v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-11-21 20:45:41    
চীনা ভাষা আমাকে এক নতুন দরজা খুলেছে

cri

    ২০ বছর বয়সী মাইকেল কোরসিয়া ফ্রান্স ও চীনের মধ্যে বিনিময় চুক্তির অধীনে আসা ছাত্র । তিনি চীনের কূটনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন । চীনকে উপলব্ধি এবং নিজেকে উন্নয়নের পথে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন ।

    মাইকেলের একটি চীনা নাম আছে , তা হল খৌ লে সিয়া , ফ্রান্সে তাঁর চীনা ভাষার শিক্ষক তাকে এ নাম দিয়েছেন । মাইকেল খুব আস্থাশীলভাবে সংবাদদাতাকে তার চীনা নামের অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন । তিনি বলেন , লে এর অর্থ হল খুশি , এ শব্দের আরেকটি অর্থ হল সঙ্গীত । সিয়া এর অর্থ হল বীর । যখন সংবাদদাতা তাকে বলেন , তার চীনা নাম শুনে প্রাচীনকালে চীনের মহা বীরের কথা মনে পড়েছে , মাইকেল খুব খুশি হয়েছে ।

    আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার আগেই মাইকেল চীনা ভাষা শেখা শুরু করেছেন । তখন থেকেই চীনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এর জন্য চীনা ভাষা শেখা শুরু করেন । তিনি বলেন , এ সিদ্ধান্ত তাঁর একজন ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত । যদিও সংবাদদাতা জানেন মাইকেলের মেজার সাব্জেক্ট হল অর্থনীতি , তবুও জানতে চান কেন মাইকেল একজন ব্যবসায়ী হতে ইচ্ছুক । মাইকেল কিছু ক্ষণ চিন্তার পর সতর্ক করে বলেছেন , ফ্রান্সে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই একই বিষয়ে আলোচনা করে , তা হল রাজনীতি । তবে আমি তাদের মত হতে চাই না । যদি আমি খুব সুন্দরভাবে চীনা ভাষা বলতে পারি , তাহলে চীনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনেক সুবিধা হবে , ভবিষ্যতে আমার নিজের ব্যবসার উন্নয়নের জন্যও সহায়ক হবে । ফ্রান্সে চাকরি খোঁজার জন্য চীনা ভাষার সুবিধা আমাকে অনেক সাহায্য করবে ।

    চীনা ভাষা মাইকেলের সামনে একটি নতুন দরজা খুলেছে । এর মাধ্যমে মাইকেল একটি নতুন বিশ্বে প্রবেশ করতে পারবেন । মাইকেল জিবনে প্রথম বারের মত নিজের বাসা ছেড়ে বিদেশে লেখাপড়া করতে এসেছেন । চীনের অনেক বিদেশির মত মাইকেল খুব দ্রুতভাবে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খায়িয়ে নিয়েছেন । তিনি তাঁর প্রিয় চীনা খাবারও খুঁজে পেয়েছেন । চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের খাবার তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। ব্যয়াম বা খেলার মাধ্যমে তাঁর অনেক নতুন চীনা বন্ধুও জুটেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ভাষা শেখার দু'জন অংশীদার আছে । তারা মাইকেলের চীনা ভাষার উন্নয়নের জন্য অনেক সাহায্য করে , এ দিকে মাইকেল একজন চীনা ছাত্রীকে ফরাসী ভাষাও শেখাচ্ছেন । এভাবে তারা পরস্পরের কাছ থেকে অনেক শিখতে পারছেন ।

    বিশ্বিবিদ্যালয়ে মাইকেল লেখাপড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত । তার পুরো সেমিস্টারে প্রতিদিন চীনা ভাষার কোর্স আছে । মাইকেল বলেন , তিনি প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘন্টা চীনা ভাষা শেখেন । খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে মাইকেলের পরিশ্রম তাঁর চীনা ভাষার মানের দ্রুত উন্নয়ন করেছে । যখন সংবাদদাতা মাইকেলকে দেখেন , তিনি চীনা ভাষায় খুব স্পষ্টভাবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন এবং সংক্ষিপ্তভাবে তার শিক্ষার প্রক্ষেপট জানিয়েছেন ।

