চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সাথে সাথে চীনের চলচ্চিত্র শিল্পও দ্রুত প্রসারের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে । ' ছিনচানসিয়েন ' নামে একটি চলচ্চিত্রে চীনের ছিংহাই প্রদেশের গের্মু থেকে তিব্বতের লাসা পর্যন্ত প্রসারিত ছিংহাই- তিব্বত রেলপথের নির্মাণকে পটভূমি হিসেবে গ্রহণ করে গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে তিন প্রজন্মের রেল শ্রমিকদেরকাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । এ তিন প্রজন্মের রেল শ্রমিকরা সমুদ্র সমতল থেকে চার হাজার মিটার উঁচু মালভূমিতে ছিংহাই-তিব্বত রেল পথ নির্মানের কাজে অংশ নিয়েছেন । এ চলচ্চিত্রে রেল শ্রমিকদের অক্সিজনের অভাব ও কনকনে শীতের মধ্যে মালভূমিতে রেলপথ নির্মানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টার গভীর মূল্যায়ন করা হয়েছে । চলচ্চিত্রটিতে সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখানোর পাশাপাশি ভূমিকম্পসহ ভূতাত্তিক দুর্যোগের দৃশ্যও চিত্রিত করা হয়েছে ।
চীনের চলচ্চিত্র মহল প্রতি বছরই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা ও গণ বীরদের ছবি তৈরী করে । সরকারের আর্থিক সাহায্যে নির্মিত এ সব ছবির মধ্যে ' ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ' ও যুদ্ধকালীন কাহিনী ছবি ' চান সি তে ' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
কাহিনী ছবি ' ছিং চান সিয়ে '-এর পরিচালক ফোং সিয়াও নিন বলেছেন , আমি লক্ষ্য করেছি , যারা এ চলচ্চিত্র দেখেছেন , তাদের মধ্যে ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে কাঁদে নি ,এমন লোক নেই । আমার চলচ্চিত্র তৈরীর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দর্শকদের মুগ্ধ করা । আমার চলচ্চিত্রের আরেকটি উদ্দেশ্য হল দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা । এ চলচ্চিত্রের কাহিনী একঘেয়ে নয় । এ চলচ্চিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীরা জীবন্তভাবে তিন প্রজন্মের রেল শ্রমিকের কাহিনী চিত্রিত করেছেন । অত্যন্ত প্রতিকুল প্রাকৃতিক অবস্থায় রেলশ্রমিকদের প্রশংসার এ ছবি দেখে দর্শকরা মুগ্ধ না হয়ে পারে না ।
চীন প্রতি বছর তিন শ'টি চলচ্চিত্র তৈরী করে । সরকারের আর্থিক সাহায্যে তৈরী চলচ্চিত্র ছাড়াও বেসরকারী স্টুডিও ও বিদেশের চলচ্চিত্র কর্মীরাও এ কাজে অংশ নিয়েছেন । চীনের চলচ্চিত্র প্রচার কোম্পানির প্রধান ইয়াং পু থিন বলেছেন , নতুন সিনেমা ঘরের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে । চলচ্চিত্র তৈরী ও প্রদর্শনে ডিজিটাল প্রযুক্তি চীনের চলচ্চিত্র শিল্প প্রসারের নতুন চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে । বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে চলচ্চিত্রের বাজার উন্মোচনে নতুন প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে । চলচ্চিত্র শিল্প প্রসারে বেসরকারী স্টুডিও ও ও বিদেশী চলচ্চিত্র কর্মীরা বেশ তত্পর রয়েছে । সরকারও চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রসারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে । নতুন স্টুডিও প্রতিষ্ঠা , নতুন সরঞ্জাম কেনা ও নতুন প্রযুক্তি আমদানির জন্য সরকার বিপুল পরিমানের অর্থবরাদ্দ করেছে ।
