চীন সরকার " মেয়েদের পরিচর্যায় ব্যাপক তত্পরতা" চালাছে । অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকভাবে নারীদের সামাজিক অবস্থান উন্নত করাই এর লক্ষ্য। আজকের " বিজ্ঞান ও জীবন" অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো:
১৪ বছর বয়সী ছাত্রী লান সিও ইয়ান কৃষক পরিবারের মেয়ে। তার পরিবারের অবস্থা বেশী ভাল নয় বলে স্কুলে যেতে পারে না। তার বাবা বলেছেন:
" স্কুলের খরচ চালাতে পারি না, আমাদের কাছে বেশি টাকা নেই বলে আমার মেয়ে স্কুলে যেতে পারে না"।
লান সিওইয়ানের মত আরো অনেক শিশু আছে। চীনের " সংবিধান", "বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন", "নারীদের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিতকরণ আইন"সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইনে স্পষ্টভাবে পুরুষের সঙ্গে নারীদের সমানভাবে শিক্ষালাভের অধিকার নির্ধারিত হয়েছে । ২০০১ সালে চীনের স্কুলবয়সী শিশুদের স্কুলে ভর্তির হার ছিল ৯৯.১ শতাংশ আর মেয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তির হার ছিল ৯৯.০১ শতাংশ । ২০০২ সালে সাধারণ মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্রী সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ ২ হাজার,এটা মোট শিক্ষার্থী ৪৬.৭ শতাংশ । উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী সংখ্যা ছিল ৩৯ লক্ষ ৭০ হাজার,যা মোট শিক্ষার্থী ৪৪শতাংশ এবং ৫ বছর আগেকার চেয়ে ৬ শতাংশ বেশী । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা মেয়েদের শিক্ষা লাভের মান অপেক্ষাকৃত উন্নত হয়েছে । নারী-পুরুষের শিক্ষা জীবনের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য কমেছে । ২০০০ সালে চালানো পঞ্চম জাতীয় আদম শুমারি অনুযায়ী চীনের নারীরা গড়ে ৭.০৭ বছর লেখাপড়া করেন ।বয়স্ক নারী-পুরুষের শিক্ষা সময়ের পার্থক্য ১৯৯৫ সালের ১.৪ বছর থেকে ১.০৭ বছরে নেমেছে ।
সরকারের সাহায্যে লান সিয়াও ইয়ান আবার স্কুলে যেতে পারছে , সে বলেছে,
" আমি আবার স্কুলে যেতে পারছি, আমার অনেক খুশী লাগছে! আমি শিক্ষকদেরকে দেখতে পারছি, আবার আমি স্কুলের জীবন ফিরে পেয়েছি!"
চীন পরিবার-পরিকল্পনাকে রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতি হিসেবে কার্যকর করেছে । চীনে যে পরিবার পরিকল্পনা নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে তাতে জনসাধারনের ইচ্ছার সঙ্গে রাষ্ট্রের পরিচালনা সমন্বিত করার পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে । এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনা প্রধান কাজগুলো হলো : কেন্দ্রীয় সরকার আর স্থানীয় সরকার জনসংখ্যার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করা , গুনগতমান উন্নত করা ,লোকসংখ্যা-কাঠামো রূপান্তর আর উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করা এবং যাবতীয় দম্পতির জন্য প্রজনন-স্বাস্থ্য সেবে,প্রসব নিবারণ ও জন্ম-নিয়ন্ত্রণ,শ্রেষ্ঠ সন্তান ধারণও লালনপালন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরামর্শ এবং পরিচালনা ও প্রযুক্তিগত সেবা দান করা। জনসাধারনের ইচ্ছার অর্থ হলো :রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট নীতি ও আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী জন্মদানে সক্ষম দম্পতীরা নিজ নিজ বয়স,স্বাস্থ্য,পেশা আর পারিবারিক আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী দায়িত্বের সঙ্গে পরিকল্পনা অনুসারে সন্তান নেবেন। এ ক্ষেত্রে আরো গর্ভধারন , প্রসব এবং প্রসব নিবারণ ও জন্ম-নিয়ন্ত্রনের উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নেবেন।
