লবন হচ্ছে আমাদের খাবারের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান । আমাদেরকে প্রতিদিন তা খেতেই হয় । কিন্তু প্রতিদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবন খেলে সহজেই নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের জন্য পরিমাণ মতো লবন খেয়ে স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পদ্ধতির কথা বলবো । চলুন তাহলে শুরু করা যাক অনুষ্ঠানটি ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন জনপ্রতি লবন খাওয়ার পরিমাণ ৫ গ্রামের মধ্যে হতে হবে । এর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের লবন । যেমন সয়াসস মেনোসোডিয়াম ইত্যাদি ।
সম্প্রতি ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, যত বেশি লবন খাওয়া পড়বে প্রস্রাবের মাধ্যমে তত বেশি ক্যালসিয়াম চলে যাবে । ফলে শরীর ক্যালসিয়াম পাবে খুবই কম । অর্থাত্ লবন কম খেলে শরীরের ক্যালসিয়াম গ্রহণের মাত্রাও বাড়বে । তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, কম লবন খাওয়া হচ্ছে শরীরের ক্যালসিয়াম গ্রহণ বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক সহায়ক ।
লবন খাওয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কি ?
দীর্ঘকাল ধরে যারা বেশি লবন খাচ্ছেন তাদের পক্ষে রাতারাতি দিনে মাত্র ৫ গ্রামে নামিয়ে আনাটা প্রায় অসম্ভব । এ ব্যাপারে সচেতন থাকলে এবং ঠিক ঠিক পদ্ধতিতে প্রতিদিন লবনের মাত্রা কিছুটা কমিয়ে আনতে পারলে কয়েক দিনের মাথায় দেখা যাবে নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে । যেমন প্রতিদিন খাবার রান্না করার আগে ছোট দু'টি বোতলের ক্যাপ ভর্তি করে লবন রেখে তা রান্নায় প্রয়োগ করলে , লবনের পরিমাণ হবে ১০ গ্রামের চেয়ে কম । এরপর ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে কয়েক মাস পর প্রতিদিন ছোট বোতলের এক ক্যাপে নামিয়ে আনলে লবনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪.৫ গ্রাম এবং এটিই আদর্শ মাত্রা ।
তাছাড়া, রান্নায় সয়া সস, ভিনেগার, গাজর, আদা ও রসুন দিয়ে শাক সবজি বা মাংস রান্না করলে নানা ধরনের ঘ্রাণ তৈরি হয় । বিশেষ করে বীনের লবনাক্ত সস দিয়ে খাবার রান্না করা, লবন কম খাওয়ার জন্য বেশ সহায়ক । কারণ ২০ গ্রাম বীন সসের মধ্যে মাত্র ১ গ্রাম লবন থাকে । ভিনেগার, চিনি ও ঝাল উপাদান প্রয়োগ করে খাবারের ঘ্রাণ ও স্বাদ পরিবর্তন করে লবন খাওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনা যেতে পারে । ভিনেগার পছন্দ না হলে লেবু, কমলা ও টম্যাটো কিংবা অন্য কোন টক ফল বা সবজি ব্যবহার করে খাবার আরো সুস্বাদু করা যেতে পারে ।
শাক সবজি রান্না করার সময় লবন কম দেয়া উচিত । বেশি লবন দিলে সবজির ভিটামিন সহজে হারিয়ে যায়, ফলে উপকারিতাও কমে যায় । যদি কাঁচা কাঁচা সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা যায় ,তাহলে বেশি সিদ্ধ করে রান্না করার দরকার নেই ।
মনে রাখা ভালো, খাবার রান্না করার শেষ দিকে লবন দেয়া উচিত্ । এভাবে লবন দিলে শুধু খাবারের বাইরে তা থাকে । এতে লবন খাওয়ার পরিমাণ একটু কম হবে । সুপ খাওয়ার সময় কম লবন বা একেবারেই লবন না দেয়া ভালো । মাশরুম , কালো ছত্রাক বা সামুদ্রিক শ্যাওলায় লবন দেওয়ার দরকারই নেই ।
ইনস্ট্যান্ট নুডল, সসেজসহ লবণাক্ত বিভিন্ন খাবার সবসময় খেলে, প্রতিদিন খাওয়া লবনের পরিমাণ বেশি হবে । কারণ এসব ইনস্ট্যান্ট খাবারের মধ্যে সাধারণ রান্না করা খাবারের তুলনায় লবনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে । রেস্টুরেন্টের খাবারেও বেশি লবন দিয়ে সুস্বাদু করা হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর । এ কারণে নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খাওয়া ভালো নয় ।
শেষ কথা : ছোটবেলা থেকেই কম লবন খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত । শিশুরা ছোটবেলা থেকে বেশি লবণাক্ত খাবার খেলে পরে আর কম লবণাক্ত খাবার খেতে পারে না । এতে শরীরের হাড়ের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
|