৭ নভেম্বর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে গৃহীত এক প্রস্তাবে ৩ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সেনা প্রধান পারভেজ মুশাররফ কর্তৃক জরুরি অবস্থা জারি এবং আপদকালীন সংবিধান চালু করার সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এদিন মুশাররফ বলেন, তিনি ১৪ নভেম্বর পার্লামেন্টের ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। জরুরি অবস্থা জারি সমস্যায় স্থায়ী কোনো সমধান নয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমানে পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালে রয়েছে।
আজ ৫ দিন হলো পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জনগণের জীবনযাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মুশাররফ আশা করেন, জরুরি অবস্থা কার্যকর করে দ্রুত তিনি অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনও আদায় করতে সক্ষম হবেন। তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হলেও আগামী জানুয়ারী মাসে নির্ধারিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচন সময় মতো অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এর আগে মুশাররফ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বেনজির ভূট্টোর সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করেন। ৫ অক্টোবর মুশাররফ এই আলোচনার ফলাফল হিসেবে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করেন। এই চুক্তি অনুসারে বেনজির ভূট্টোর বিরুদ্ধে ঝুলে থাকা দুর্নীতির অভিযোগ মওকুফ করার কথা। কিন্তু পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে বেনজির ভূট্টো মুশাররফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং তার উপর চাপ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মুশাররফকে ১৫ নভেম্বর তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে চলতি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেনা প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়া, অতিদ্রুত জরুরী অবস্থা তুলে নেয়া এবং স্থায়ী সংবিধান পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরবর্তী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা এবং জরুরী অবস্থা জারির পর আটক সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আইনজীবীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। তিনি আরো ঘোষণা দেন, মুশাররফ সেনাপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত পিপলস পার্টি ১৩ নভেম্বর থেকে পূর্বাঞ্চলের লাহোর শহর থেকে রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত লংমার্চ করে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আপতত মুশাররফের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে কোনো পরিকল্পনা নেই। অন্যদিকে মুশাররফ বলেন, কেবল বেনজির ভূট্টো বাদে বাকি সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি সমঝোতা বাস্তবায়ন করতে রাজি। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর বাকি সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং এসব সিদ্ধান্ত দেশের বৃহত্তর স্বার্থের পক্ষে অনুকূল হবে।
সমস্যা সমাধানে প্রধান বিকল্প হিসেবে মুশাররফ জরুরী অবস্থা ঘোষণা করায় যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা নাজুক অবস্থায় পড়েছে। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস আলাদা আলাদাভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ৫ নভেম্বর বুশ মুশাররফকে যত শিগ্গির সম্ভব পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। রাইস আশা করেন, মুশাররফ জরুরি অবস্থা তুলে নিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করবেন। গেটস আশা করেন, সন্ত্রাসী আল কায়েদাসহ অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনকে দমনের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বন্ধ হবে না। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য পাকিস্তানের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিরক্ষা বিষয়ক বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক স্থগিত করেছে। এসব মন্তব্য থেকে প্রতিফলিত হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এখনও দোদুল্যমান। যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবতঃ পর্যবেক্ষণ করতে চায় যে, মুশাররফ অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কিনা। যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানকে আরো সক্রিয় করার ব্যাপারে সে দেশের সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্তভাবে কোন অবস্থান নেবে তা পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভবিষ্যত গতি বিধির ওপরে নির্ভর করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া, ই ইউ, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাড়া পাকিস্তানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা আশা করে, পাকিস্তান জরুরি অবস্থা বাতিল করে সংবিধান পুনর্বহাল করবে এবং গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসবে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সম্প্রতি তাঁর মুখপাত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকারকে আটক হওয়া ব্যক্তিদেরকে দ্রুত মুক্তি দেয়া এবং পরিকল্পনা অনুসারে আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর পাকিস্তানের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন হুমকির মুখে পড়েছে। (লিলি)
|