ও দুর্বল নারী চরিত্র । তার উপর মোচির অন্যায় আচরণ নিজের ভাগ্য বলে মনে করত । পিকিং অপেরা শিল্পী সুই ছুই চিং ইয়ু নুর চরিত্র অভিনয়ের সময় নিজের আবেগ ও উপলব্ধিকে মিশিয়েছেন । তিনি মনে করেন চিং ইয়ু নু একটি সাহসী নারী চরিত্র । তার গায়ে সাহসের সঙ্গে অসত আচরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উপাদান আছে। তাই সুই ছুই এই ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরার কিছু পরিবর্তন করেন । এ সম্পর্কে সুই ছুই বলেছেন , অপেরার কাহিনী সংশোধনের পর দশর্করা সংত্তষ্ট । তারা বলেন , মোচির মতো অসত ব্যক্তির যথোচিত শাস্তি পাওয়াই উচিত । কাহিনী যুক্তিযুক্ত সংশোধনের পর দশর্করা একজন সাহসী , বুদ্ধিমতী ও সুন্দীর নারী চরিত্র পছন্দ করেন এবং এই নারী চরিত্রের দৃঢতা ও আত্মমর্যাদা রক্ষার নিরলস প্রয়াসের গভীর মূল্যায়ন করেন ।
দশর্কদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পেইচিং অপেরা বিদ্যালয়ের শিল্পীরা সৃজনশীলভাবে অপেরা বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম থিয়েটারের মঞ্চে স্থানান্তরিত করারও চেষ্টা করেছেন । বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পিকিং অপেরা শেখার প্রক্রিয়া দশর্করা দেখতে পারেন । পেইচিং অপেরা বিদ্যালয়ের প্রধান সুন ইয়ু মিন বলেছেন , আমরা বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে পিকিং অপেরার গানের ছন্দ আওড়াতে আওড়াতে ছাত্রদের শিখাই । আমরা থিয়েটারের মঞ্চেও ছাত্রছাত্রীদের অভিনয়ের সময় অপেরা গানের ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করি। এতে ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারবে কোথায় কি করতে হয় । নীচের দশর্করা এই ধরনের ট্রেনিং উপভোগ করতে আগ্রহী । শিল্পীরা এই ধরনের হাতেকলমে শিখা দেয়ার ক্লাস উপভোগ করতে বিদেশী অনুরাগীদের অংশ নিতেও আমন্ত্রণ জানায় । বিদেশী বন্ধুরা বলেছেন , চীনের ঐহিত্যিক সংস্কৃতি ও শিল্পকলা উপলব্ধি করার জন্য এটা একটা ভালো উপায় । ঠিক যেমন বিদেশী পর্যটকদের চীনের রান্নার বৈশিষ্ট্য দেখানোর জন্য আমরা বিদেশী পর্যটকদের রান্নাঘরে নিয়ে যাই । এতে পর্যটকরা চীনের রান্নার পদ্ধতি ও সুস্বাদু খাবার তৈরীর গোটা প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে জানতে পারেন । এতে বিশ্ববিখ্যাত চীনা খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ অনেক বাড়ে । এ ধরনের পদ্ধতি ফ্রান্স , স্পেন , ইতালি , গ্রীস ও বেলজিয়ামের থিয়েটারেও ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেখানকার দশর্কদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফ্রান্সের একজন মঞ্চ নাটকের পরিচালক বলেছেন , এ পদ্ধতি চীনের ঐতিহ্যিক শিল্পকলা ও সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করার একটি সোনার চাবি ।
এ ছাড়া চীনের ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরা আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য শিল্পীরা অন্য অপেরার অভিনয় শৈলী পিকিং অপেরায় ব্যবহারের চেষ্টা করছেন । যেমন তারা মনে করেন , মধ্য চীনের সাংসি প্রদেশের অপেরা চিং অপেরায় লম্বা হাতা দোলানোর অভিনয় সুন্দর , তাই তারা এই পদ্ধতি পিকিং অপেরায় কাজে লাগিয়ে দশর্কদের সাধুবাদ পেয়েছেন ।
চীনের তিন শ'টিরও বেশি ঐতিহ্যিক অপেরার মধ্যে পিকিং অপেরার ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘতম । দু শ' বছরের ইতিহাস সম্পন্ন পিকিং অপেরার এক হাজারের বেশি ঐতিহ্যিক মঞ্চ অনুষ্ঠান পরিকেশিত হয়েছে।
|