v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-30 20:55:02    
নীল রঙের ছাপা কাপড় প্রযুক্তির মাস্টার উ ইউয়ান সিন

cri

    উ ইউয়ান সিন হলেন চীনের ছাপা কাপড়ের রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিবিদ। সারা জীবন তিনি নীল রঙের ছাপা কাপড়ের প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করেছেন। চীনের একমাত্র নীল রঙ ছাপা কাপড়ের যাদুঘর তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন।

    ১৯৬০ সালে উ ইউয়ান সিন চীনের চিয়াং সু প্রদেশের নান থুং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। নান থুং শহর ছোট হলেও প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সুন্দর। তা হলো চীনের তাঁত বস্ত্রের জন্মস্থান। নান থুং শহরের প্রতিটি পরিবারে তাঁত বোনার রীতি আছে। ছোটবেলায় প্রতিদিন উ ইউয়ান সিন মায়ের তাঁত বোনার শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তেন।

    "আমি তাঁত বোনার শব্দ শুনে শুনে বড় হয়েছি। ঘুমানোর আগে মায়ের তাঁত বোনার কাজ শেষ হতো না।আবার ঘুম থেকে উঠার আগে তিনি তাঁত বুনতে শুরু করতেন। দিনের বেলায় তিনি জমিতে কাজ করেন তাই সকালে নাস্তা খাওয়ার সময়টাতে তাঁত বোনেন। আমাদের নিজেদের সব কাপড় মায়ের হাতে তৈরী।"

    উ ইউয়ান সিনের ছোটবেলায় চীনে পরিকল্পনা অর্থনীতি চালু ছিল। তখন মানুষ সরকারের দেয়া নির্ধারিত খাদ্য ও কাপড়ের টিকিট দিয়ে খাবার ও কাপড় কিনতো। গ্রামে জন্ম নেওয়া উ ইউয়ান সিন জানতেন না যে তার সারাটা জীবন জড়িয়ে আছে কাপড়ের সঙ্গে।

    উ ইউয়ান সিনের জন্মস্থানে নীল রংয়ের এক রকমের ঘাস আছে, যা প্রাকৃতিক রঙের কাঁচামাল। স্থানীয় অধিবাসী তাঁতে বোনা সাদা কাপড়ে এই ঘাসের রস দেয়। তারপর কাপড় নীল হয়ে যায়। এই কাপড় ছাপার পদ্ধতি এক হাজার বছর আগে থাং রাজবংশ থেকে চালু হয়।

    ১৭ বছর বয়স্ক উ ইউয়ান সিন স্থানীয় কাপড় ছাপা কারখানায় কাজ করতে শুরু করেন। তিনি একজন সাধারণ কর্মী থেকে মাস্টার হয়েছেন। ২৩ বছর বয়সে তিনি স্কুলে ভর্তি হয়ে এ কাপড় ছাপা বিষয়ে শিখতে শুরু করেন। কাজ থেকে শেখা ব্যবহারিক জ্ঞানের পাশাপাশি বইয়ের তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জন করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবিষ্কার করলেন। নীল ছাপা কাপড়ের ইতিহাস ও বিকাশের ওপরে কোনো বই নেই। স্থানীয় পর্যটন বিভাগ পড়াশোনা শেষে উ ইউয়ান সিনকে তাদের নীল রঙের ছাপা কাপড় গবেষণাগারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করে। তখন থেকে উ ইউয়ান সিন নীল ছাপা কাপড়ের প্রযুক্তিজানা কর্মী খুঁজতে শুরু করেন। তিনি নিজেই একটি ছোট কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। কারখানাটিকে তিনি ছাপা প্রযুক্তির গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজে লাগান।

    উ ইউয়ান সিন এই ছোট কারখানায় মনযোগ দিয়ে তার পরীক্ষা ও গবেষণা চালাতে থাকেন। তখন এই কাপড়ের অধিকাংশ রপ্তানি করা হতো। পরে রপ্তানি পরিমান কমে যায় এবং কারখানাটি দেউলিয়া হয়ে যায়। পরে উ ইউয়ান সিন আরেকটি কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। তবে তিনি তার গবেষণা বন্ধ করতে চান না।

    "আমি এই প্রযুক্তি নিয়ে ২০ বছর ধরে গবেষণা করেছি। সহজেই তা ছেড়ে দিতে চাই না। তাই পরে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে নীল ছাপা কাপড়ের সংগ্রহ ও গবেষণা অব্যাহত রেখেছি। আমি ভাবলাম কিভাবে আমার গবেষণার ফলাফল সংরক্ষণ করবো। তারপর মাথায় এলো যাদুঘর প্রতিষ্ঠার কথা। এই যাদুঘর থেকে মানুষ নীল ছাপা কাপড়ের ইতিহাস জানতে পারবে। আমার সংগ্রহ নমুনা দেখে তারা বুঝবে যে এই প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের জীবনের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ।"

