v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-06 10:48:00    
চীনাদের খাওয়া-দাওয়ার পরিবর্তন

cri

    কিছুদিন আগে শুক্রবারের এক বিকেলে চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত ইয়ু ছুয়ান সিলি নামক পাড়ার একটি আবাসিক কেন্দ্র সরগরম হয়ে উঠেছিল । এখানে একটি চিত্তাকর্ষক আলোচনা সভা চলচ্ছিল ।শ্রোতা সংখ্যা বিশ বাইশজন । সবাই এ পাড়ার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা । তাদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠের বয়স ৫৩ বছর আর সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধের বয়স ৮১ বছর । পা

ড়া হাসপাতালের চিকিত্সক হান রুই তাদের জন্যে সুষম খাবার সম্পর্কে ব্যাখ্যা করচ্ছিলেন । তিনি বলেন ,

    প্রতিদিন আমাদের খাবারের মধ্যে অ্যাসিড ও সোডার সমন্বয় থাকতে হবে । সংক্ষেপে বলতে গেলে এক লোকমা মাংস খেলে ৪ থেকে ৭ লোকমা শাকসব্জি খেতে হবে । ৪ লোকমার চেয়ে কম শাকসব্জি খেলে চলবে না ।

    আজকের চীনে এ রকম আলোচনা সভা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । এখন চীনারা পেট ভরে খাওয়ার পরিবর্তে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়ার ওপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন । ইয়ুছুয়ান সিলি নামক পাড়ার অধিবাসী মাদাম চাও কুই লানের বক্তব্য থেকে পুষ্টি শিক্ষার ব্যাপারে চীনাদের গভীর আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে । তিনি বলেন ,

    এ ধরণের আলোচনা সভাকে আমি খুব পছন্দ করি । শোনার পর আমি অনেক শিক্ষা কাজে লাগাতে পারি । আমাদের অনেক চিন্তাধারা ও ধারণা সেকেলে হয়ে গেছে । অতীতে আমরা কেবল পেট ভরে খেতে জানতাম । এখনকার নতুন সামাজিক অবস্থায় আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে এবং উন্নত মানের জীবনযাপন করতে হবে , যাতে আমাদের শেষ জীবনও সুখের হয় ।

    শুধু বুড়ো লোক চাও কুই লান কেন , এখন চীনে বেশ কিছু তরুণ-তরুণীও খাওয়া-দাওয়ার ভারসাম্যের দিকে মনোযোগী ।

    আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ওয়াং ফু চিং বইয়ের দোকানে গিয়েছিলেন । তিনি দেখতে পেলেন , একটি বিদেশী পুঁজির শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত মা চিয়ান চুং মধ্যাহ্ন বিরতির অবসরে চিকিত্সার জন্যে পথ্যের বই খুঁজছিলেন । আমাদের সংবাদদাতা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন , কেন এ রকম বই কিনতে চান । উত্তরে তিনি বলেন ,

    লেখাপড়ার সময় আমি নিজের শরীরের দিকে তেমন বেশি মনোযোগ দেই নি । তখন মনে করতাম , আমি একেবারে তরুণ মানুষ । শরীরও বেশ সবল ছি। পরে আমি বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করেছি । সেসময় আমার শরীর খারাপ হয়ে গেছে । স্বদেশে ফিরে আসার পর বাবা মা কেবল উপযোগী খাবার খাইয়ে আমার শরীর সবল করে তোলার চেষ্টা করেন । অল্প দিনের মধ্যে এতে সুফল পাওয়া যায় নি । কিন্তু কয়েক মাস পর আমার শরীরে আবার প্রাণশক্তি ফিরে এসেছে । তাই উপযুক্ত খাবার খেয়ে শরীর সবল করে তোলার চেষ্টায় আমি সুফল পেয়েছি । আরো স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্যে আমি এ সম্পর্কে আরো কিছু বই পড়তে চাই ।

    বইয়ের শেলফের সামনে নব-বিবাহিতা সরকারী কর্মচারী শেন ইউয়ান ইউয়ান পথ্যের বই খুঁচছিলেন । তিনিও স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কে নিজের মত প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেন ,

    অতীতে আমি যা ইচ্ছা , তাই খেতাম । যেটা সুস্বাদু লাগতো , সেটা বেশি খেতাম । এখন আমি বুঝতে পেরেছি , বিজ্ঞানসম্মতভাবে খাওয়া-দাওয়া উচিত । এমনি করলে আমার শরীর সুন্দর হবে , পরে আমার সন্তান হলে তার স্বাস্থ্যও ভালো হবে ।

