আমাদের আজকের ভিন দেশির চোখে অনুষ্ঠানের মুখ্যচরিত্র চীনের সাংহাইয়ে থাকেন । তিনি হলেন বিশ্বের ৫ শো সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানীর অন্যতম আলকাটেল টেলিযোগাযোগ কোম্পানীর চীন শাখার প্রধান । তাঁর নাম ডোমিনিক দ্যা বোইসেস ।
ডোমিনিক সাইকেল চালিয়ে সাংহাইয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন । তিনি সাংহাইকে ভালোবাসেন এবং সবসময় সাংহাইকে প্যারিসের সঙ্গে তুলনা করেন । তিনি চীন ও ইইউ'র বাণিজ্য কমিশনের সাংহাই শাখারও প্রধান । তাঁকে প্রধানের পদে নির্বাচনের কারণ হচ্ছে তিনি সাংহাইয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে আছেন । তিনি সাংহাইকে সবার চেয়ে ভালোভাবে জানেন ।
ডোমিনিক সাংহাইয়ের ভবিষ্যত ব্যাপারে খুব আশাবাদী । তবে প্যারিস থেকে সাংহাইয়ে আসার জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন । ১৯৯৩ সালে ডোমিনিক প্যারিসে আলকাটেলের সদর দপ্তরে উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন । তিনি কোম্পানীর প্রধানকে বার বার তাঁকে সাংহাইয়ে পাঠানোর অনুরোধ করেন । তাঁর অনুরোধে ডোমিনিক বার বার একটি ধারণা ব্যাখ্যা করেছিলেন , তিনি বলেন :
আমার ধারণায় চীন জার্মান ও যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত অর্থনৈতিক গোষ্ঠী হবে । আমার মনে হয় এ দিন খুব তাড়াতাড়ি আসবে ।
প্যারিসে ডোমিনিক বরাবরই বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নের ওপর গবেষণা করতেন । তিনি মনে করেন চীনের নিজের উন্নয়নের সুযোগ অনেক বেশি । ১৯৯৬ সালে কোম্পানী ডোমিনিককে সাংহাইয়ে পাঠায় । তিন বছর অপেক্ষার পর অপশেষে ডোমিনিকের সাংহাইয়ে আসার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় । এর জন্য ডোমিনিক খুব খুশি । সাংহাইয়ে আসার প্রথম দিন ডোমিনিক সাংহাইয়ের রাস্তায় অনেক ক্ষণ ধরে বেড়িয়েছেন । তিনি বলেন :
যদি আমি ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে যান , আপনার অনুভূতি হবে এ দেশের কোনো কিছু আর পরিবর্তন হবে না । আপনার কাছে সব কিছুই একরকম ও একঘেয়ে মনে হবে । তবে আপনি চীনের ভবিষ্যত সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে পারবেন না । প্রতিদিনই চীনের পরিবর্তন হচ্ছে ।
যদিও ডোমিনিক সাংহাইকে খুব পছন্দ করেন এবং এখানে আসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন । তবে প্রথম সাংহাইয়ে আসার পর ডোমিনিকের জন্য সময়টা খুব কঠিন ছিল । ডোমিনিকের আলকাটেল কোম্পানী হল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ টেলিযোগাযোগ কোম্পানী । চীনের প্রধান প্রধান টেলিযোগাযোগ কোম্পানী সবই তার ক্রেতা । লোকজন যে ব্রড ব্যান্ড , সফট ওয়ার ব্যবহার করে , তার অধিকাংশই এ কোম্পানীর উত্পাদিত । ১৯৯৭ সালে ডোমিনিক ও তার কয়েকজন অংশীদার সাংহাইয়ের ফু তুং জেলায় আসেন । তখন ফু তুং-এ কোন উচু ভবন দেখা যেতোনা । সে সময় নোকিয়াসহ বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ কোম্পানী সক্রিয়ভাবে চীনের বাজারে প্রবেশ করেছে । তবে আলকাটেল চীনের টেলিযোগাযোগ শিল্পের ক্ষেত্রে একটি নতুন সদস্য । ডোমিনিক বলেন :
তখন আমাদের সবার জন্য খুব কঠিন সময় ছিল । কারণ অন্যরা আপনার কোম্পানী সম্পর্কে জানে না , ক্রেতারাও আপনাকে চেনে না । আপনার কোম্পানী , আপনার সামর্থ্য , সব কিছুই অন্যকে জানাতে হচ্ছে ।
