v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-13 17:04:29    
শিলিনকুওলা তৃণভূমিতে মর্ঙ্গোলীয় জাতির নারীরা

cri
    আজ এ অনুষ্ঠানে চীনের অন্তর্মঙ্গোলিয়ার উত্তরাংশের শিলিনকুওলা তৃণভূমিতে বসবাসকারী নারীদের সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    থুয়া শিলিনকুওলা তৃণভূমির একজন সাধারণ মঙ্গোলীয় মহিলা । তার বয়স ৩০ বছর । তার চেহারা দেখতে তৃণভূমিতে বসবাসকারী নারীদের অসাধারণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তাদের গায়ের রঙ লাল । তিনি রোজ গৃহস্থ-জীবন ও গৃহাশ্রমে ব্যস্ত থাকেন।

    তিনি প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠেনে তার পর তিনি পরিবার পরিজনের জন্য চীজ তৈরী শুরু করেন । দিনের বেলায় তিনি প্রতি দু'ঘন্টায় একবার করে ঘোড়ার দুধ সংগ্রহ করেন । দিনে মোট ছ'বার ।

    বিয়ে করার আগেই থুয়া এ সব গৃহকর্মে অভ্যস্ত হয়েছেন । এখন তিনি রোজ ছ' বছর বয়সী ছেলের দেখাশুনা করেন । তিনি দিনের পর দিন পরিবার  পরিজনের জন্য পরিশ্রম করে থাকেন ।

    তৃণভূমিতে বসবাসকারী মঙ্গোলীয় নারীদের মধ্যে অনেকেই থুয়ার মতো বাসার বাইরে বেরিয়ে আসে না । কিন্তু স্থানীয় অর্থনৈতিক বিকাশ ও জনসাধারণের সাংস্কৃতিক মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি অধিক থেকে অধিকতর নারীরা পশু পালন অঞ্চলের কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছে । তাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যান্য ক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জন করেছে । শিলিনকুলা জেলায় দু'জন মঙ্গোলীয় মহিলা এরতেনপাওলিকে গ্রামের কর্মকর্তায় পরিণত হয়েছেন ।

    এরতেনপাওলিকে গ্রামের প্রধানের নাম এরতেনকেলালা । এ গ্রামের সাবেক প্রধান এরতেনকেলালার স্বামী । গ্রামের গত নির্বাচনে গোআমবাসীরা স্বামীর পরিবর্তে এরতেনকেলালাকে নির্বাচন করেছেন ।

এরতেনকেলালার বাড়িতে মোট ৫ জন সদস্য আছেন । তিনি ও তার স্বামী ছাড়া বাড়িতে শ্বশুর ও শাশুড়ী এবং আড়াই বছর বয়স্ক একটি ছেলে আছে । পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুসারে তার পরিবারকে ৬ শো হেক্টর তৃণভূমি বন্টন করা হয়েছে । তিনি বলেন ,

১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে গ্রামের গবাদি পশু কৃষক পরিবারগুলোকে বন্টন করা হতো । ১৯৯১ সাল থেকে কৃষক পরিবারগুলোকে বন্টন করা হয় তৃণভূমি ।

তৃণভূমির ঘাস ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এ অঞ্চলের পশু পালকদের আয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত । গরু ও ছাগলের পর্যাপ্ত ঘাস উত্পাদনের জন্য এরতেনকেলালা তার পারিবারিক পশু খামারকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করেছে । ভিন্ন ঋতু , ঘাস ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনুসারে ভিন্ন অংশে থাকা ও পশু পালনের ব্যবস্থা করা হয় । এরতেনকেলালা ও তার পরিবার পরিজন পশু পালনের জায়গা পরিবর্তনের জন্যও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যায় ।

    এরতেনপাওলিকে গ্রামে তৃণভূমি ব্যবহারের ব্যাপারে দায়িত্ব-বন্টন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে । এখানকার পশু পালকরা ন্যায্য ব্যবস্থাপনা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু পালনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করছে । ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । গ্রামের প্রধান এরতেনকেলালা বলেন ,