    বস্তুত সেই ১৯৮৮ সালে চীনে জনসাধারণের সামঞ্জস্যপূর্ণ খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়ার লক্ষ্যে " পুষ্টিগত খাওয়া-দাওয়ার দিকনির্দেশনা" নামক একটি পুস্তক প্রকাশিত হয় । তাহলে কেন তখন থেকে প্রায় বিশ বছর পর চীনারা পুষ্টিগত খাওয়া-দাওয়ার ওপর মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন ? এ পুস্তকের অন্যতম লেখক , চীনা পুষ্টি সমিতির মহাসচিব মাদাম চাই সিউ ইং মনে করেন ,

    প্রথমত: গত শতাব্দির আশির দশকের গোড়ার দিকে আমাদের দেশে প্রধানত মানুষের খাওয়া-পরার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছিল । তখন কেউই পুষ্টির দিকে নজর রাখে নি । দ্বিতীয়ত: সেসময় সরকার এ খাতে বেশি বরাদ্দ করতে সক্ষম হয় নি । বিংশ শতাব্দির নব্বইয়ের দশক থেকে এখন পর্যন্ত চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জনসাধারণের পুষ্টিগত অবস্থা সম্পর্কে জরীপ চালাতে শুরু করে । পাশাপাশি জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পর তারাও নিজেদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং পুষ্টি সম্পর্কে আরো বেশি জানার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ।

    সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা পেইচিংয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত লিং নান কিন্ডারগার্টেনেগিয়েছিলেন । তিনি দেখতে পেলেন , কিশোর-কিশোরীরা তখন দুপুরের খাবার খাতে যাচ্ছিল । এ কিন্ডারগার্টেনে ৪জন বিশেষ বাবুর্চী রয়েছেন । তারা প্রতিদিন দেড় থেকে ৬ বছর বয়সের দু শ'রও বেশি শিশুর জন্যে তিন বেলা খাবার ও দু বেলা নাস্তা তৈরি করে থাকেন ।

    সেই দিনের খাদ্য-তালিকায় ছিল ভাত , আলুর সংগে মাংস ও শাকসব্জি । এ কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক লি চি হুয়া আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো বাধ্যতামূলক বিধি জারি না করলেও চীনের সব কিন্ডারগার্টেনে দু বেলা নাস্তাসহ তিন বেলার খাবারের ব্যাপারে কড়াকড়িভাবে " পুষ্টিসম্মত খাওয়া-দাওয়ার দিকনির্দেশনা" মেনে চলা হয় । অথচ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন , বিশেষ বিশেষ সীমাবদ্ধতার দরুণ চীনের অধিকাংশ খাবার হল ও রেস্তোঁরায় তরকারিতে সুষম পুষ্টির অভাব এখনো আছে । চীনা পুষ্টু সমিতির মহাসচিব চাই সিউ ইং বলেন , কিছু বাধ্যতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তন করা দরকার । তিনি বলেন ,

    বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় খাবার হলে পুষ্টি কর্মীদের দারুণ অভাব রয়েছে । সংশ্লিষ্ট বিধি অনুসারে যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদর সংখ্যা এক শ'র ওপর , সেসব প্রতিষ্ঠানে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ থাকা প্রয়োজন । তাছাড়া খাবার হলে কিছু প্রচারপত্রও থাকতে হবে । প্রচারপত্রে জনসাধারণ কেমন করে যুক্তিযুক্তভাবে নানা ধরণের খাবার বেছে নেবে , সে বিষয়ে পরামর্শ থাকা দারকার ।

    আমাদের সংবাদদাতা সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানতে পেরেছেন , কিছুদিন আগে চীনা পুষ্টি সমিতির সহায়তায় চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পুষ্টির উন্নতি সংক্রান্ত বিধি প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছে । এ মন্ত্রণালয় এ বছরের ১ সেপ্টেম্বর ১২১ প্রকল্প জারি করেছে । এ বিধির প্রধান প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে চাই সিউ ইং বলেন ,

    প্রথম ১ হচ্ছে দিনে ১০ হাজারবার পায়ে হাটা । ২ হচ্ছে খাওয়া ও শরীরচর্চার ভারসাম্য বজায় রাখা । দ্বিতীয় ১ হচ্ছে আজীবন সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা ।