v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-31 15:40:46    
বাংলাদেশের বিশেষ অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান আশরাফ-উদ-দৌলার সাক্ষাত্কার

cri
   বিশেষ অলিম্পিক গেমসের সময় সাংহাই এসেছিলেন বাংলাদেশের বিশেষ অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান আশরাফ-উদ-দৌলা। সিআরআই বাংলা বিভাগের প্রতিনিধি ইয়াং ওয়েই মিং সেখানে তার একটি সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন। নীচে তার পূর্ণ বিবরণ দেয়া হলো-

    প্রশ্ন: প্রথমেই আপনি এবারের বিশেষ অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্পর্কে কিছু কথা বলুন

    উত্তর: এবার বিশেষ অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশ থেকে আমরা সর্ব বৃহত্ দল নিয়ে এসেছি। এর আগে এতো বড় দল কখনো বিশেষ অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করেনি। এর কারণ আমরা ১৯৯৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে অংশগ্রহণ করে এসেছি এবং প্রতিটি গেমসেই আমাদের অ্যাথলেটরা দারুণ সাফল্য বয়ে নিয়ে এসেছেন।যার ফলশ্রুতিতে স্পেশাল অলিম্পিকস ইন্টারন্যাশনাল আমাদের কোটা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা আশা করছি যে আমাদের দল বেশ ভালো করবে।

    প্রশ্ন: আপনার যেসব খেলোয়াড়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাদের অবস্থা কেমন ?

    উত্তর: তারা খুব ভালো আছে। হাই স্পিরিটে আছে। একটা ব্যাপারে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। সব স্বাগতিক দেশেই কিছুটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে,আর যেহেতু তারা মানসিক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তাই প্রতিদিন নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের চাঙ্গা রাখতে হয়, আজ পাঁচ ছয় দিন হলো তারা এসেছে অথচ কোন ট্রেনিঙের ব্যবস্থা হয়নি। এটা আমাদেরকে গভীরভাবে চিন্তিত করে তুলেছে ।

    প্রশ্ন: বাংলাদেশের তাদের প্রতিদিনের প্রশিক্ষণ কেমন ছিল ?

    উত্তর: খুবই সুন্দর। সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাবো যে, আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল । ১৭ জন কোচ ৪৯ জন ক্রীড়াবিদকে ৩ মাস ধরে নিবিড় প্রশিক্ষণদিয়েছেন এবং সরকার এ ব্যাপারে বেশ সহযোগিতা করেছে। আমাদের খেলোয়াড়রা সুন্দর ট্রেনিং পেয়েছে , তবে এখন সে ট্রেনিঙে কিছুটা ছেদ পড়েছে , যার জন্য আমি একটু উদ্বিগ্ন।

    প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্পেশাল অলিম্পিক উন্নয়নে আপনার প্রত্যাশা কি ?

    উত্তর: আমাদের আশা তো আকাশছোঁয়া। এখানে অনেক কিছু করার আছে। এখানে যেটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে সেটা হচ্ছে এতোদিন আমাদের কোনো স্পন্সর ছিল না এবার সেই সমস্যা দূর হয়েছে । বড় বেসরকারি কম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং সবচেয়ে বড় টেলিযোগাযোগ কম্পানি গ্রামীণ ফোন আমাদের পার্টনার হয়েছে। গ্রামীণ ফোন এবার আমাদের যাবতীয় খরচ বহন করছে। সরকার থেকে আমরা ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম, সেটা অবশ্য বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের জন্য খরচ হয়ে গেছে।

    প্রশ্ন: এবারের স্পেশাল অলিম্পিক গেমস সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ কি ব্যাপকভাবে জানে ?

    উত্তর: ব্যাপকভাবে না জানলেও মোটামুটি জেনেছে। আমরা যদি এখানে সাংহাইতে ভালো করি তাহলে ব্যাপক প্রচার পাবে। গ্রামীণ ফোন আমাদের পার্টনার হওয়াতে মিডিয়াগুলো খুব উত্সাহিত বোধ করছে এবং প্রচার করছে। আসলে ভালো কাজ করলেই হবে না, ভালো প্রচারও পেতে হবে। আবার প্রচার করার জন্য অর্থ দরকার , অবকাঠামো দরকার , যেটা আমাদের ছিল না। আমি মনে করি গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে পার্টনারশিপের কারণে সেই কাঠামোটা গড়ে উঠবে। আমরা প্রচার করতে পারব এবং অ্যাওয়ারনেস আসবে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটিতে একটা করে স্পেশাল অলিম্পিকের শাখা আমরা খুলব।

    প্রশ্ন: স্পেশাল অলিম্পিকের জন্য বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদ বাছাই করার পদ্ধতি কি ?

    উত্তর: এটা সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে করা হয়। স্পেশাল অলিম্পিকস ইন্টারন্যাশনালের মোটা একটা ডিকশনারির মতো বই আছে- গেমস অরগানাইজিং কমিটি । গেম হওয়ার আগে ন্যাশনাল গেমস হয় , এখানে যে কোনো প্রতিযোগী আসতে পারে , যেমন এবার প্রায় ৪০০ ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছিল। এর পরেরবার হয়তো ১ হাজার অংশ নেবে। সেখান থেকে বাছাই করা হয়। এই সম্পূর্ণ গেমস পরিচালনা,বাছাই, কোচ নিয়োগ সবকিছু করে গেমস অরগানাইজিং কমিটি বা জিওসি। লোকাল জিওসিকে ভার দেওয়া হয় এবং সেখানে বিভিন্ন ফেডারেশন থেকে নাম করা যেসব কোচ আছে তারা অংশ গ্রহণ করেন। এখানে ফেডারেশনের ফিক্সড জাজরাও থাকেন এবং এসওআই সার্টিফায়েড কোচরা থাকেন। তাদের সার্টিফিকেশনে হয়। ওখানে যেহেতু বহু ইভেন্ট থাকে, ডিভিশন থাকে তাই দেখা যায় যে তিনটা ডিভিশন থেকে হয়তো তিনজন প্রথম হয়েছে , কিন্তু আমাদের কোটা মাত্র দুইটা এবং দুজনকেই বাছাই করতে হয়। এরকম অ্যাথলেটিক্সে২৬ ক্যাটাগরিতে যারা প্রথম তাদের নামই ঘোষনা করা হয় -এটাই আন্তর্জাতিকনিয়ম। এভাবেই জিওসির মাধ্যমে আমাদের খেলোয়াড় বাছাই করা হয়।

    প্রশ্ন: প্রতিবন্ধীদের তো আসলে সমাজের অনেকের সমর্থন দরকার। আপনি কি বলেন ?

    উত্তর: নিশ্চয়, নিশ্চয়।তাদেরকে আমরা বিশেষ করে বিকেএসপিতে যারা ছিলেন তাদেরকে সামান্য কিছু সম্মানী দিচ্ছি। তবে তারা মূলত স্বেচ্ছাসেবক। তারা বিভিন্ন সংস্থায় আছেন। এরকম প্রফেশনাল কোচ নিয়োগ করার মতো ক্ষমতা ওদের নেই। তাদের নিজেদেরকেই বুঝতে হবে তাদের বিশেষ প্রয়োজনের কথা। দিজ আর দ্য পিপল অব স্পেশাল নিড। তাদের যে দুঃখ যে অবস্থান তা থেকে তাদেরকে ক্রীড়াবিদ বানানো অনেকটা কয়লা থেকে হীরা বানানোর মতো ঘটনা। এটা একটা দারুণ খাটনির ব্যাপার। সেজন্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার তাগিদ নিজেদের ভেতর থেকে না এলে একটা অসম্ভব ব্যাপার।

    প্রশ্ন: কত বছর ধরে আপনি এই কাজ করছেন ? এ কাজে আপনার অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা কেমন ?

    উত্তর: দারুণ। সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমি একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলের পিতা। আই অ্যাম এ পেরেন্ট। কাজেই এদের দুঃখ দুর্দশার একজন পেরেন্ট যতখানি বুঝতে পারে, নন পেরেন্টের পক্ষে ততখানি সম্ভব নয়। পেরেন্ট অথবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনরাই বুঝতে পারে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই যে এখানে কয়েক হাজার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে আছে এদের সবাইকে আমার নিজের সন্তানের মতো মনে হয়, সবাইকে সমান মনে হয় এবং এদের জন্যে যে কিছু করতে পারছি এটা দারুণ একটা আনন্দের ব্যাপার। দেয়ার মধ্যে যে কত আনন্দ আছে আগে কখনো তা পাইনি। এখন বুঝতে পারছি নেয়ার থেকে দেয়াটা কত আনন্দের। এখানে সবাই হাসি খুশি থাকে। আপনি লক্ষ্য করবেন শরীরটা ৩২ বছরের কিন্তু মনটা ৫/৬ বা ৮ বড়জোর ১০ বছরের শিশুর। তাই একবার একটা মিটিঙে বলেছিলাম, এখানে শিশুর মতো মন নিয়ে আসতে হবে। শিশুর মতো মন , পবিত্র মন, খোলা মন নিয়ে আসলে পরেই এদেরকে সেবা করা যায়। এদের সঙ্গে মিশতে হবে সেভাবেই।

    - আসলে আপনাদের কাজ দেখে আমিও খুব মুগ্ধ হয়েছি। আশা করি আপনাদের কাজ আরও সুষ্ঠু হবে এবং আপনারা সফল হবেন।

    - দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়া আমাদের খুব প্রয়োজন। আমাদের ছেলেমেয়েরা ধারাবাহিকভাবে যারা ভালো করে এসেছে তারা যেন এখান থেকে অনেক স্বর্ণ- রৌপ্যনিয়ে যেতে পারে।

    - অবশেষে শ্রোতা বন্ধুদেরকে কিছু কথা বলবেন ?

    - এখানে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি আমি। আমাদের ৪৯ জন অ্যাথলেট, তার মধ্যে একজনের পা ভেঙে গেছে, দুঃখজনক ব্যাপার, সে আসতে পারেনি। থাকল ৪৮ জন , এর মধ্যে মাত্র ৫ থেকে ৭ জন ফ্যামিলি মেম্বার এসেছে। কিন্তু তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থাই এখানে হয়নি। অন্যান্য দেশে পরিবার গেলে সেই দেশের পরিবারগুলোকে তাদের সঙ্গে রাখে। এটাকে বলে ফ্যামিলি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম। তারা তাদেরকে সাথে নেয়, তাদেরকে আপ্যায়ন করে , তাদের দেখাশুনা করে। এখানে এসে দেখলাম সেরকম কোনো ব্যবস্থাই নেই। এ ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন লাগছে। তাদেরকে বাসায় না রাখুক, তাদেরকে একটু দেখাশুনা করা একটু আপ্যায়ন করা একটু ফাংশনে নিয়ে যাওয়া তাদের সঙ্গে একটু মেলামেশা করা - এটাতো আমরা আশা করতে পারি আপনাদের কাছ থেকে।