চীন এ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে চলচ্চিত্র শিল্পের সংস্কার শুরু করে । ফলে চীনে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের জন্ম হয়েছে । তীব্র বাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে চীনের বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র পরিচালক সুনাম পেয়েছে । পরিচালক চান ই মৌ ও ফোং সিয়াও কানের তৈরী চলচ্চিত্রগুলো দেশে ও বিদেশের দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে । পরিচালক চান ই মৌয়ের তৈরী ছায়াছবি ' ইং সুউন ' , ' সি মিয়েন মাই ফু' ও ' মান ছেন চিং তাই হুয়ান চিন চিয়া ' বিদেশে চীনা চলচ্চিত্রের বাজার উন্মুক্ত করেছে এবং চীনা চলচ্চিত্রের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে । পরিচালক ফোং সিয়াও কান প্রতি বছর চীনের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সবের আগে তার তৈরী প্রদর্শন করেন । বসন্ত উত্সবের সময় ফোং সিয়াও কানের নির্মিত চলচ্চিত্র ' চিয়াফান ইফান' , ' তা উয়ান ' , ' থিয়েন সিয়া উ চেই ' ও ' ইয়েইয়েন ' চীনের দর্শকদের প্রিয় ছবি । এ সব চলচ্চিত্রের বিনিয়োগকারীরা সিনেমা ঘরগুলোর টিকিট বিক্রি থেকে প্রচুর মুনাফা পেয়েছেন ।
চীনের চলচ্চিত্র মহল মনে করে , চীনে চলচ্চিত্র শিল্পের দ্রুত প্রসার ধরে রাখার জন্য আরো বেশি যোগ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বর্তমানে বেশ কয়েকজন তরুণ পরিচালকের তৈরী ছবি সুনাম অর্জন করেছে । তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালক নিন হাওয়ের তৈরী ছবি ' ফেন খুয়ান দে শিথৌ' বিনিয়োগ খুব কম , কিন্তু সিনেমা হলগুলোর মুনাফা বেশি। পরিচালক নিন হাও এ ছবির জন্য বিখ্যাত হয়েছেন । এ ছবি শুধু দেশের দর্শকরাই পছন্দ করেন , তা' নয় , যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক উইলমার আন্দেরসোন বলেছেন , আমি নিন হাওয়ের তৈরী ছবি দেখে অবাক হয়েছি । কয়েক বছর আগেই আমি তার কথা শুনেছি । তিনি ভিন্ন স্টাইলের ছবি তৈরী করতে পারেন । ' ফেন খুয়ান দে শি থৌ' ছবির মেলোড্রামা ভালো , আমি তার চলচ্চিত্র পছন্দ করি ।
চীনের চলচ্চিত্র বাজার বহুমুখী পথে বিকশিত হচ্ছে । তবে এতে কিছু সমস্যাও রয়েছে । যেমন কয়েকজন নামকরা পরিচালক সহজেই বিনিয়োগ পান , ফলে তারা খুব ব্যস্ত , একটার পর একটা চলচ্চিত্র তৈরী করছেন । কিন্তু তরুণ পরিচালকরা চলচ্চিত্র তৈরী করতে আগ্রহী , তবে বিনিয়োগ যোগাড় করা তাদের জন্য খুব কঠিন । চীনের চলচ্চিত্র বৈদেশিক প্রচার কোম্পানির প্রধান ইয়ান পু থিন বলেছেন , এ কথা বলা যায় যে চীনের চলচ্চিত্র শিল্প দ্রুত উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে । তবে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের ব্যবধান এখনও অনেক বেশি । কাজেই আমাদের চীনের চলচ্চিত্র বাজার আরো উন্মোচনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে ।
যুব পরিচালকদের সাহায্য করার জন্য চীনের চলচ্চিত্র গোষ্ঠী তরুণ পরিচালকদের সমর্থন ও সাহায্য শীর্ষকএকটি পরিকল্পনা তৈরী করেছে । ১৫জন যুব পরিচালক এ পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছে । পরিকল্পনা অনুসারে তারা চলচ্চিত্রের নাটক , বিনিয়োগ ও চলচ্চিত্র প্রচার ক্ষেত্রে সাহায্য পাবেন। এবছর ও আগামী বছর তারা ১০ থেকে ১৫টি চলচ্চিত্র তৈরী করবেন । এসব তরুণ পরিচালকরাই চীনের চলচ্চিত্র শিল্প প্রসারের প্রাণশক্তি ।
|