    আইডিয়ারটা ভাল হলেও বাস্তবায়ন কিন্তু খুব কঠিন ছিল। উ ইউয়ান সিনকে নীল ছাপা কাপড়ের একজন বিশেষজ্ঞ বলা যায়, কিন্তু যাদুঘর পরিচালনার তিনি তেমন কিছু জানেন না। তিনি একটি পার্কে অল্প একটু জায়গা ভাড়া করে তার সংগ্রহের প্রদর্শনী করেন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি অনেক চিন্তা ভাবনা করেছেন।

    "তখন আমি শুধু নীল ছাপা কাপড় তৈরী করার কথা চিন্তা করেছি, কিন্তু কিভাবে বেঁচে থাকবো সে চিন্তা করিনি। এখন বুঝেছি যাদুঘর টিকিয়ে রাখতে অর্থ লাগে। তাই পরে আমি দোকান খোলার এবং প্রদর্শনী আয়োজনের চিন্তা করি। যাতে আরো বেশি লোক এই যাদুঘর জিনতে পারে।"

    উ ইউয়ান সিন নানথুং ছাড়া, শাংহাই, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে প্রদর্শনী করেছেন। তার প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনেকে জেনেছেন যে নীল ছাপা কাপড়ের রং খুব সুন্দর, এবং পরলে খুব সুন্দর দেখায়। তিনি এই কাপড়ের সুনাম তৈরীর সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন ডিজাইন করতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে তার কাপড়ের বাজার গড়ে উঠেছে। এভাবেই তিনি তার যাদুঘরের জন্য অর্থ আয় করেন। এখন তার যাদুঘর আরো বড় হয়েছে।

    ১৯৯৭ সালে স্থানীয় পৌর সরকারের সমর্থনে উ ইউয়ান সিনের যাদুঘর পুনর্নির্মিত হয়েছে। আগের ছোট আকার থেকে এখন এর আয়তন ৫০০ বর্গ মিটার। তিনি আরেকটি উত্পাদন কারখানা ও একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন এই যাদুঘরে প্রায় ১০০০ রকমের নীল ছাপা কাপড় ও কাপড়ের ছবি রয়েছে। প্রায় ১ লাখ লোক এতে প্রদর্শনী করেছেন।

    আপনি যদি চিয়াং সু প্রদেশের নান থুং শহরে ভ্রমন করতে চান, স্থানীয় মানুষ নিশ্চই আপনাকে এই যাদুঘর দেখার প্রস্তাব দেবেন। এতে আপনি চীনের ঐতিহ্যিক প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রক্রিয়া দেখতে পারেন। চীনের ঐতিহ্যিক কাপড় দিয়ে তৈরী জিনিস বিদেশের পর্যটকরা খুব পছন্দ করেন। মাদাম চৌ ওয়েই এখান থেকে তার বিদেশী বন্ধুর জন্য অনেক কাপড় কিনেছেন। তিনি বলেন:

    "এই যাদুঘর খুব বিখ্যাত। প্রায় সবাই এর নাম শুনেছে। আমি বিদেশে যাওয়ার আগে এখান থেকে কিছু কাপড় কিনবো। এগুলো নান থুংয়ের ঐতিহ্য।"

    নীল ছাপা কাপড় চীনের প্রথম ইমম্যাটেরিয়ালিটি হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। উ ইউয়ান সিন এই প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য অসাধারণ অবদান রাখার কৃতিত্ব পেয়েছেন। এখন তার একমাত্র আশা হলো এই কাজে আরো বেশি লোক নিযুক্ত হবে। সম্প্রতি একজন ১৯ বছর বয়স্ক তরুণ তার কাছ থেকে এই প্রযুক্তি শিখে নীল ছাপা কাপড়ের আরো উন্নয়ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এই তরুণের নাম ওয়াং দিয়েন।

    "এখন খুব কম লোক এই প্রযুক্তি শিখতে আগ্রহী। কিন্তু কেউ না শিখলে এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমি মিস্টার উ'র কাছে এসে আমার শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছি। তিনি আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। তিনি খুব ভাল মানুষ।"

    একটু আগে পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি ইমম্যাটিরিয়ালিটি হেরিটেজ প্রদর্শনীতে উ ইউয়ান সিন ও তার পরিবারের সবাই একসাথে নীল ছাপা কাপড়ের উত্পাদনের প্রক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাওয়ের প্রশংসা পেয়েছেন। (ইয়াং ওয়েই মিং)