চীনের বর্তমান পরিবার পরিকল্পনা নীতির প্রধান প্রধান বিষয়বস্তু হলো : দেরীতে বিয়ে করা ও দেরীতে সন্তান নেওয়া , কম সন্তান এবং শ্রেষ্ঠ সন্তান প্রসব করা , এক দম্পতীর এক সন্তান নেওয়া। গ্রামাঞ্চলে যে সব দম্পতীর বিশেষ অসুবিধা আছে তারা কয়েক বছর পর দ্বিতীয় সন্তান নিতে পারেন। সংখ্যালঘূজাতি অধ্যূষিত এলাকায় নিজ নিজ ইচ্ছা আর যার যার জাতির লোকসংখ্যা, সম্পদ , অর্থনীতি , সংস্কৃতি ও রীতিনীতি অনুযায়ী সাধারনতঃ দুই সন্তান নিতে পারে । কোনো কোনো জায়গায় তিনটি সন্তানও নেওয়া যায়। যে সংখ্যালঘূজাতির লোকসংখ্যা খুব কম তাদের সন্তান নেওয়ার সংখ্যা সীমিত নয়।
চীনে পরিবার পরিকল্পনা নীতি কার্যকর করার পর থেকে ধাপে ধাপে দেরীতে বিয়ে করা আর দেরীতে সন্তান নেওয়া , কম সন্তান ও শ্রেষ্ঠ সন্তান নেওয়া একটি সামাজিক রীতিতে পরিনত হয়েছে । সঙ্গে সঙ্গে পরিবার-পরিকল্পনার ফসল হিসেবে চীনের নারীরা বিয়ের পর ঘনঘন সন্তান ধারন ও প্রসব এবং ভারী পারিবারিক বোঝা থেকে মুক্তি পেয়েছেন ।এতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের মান অনেক দিক থেকে উন্নত হয়েছে ।
বর্তমান চীনে "সংবিধান"-এর ভিত্তিতে নারীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার আইনকে প্রধান অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করে বেসামরিক আইন,ফৌজদারী আইন,নিবাচন আইন,শ্রম আইন,বিবাহ আইন,লোকসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা আইন ,জমির ইজারা আইন সহ নারীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা ও নারী-পুরুষ সমতা ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে "গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের নারীদের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিতকরণ আইন"প্রণয়নের পর চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি নারীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা সংশ্লিষ্ট ১২টি আইন ও ২টি সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করে । যেমন শ্রম আইন, গ্রামকমিটি গঠন আইন, বৃদ্ধদের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিতকরণ আইন, লোকসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা আইন, গ্রামাঞ্চলের জমির ইজারা আইন ইত্যাদি ।
একই সময় চীন নিবাচন আইন, ফৌজদারী আইন, বিবাহ আইন সহ নারীদের অধিকার ও স্বার্থ সম্পর্কিত ৭টি আইন সংশোধন করেছে। রাস্ট্রীয় পরিষদ নারীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা সংশ্লিষ্ট ৭টি প্রশাসনিক আইন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ৯৮টি প্রাসঙ্গিক নিয়মবিধি প্রণয়ন করেছে । প্রতিটি প্রদেশ , স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্র শাসিত মহানগর নারীদের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিতকরণ আইন কাযকর করার পদ্ধতি তৈরী করেছে । নারীদের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিতকরণ আইনের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্যে প্রতিটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অঞ্চল কিছু নীতিগত দলিলও তৈরী করেছে এবং ব্যাপকভাবে প্রচার তত্পরতা চালিয়েছে, যাতে আইন অনুযায়ী নারীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার সচেতনতা ধাপেধাপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
|