চীনের টেলিযোগাযোগ বাজারে প্রবেশের জন্য ডোমিনিক অনেক চেষ্টা করেছেন এবং সে সময় তিনি প্রায় সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকেন । তিনি বলেন :
সপ্তাহের ছুটিতেও ক্রেতাদের সঙ্গে দেখা করতে হয় । সবার কাছ থেকে সহায়ক প্রস্তাব খুঁজতে হয় । কীভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা , কীভাবে আমাদের পণ্যদ্রব্যের দাম ঠিক করা যায় , সব কিছুই ঠিক করতে হয় । আপনি বিশ্রাম নিতে পারেন না ।
তখন তার কাজের গতি খুব ধীর , এ দিকে কোম্পানীর অন্যান্য উচ্চ পদস্থ পরিচালকের মনে সাংহাইয়ে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে কিনা এমন সন্দেহ ছিল । কারণ তারা মনে করেন সাংহাইয়ে প্যারিস বা নিইউয়র্কের মত উচ্চ মানের মানব সম্পদ নেই । ডোমিনিক তাদের কথার সঙ্গে একমত ছিলেন না , তিনি বলেন :
চীন সম্পর্কে অনেক বিদেশির সন্দেহ আছে । আমরা কি সত্যি চীনকে বিশ্বাস করতে পারবো ? চীন কি আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে পারবে ? চীনে উচ্চ মানের মানব সম্পদ আছে ? আমি সবসময় তাদেরকে বলি : যদি আপনি চীনা লোককে বিশ্বাস করেন , তাহলে আপনি তাদের সঙ্গে খুব স্থিতিশীল ও দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করুন ।
ডোমিনিক মনে করেন এখানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কর্মী দল আছে এবং এখানে শ্রেষ্ঠ সহকর্মীও আছে । সাংহাইয়ে আসার প্রায় দু'বছর পর কোম্পানীর কাজ অনেক উন্নত হয়েছে । সুযোগও বেশি হয়েছে ।
এ দশ বছরে চীনের পরিবর্তন সম্পর্কে ডোমিনিক অর্থনীতির কথা বলেন নি , শহরের নির্মাণের কথা বলেন নি , তাঁর মনে এখানকার মানুষের পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি । তিনি বলেন :
মানুষের পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি । তারা আরো আশাব্যঞ্জক হয়েছে । প্রথমে তারা ইউরোপ ও বিদেশের পুঁজি বিনিয়োগের জন্য হুমকি বোধ করে , আস্তে আস্তে তারা বিদেশ থেকে অনেক কিছু শিখেছে । এখন তারা বিদেশের সঙ্গে পরস্পরের সুবিধাগুলো জেনে নেয় । আমাদের কোম্পানীতে চীনারা আরো পরিপক্ব হয়েছে । তারা জনেন যে তারা খুব চমত্কার ।
প্যারিসে কোম্পানীর সদর দপ্তর ডোমিনিককে প্যারিস ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে , তবে ডোমিনিক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন । তা ছাড়া , তিনি কোম্পানীকে এশিয়া ও মহা সাগরীয় অঞ্চলে কোম্পানীর সদর দপ্তর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে সাংহাইয়ে স্থান্তরিত করার প্রস্তাবও দিয়েছেন । তিনি বলেন , তিনি সবসময় সদর দপ্তরের সবাইকে বলেন , সাংহাইয়ে শ্রেষ্ঠ মানব সম্পদ আছে । চীনের বাজার দখল করতে চাইলে এখানে পণ্যদ্রব্য উত্পাদন করতে হবে ।
সাংহাইয়ের রাস্তায় ডোমিনিকের মত এ শহরে থাকা অনেক বিদেশি দেখা যায় । তারা নিজের লক্ষ্য বা স্বপ্নের জন্য সবসময়ই ব্যস্ত থাকেন । আসলে অনেকের লক্ষ্য খুব সহজ , তা হল সাংহাইয়ে উন্নয়ন করা । ডোমিনিক বলেন , বিশ্বে সাংহাইয়ের মত এত দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে এমন শহর নেই । তিনি সাংহাইকে ভালোবাসেন এবং সারা জীবন এখানে থাকতে চান ।
এখন অনেক বিদেশি ডোমিনিকের স্বপ্নের মতই সাংহাইয়ে এসেছেন । সাংহাই তাদেরকে বাণিজ্যিক সুযোগ দিয়েছে , তারাও সাংহাইয়ের উন্নয়নের জন্য অবদান রেখেছেন ।
|