২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরাম-এর পেইচিং শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের এক বছর পূর্ন হয়েছে। এক বছরের মধ্যে চীন ও আফ্রিকার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহও সফলভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। চীন ও আফ্রিকার নতুন কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি দু'পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা আরো গভীরতর হচ্ছে। এখন শুনুন এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন। পরিবেশন করছি আমি ইয়াং ওয়েই মিং।
২০০৬ সালের ৪ ও ৫ নভেম্বর, চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে "চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরাম পেইচিং শীর্ষ সম্মেলন ঘোষণা" ও "চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরাম-পেইচিং কার্যক্রম পরিকল্পনা ২০০৭-২০০৯" গৃহীত হয়েছে। সম্মেলনে রাজনৈতিক সমতা ও আস্থা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উপকারিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের নতুন চীন-আফ্রিকা কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'পক্ষের সহযোগিতা নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলন শেষে চীন শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত দলিলপত্রের কার্যকরের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে তখনকার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লি চাও শিং আফ্রিকার ৭টি দেশে সফর করেন। পরে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও আফ্রিকার ৮টি দেশ সফর করেন। তিনি আফ্রিকার দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দু'পক্ষের নতুন কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক আরো উন্নয়নের বিষয়ে মত বিনিময় করেছেন এবং ব্যাপক ঐকমত্যে পৌঁছুতে সক্ষম হয়েছেন।
ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও "চীন-আফ্রিকার সহযোগিতা বিশ্বের সুষমতা ত্বরান্বিত করবে" শীর্ষক একটি ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে হু চিন থাও বলেছেন:
"চীন ও আফ্রিকার পরষ্পরের অবস্থান দূরে হলেও দু'দেশের মৈত্রী কিন্তু সুদীর্ঘ দিনের। চীন ও আফ্রিকার জনগণ দীর্ঘ ইতিহাসে এক সুসংবদ্ধ মৈত্রী স্থাপন করেছে। চীনা জনগণ আফ্রিকার জনগণের বন্ধু পেরে হতে খুব গৌরব বোধ করে। অতীতের মত বর্তমান ও ভবিষ্যতেও চীনা জনগণ আফ্রিকার জনগণের ভাল বন্ধু থাকবে। দু'পক্ষ সহযোগিতামূলক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে। দু'পক্ষের মৈত্রী হবে চিরদিনের ।"
চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে চীনের ৩ জন শীর্ষ নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফ্রিকার ২০টি দেশ সফর করেছেন। আফ্রিকার তিনজন প্রেসিডেন্ট, একজন প্রধানমন্ত্রী এবং ৭জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ৯০জনেরও বেশি মন্ত্রী চীন সফর করেছেন। তাছাড়া দু'দেশের মধ্যে সংসদ ও পার্টির বিনিময় হয়েছে খুব বেশি। শীর্ষ সম্মেলনের পর চীনের গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান উ পাং কুও এবং চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের চেয়ারম্যান চিয়া ছিং লিন আফ্রিকা সফর করেছেন। আফ্রিকান দেশের ৬ জন স্পীকার ও ডিপুটি স্পীকার চীন সফর করেছেন।
অক্টোবর মাসের শেষ দিকে মিশরের সংসদের স্পীকার আহমেদ ফাথি সুরুর বলেছেন, মিশর ও চীনের পার্লামেন্টের মধ্যে বিনিময় খুব ঘনিষ্ঠ। মিশর ও চীনের পার্লামেন্টের সহযোগিতা সম্পর্কে তিনি বলেন:
"মিশর ও চীনের জনগণের মধ্যে সমঝোতা আরো গভীর হয়েছে। এই সমঝোতা প্রমাণ করেছে যে দু'দেশের সরকারের মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদার হয়েছে। দু'দেশের জনগণ এই সহযোগিতা নিয়ে খুব সন্তুষ্ট। দু'দেশের পার্লামেন্টও চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সাহায্য করেছে।"
রাজনৈতিক আস্থা হলো চীন ও আফ্রিকার নতুন কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কের একটি বৈশিষ্ট। মিশরে চীনের রাষ্ট্রদূত উ সি কো ২৮ অক্টোবর দু'দেশের নতুন কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কে বলেছেন:
"চীন ও মিশরের কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক খুব কার্যকর। তা দু'দেশের উন্নয়নের জন্য অনুকূল। চীন-মিশর সহযোগিতাকে দ্বিপাক্ষীক সহযোগিতার একটি নমুনা হিসেবে বলা যায়। তা পারস্পরিক আস্থা ও উপকারিতার ভিত্তিতে স্থাপিত।"
আসলে দু'পক্ষের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক সহযোগিতা গভীর হয়েছে তাই নয়। চীন-আফ্রিকান ফোরাম দু'দেশের জন্য বহুমুখি কল্যাণকর কিদসমূহকে বয়ে এনেছে। (ইয়াং ওয়েই মিং)
|