১ নভেম্বর জাপানের চলমান " সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত বিশেষ পদক্ষেপ আইন" -এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে ফুকুদা ইয়াসুও মন্ত্রীসভা " সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত বিশেষ পদক্ষেপ আইন"টি পুনরায় কংগ্রেসে গৃহীত হওয়া সুদূরপরাহত। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শিগেরু ইশিবা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ২ নভেম্বর ভারত মহাসাগর থেকে তার আত্মরক্ষী বাহিনী জাহাজকে সরিয়ে নেয়া সংক্রান্ত আদেশ জারী করবেন। বিশ্লেষকগণ মনে করেন, জাপান ভারত মহাসাগরে যৌথ বাহিনীকে তেল সরবরাহ বন্ধ করলে , তা জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে এবং ফুকুদা ইয়াসুও মন্ত্রীসভার ওপর কূটনৈতিক চাপ পড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এ অচলাবস্থা নিরসনের জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের আপোষমূলক আলোচনা করা হয়তো সম্ভব হবে।
২০০১ সালের অক্টোবর মাসে জাপান কংগ্রেসে এ দু'বছর মেয়াদী " সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত বিশেষ পদক্ষেপ আইন" গৃহীত হয়। এতে আফগান তালিবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের সামরিক অভিযানে সাহায্য করার ব্যাপারে জাপান সরকারকে ক্ষমতা দেয়া হয়। একই সঙ্গে এ আইন অনুযায়ী, জাপান সরকার সেই বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারত মহাসাগরে প্রথমবারের মতো নিজেদের আত্মরক্ষী বাহিনী পাঠায়। যাতে সেখানে টহলরত বহুজাতিক নৌবহরকে জ্বালানি সরবরাহ এবং রীয়্যার সার্ভিস প্রদান সুনিশ্চিত করা যায়। এর মধ্যে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ হচ্ছে তেল গ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। চলতি বছর সিনেটের নির্বাচনে জাপানের লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির সর্বোচ্চ বিরোধী দল--ডেমোক্র্যাটিক পার্টি' " সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত বিশেষ পদক্ষেপ আইন" -এর মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধীতা করে। তারা আত্মরক্ষী বাহিনীকে দেশে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানায়। এ কারণে ফুকুদা ইয়াসুও মন্ত্রীসভা একটি নতুন " সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত বিশেষ পদক্ষেপ আইন" কংগ্রেসে উত্থাপন করেছে। এমন কি, আত্মরক্ষী বাহিনীর কর্ম তত্পরতার ওপর আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তা সত্বেও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এর বিরোধীতা করেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, এ নতুন আইন অচিরে কংগ্রেসে গৃহীত হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। এ জন্য চলমান " সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত বিশেষ পদক্ষেপ আইন"টির মেয়াদউত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত মহাসাগরে আত্মরক্ষী বাহিনীর তেল সরবরাহের আইনগত অধিকার হারিয়ে যাবে এবং জাপানকে সেখান থেকে সরে আসতে হবে।
এ থেকে দেখা যায় যে, জাপানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন এক অচলাবস্থায় নিমজ্জমান। বিশ্লেষকগণ মনে করেন, সিনেট বিরোধী দল--ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । একই সঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কংগ্রেসকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছে। জাপানের আইনবিধি অনুযায়ী, কংগ্রেস হচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী। তবে পর্যালোচনার প্রক্রিয়ায় সিনেট বাধা দিলে সংশ্লিষ্ট নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
৩০ নভেম্বর ফুকুদা ইয়াসুও জাপানের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান ইছিরু ওজাওয়ার সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন। ফুকুদা ইয়াসুও তাকে দেশ বিদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। যাতে যৌথভাবে এ নতুন " সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত বিশেষ পদক্ষেপ আইন" কংগ্রেসে গৃহীত হয় । তবে ওজাওয়া মনে করেন, আত্মরক্ষী বাহিনী পাঠানো হলে, তা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না। এ জন্য তিনি দৃঢ়ভাবে এ নতুন আইনের বিরোধীতা করেন। এর ফলে আলোচনা ভেঙ্গে যায়।
নভেম্বর মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুকুদা ইয়াসুও যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ,এটা হবে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর প্রথম সফর। এ থেকে বোঝা যায় যে, জাপান - মার্কিন মিত্র সম্পর্ক হচ্ছে জাপানের কূটনীতির ভিত্তি। ওয়াং হাইমান
|