    আয় বন্টনের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন হয়েছে । প্রথম দিকে সকল আয় থেকে গ্রামের পশু পালকদের বেতন দেয়া হতো । এখন পশু পালনে দায়িত্ব-বন্টন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে । আয় আছে এবং কত আছে , এর সব কিছুই পশু পালকদের পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করা দরকার ।

    এরতেনকেলালা ও তার পরিবার পরিজন ৪ শোরও বেশি ছাগল ও দু'শোরও বেশি গরু পালন করছে । তারা ছাগল ছানা ও লোম বিক্রি করে । সেজন্য তারা প্রতি বছর ১ লাখ ইউয়ানের মতো আয় করে । এ ধরনের আয় স্থানীয় মধ্যবিত্ত মানুষের মতো ।

    গ্রামের পরিচালক হিসেবে এরতেনকেলালা নিত্য প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত আছেন । এ ছাড়াও দারিদ্র্যমোচনের জন্য তিনি গ্রামের দুই গরীব কৃষক পরিবারকেও সাহায্য করছেন । তিনি বলেন ,

    দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য গ্রামের সকল কর্মকর্তাদের যথাক্রমে ১ বা ২ গরীব কৃষক পরিবারকে সাহায্য করতে হচ্ছে । গ্রামের পশু পালনের জন্য এ সব গরীব পরিবারকে তৃণভূমি বন্টন করা হয়েছে । প্রশাসনিক ও অথনৈতিক দিক থেকে ব্যবস্থাপনা জোরদার করা গ্রামের প্রধানের দায়িত্ব । তারা পশু পালকদের কাজ সমন্বয় করার দায়িত্ব পালন করেন ।

    এরতেনপাওলিকে গ্রামের আরেকজন নারী প্রধানের নাম উরেনকেলালা । তার বয়স ৫০ বছরেরও কম। তিনি এ গ্রামের নারী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন । গ্রামের নারী কমিটির কাজকর্ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,

    আগে গ্রামে অধিকাংশ ছাত্র লেখাপড়া করতো না । সুতরাং শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে নারীদের কাছে বেশি প্রচার কাজ করা গ্রামের নেতৃবৃন্দের একটি প্রধান দায়িত্বে পরিণত হয়েছে । এখন গ্রামবাসীদের ধারণা অনেক পরিবর্তন হয়েছে । গ্রামবাসীদের ছেলেমেয়েরা এখন লেখাপড়া করছে । গত দু' বছরে গ্রামের ৩জন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন । উত্পাদন ও জীবনযাপনের ব্যাপারে নারী কমিটি মহিলাদের অনেক সাহায্য করেছে । এখন গ্রামের বেশ কিছু নারী বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু পালন করছে । গ্রামের যে সব পরিবার সচ্ছল হয়েছে , সে সব পরিবারে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।

    উরেনকেলালা আরো বলেন , তৃণভূমির পশু পালন অঞ্চলে নারীরা বিশাল কাজ করে । আগে নারীরা সারা দিন যেমন কৃষি তেমনি গার্হস্থ্য কাজে ব্যস্ত থাকতো । পুরুষরা কাজ কম করতো। কিন্তু আমোদ প্রমোদ করতো পুরুষরাই । এখন পুরুষরাও গার্হস্থ্য কাজ করছে । যখন নাদামো নামক মঙ্গোলীয় জাতির বার্ষিক আড়ম্বরপূর্ণ উত্সব উদযাপিত হয় , তখন নারীরাও বেশ কয়েকটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় । কুস্তিধ , তীর ছোড়া ও ঘোড়দৌঁড়সহ বিভিন্ন ক্রীড়ায় শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদদের মধ্যে অনেকেই এখন হচ্ছেন নারী । এর পাশাপাশি দুগ্ধজাত দ্রব্য তৈরী ও সেলাই প্রতিযোগিতায় নারীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভা আরো ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে ।

    আপনারা এতক্ষণ যা শুনেছেন , তা খ্যাতিমানমঙ্গোলীয় গায়ক পুরেনপায়ার পরিবেশিত 'মা' নামক লোক সঙ্গীত। মঙ্গোলীয় জাতি গান গাওয়া খুব পছন্দ করে । মা নামক গানে বিশ্বে সবচেয়ে আপন মায়ের স্নেহ ও মায়া-মমতার কথা তুলে ধরা হয়েছে ।