    প্রথমবার নিজের দেশ ত্যাগ করা মাইকেল প্রতিদিন ফ্রান্সে ফোন করেন । এর জন্য সংবাদদাতা খুব অবাক হয়েছে । কারণ সবার মতে , পশ্চিমা দেশগুলোর তরুণ তরুণীরা স্বাধীন হতে পছন্দ করে , বাসায় থাকতে চায় না এবং তাদের নিজের স্বপ্ন ও জীবন আছে । মাইকেল সংবাদদাতার এ চিন্তাধারা সম্পর্কে বলেন , হ্যাঁ , ঠিক আছে , তারা আসলেই খুব স্বাধীন এবং নিজেই নিজের ভবিষ্যত পরিচালনা করে , তবে তা বাসার কথা মনে না পড়ার অর্থ কি একই ।

    মাইকেল সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , পরিবারের সবাই তার মনে সবসময় প্রথম স্থানে রয়েছে । তার অনেক বন্ধু ১৮ বছর বয়সের পর বাবা মার সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় । তিনি বলেন , আমার একজন বন্ধুরও ১৮ বছর বয়সের পর বাসা ত্যাগ করার পরিকল্পনা ছিল , তবে এখন তার বয়স ২১ বছর হয়েছে , এখনো বাবা মার সঙ্গে আনন্দময় পরিবেশে থাকে । ১৮ বছর বয়স খুব তরুণ সময় , এ বয়সে আমরা সবাই জীবন সম্পর্কে এত অল্প জানি । আসলে আমরা সবসময় বাবা মার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবো। তিনি বলেন , যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে , পরিবার , স্ত্রী ও দেশের মধ্য থেকে বাছাই করলে আমি কি বাছাই করবো , আমি তাহলে পরিবার ও স্ত্রীকে বাছাই করবো , আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি ।

    মাইকেল বলেন , চীনে থাকার সময় তিনি অনুভব করেছেন যে চীনারা সবাই নিজের দেশকে খুব ভালোবাসে । তবে তিনি ফ্রান্সকে পছন্দ করেন । তাহলে তার মনের পছন্দ আর ভালোবাসার কোনো পার্থক্য আছে কি ? এ প্রশ্নের উত্তরে মাইকেল বলেন , মাতৃভূমি হল যে দেশ আপনার জন্ম হয় । তবে যখন আপনি বড় হয়েছেন , তখন আপনি এ দেশ ত্যাগ করে অন্য যে কোনো দেশে যেতে পারবেন । আমি খুব ভাগ্যবান যে আমি ফ্রান্সে জন্ম গ্রহণ করেছি । যদি যুদ্ধ হয় , আমি অবশ্যই দ্বিধা না করে ফ্রান্সকে রক্ষার জন্য অবদান রাখবো , তবে শান্তি সময়ে আমিও অনেক সামাজিক সমস্যা দেখেছি । আমি আশা করি আমার দেশ আরো উন্নত হবে ।

    সাক্ষাত্কারের দুই ঘন্টা সময়ে মাইকেল খুব আন্তরিক এবং সক্রিয়ভাবে সংবাদদাতার প্রশ্নের উত্তর দেন । সংবাদদাতার চোখে তিনি যেন একজন বিশ্ব নাগরিক । বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ন্যয়সংগত মনোভাব আছে । তিনিও সংবাদদাতাকে অনেক নতুন ও সৃজনশীল চিন্তাধারার কথা জানিয়েছেন । চীনকে উপলব্ধি করা এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের যাত্রায় মাইকেল দৃঢ়ভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন । আমরাও আশা করি চীনে তাঁর আরো বেশি অগ্রগতি হবে ।