v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-30 16:37:13    
তিব্বতী জাতির ঐতিহাসিক কাব্য ' রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনীর ' সংরক্ষণ ও উত্তরাধিকার

cri
    এতক্ষণ আপনারা যা শুনেছেন , তা তিব্বতী জাতির দীর্ঘ ঐতিহাসিক কাব্য ' রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনীর ' একটি অংশ । রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী রচিত হয় এগার শতাব্দি থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দিতে । তিব্বতী জাতির লোকেরা যৌথভাবে এই ঐতিহাসিক কাব্য রচনা করেছেন । এ পর্যন্ত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , এই কাব্যের শব্দের সংখ্যা দেড় কোটিতে দাঁড়িয়েছে । বহু বছর ধরে এই কাব্য লোক সংগীতের মাধ্যমে প্রচলিত রয়েছে । আজ এই অনুষ্ঠানে এই ঐতিহাসিক কাব্যের সংরক্ষণ ও উত্তরাধিকার সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    চীনের অপেরা ও শিল্পকলা সমিতির একজন বিশেষজ্ঞ সোনাম সেরিং বলেছেন , রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী কাব্যটিতে প্রাচীনকালে গেসার নামে তিব্বতের একজন বিখ্যাত বীরের জীবনী সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে । অন্যায় ও দুরাচার দমন করা এবং দুর্বল ও গরীবদের সাহায্য করার জন্য তিনি আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন । ফলে জনসাধারণ সুখী জীবনযাপন করতে পেরেছে ।

    এ পর্যন্ত পৃথিবীতে রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী এমন একটি দীর্ঘতম কাব্য , যে কাব্যে প্রাচীনকালে তিব্বতী জাতির সমাজ , ইতিহাস , রাজনীতি , অর্থনীতি , অন্যান্য জাতির আদান প্রদান , ভাষা ও লিপিকলা , সংস্কৃতি ও শিল্পকলাসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ।

    তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল চীনের তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল , সিছুয়ান , ইউনান , ছিংহাই , কানসু প্রভৃতি প্রদেশে রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী পরিবেশনের জন্য বহু লোকশিল্পী আছেন । তাদের যুগ যুগ ধরে প্রচেষ্টার ফলেই গত প্রায় এক হাজার বছর ধরে এই মহা কাব্য প্রচলিত রয়েছে । এই সব শিল্পী এই মহাকাব্যের চল্লিশ পঞ্চাশটি কাহিনী নিয়ে পরিবেশন করতে পারেন । আজ এই অনুষ্ঠানের শুরুতে আপনারা যা শুনেছেন , তা সাম গ্রুব নামে ৮৪ বছর বয়স্ক একজন প্রবীণ শিল্পী পরিবেশন করেছেন । তিনি এই মহা কাব্যের ষাটেরও বেশি কাহিনী নিয়ে পরিবেশন করতে পারেন ।

    ১৯২২ সালে উত্তর তিব্বতের একটি গ্রামে সাম গ্রুবের জন্ম । বাইরের সঙ্গে এই গ্রাম তিব্বতের একটি সংযোগস্থল । প্রতিদিন বহু সংখ্যক ব্যবসায়ী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই পথের মাধ্যমে তিব্বতে যেতেন এবং তিব্বত থেকে বেরিয়ে আসতেন । সাম গ্রুবের নানা ব্যবসা করতেন । সাম গ্রুব ও সপরিবারের গার্হস্থ্য জীবনযাপন নানার উপার্জনের ওপর নির্ভর করতো । সাম গ্রুবের নানাও রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী নিয়ে পরিবেশনের একজন শিল্পী । তিনি নিপুণভাবে এই মহাকাব্যের বহু কাহিনী নিয়ে পরিবেশন করতে পারেন । ছোট বেলায় সাম গ্রুব নানার কাছে এই মহাকাব্যের পরিবেশন শুনতে পছন্দ করতেন । ফলে এই মহা কাব্য ধীরে ধীরে সাম গ্রুবের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে ।

    পরে নানা মারা যান । সাম গ্রুব তার কাছ থেকে এই মহাকাব্যের পরিবেশন আর শুনতে পান নি । নানার মৃত্যুতে সাম গ্রুব খুব মর্মাহত হন এবং এই মহাকাব্যের প্রতি আরো বেশি আকর্ষণ ও পরিবেশনের বাসনা ব্যক্ত করেন ।

    ১১ বছর বয়সে এক দিন সাম গ্রুব পাহাড়ে নিয়মিতভাবে ভেড়া পালন করছিলেন । তখন হঠাত্ বৃষ্টি পড়ছিল । আশ্রয় নেয়ার জন্য তিনি পাহাড়ের একটি গুহায় প্রবেশ করলেন । ক্লান্ত হওয়ায় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন । রাজা গেসার তাঁর স্বপ্নে হাজির হন । তার পর তিনি স্বপ্নে আরেকবার রাজা গেসারকে দেখেছেন । স্বপ্নে তিনি রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনীর একটির পর একটি কাহিনী উপভোগ করলেন । ঘুম থেকে উঠার পর তিনি আবিষ্কার করেন যে , এই মহাকাব্যের বিষয়বস্তু স্পষ্টভাবে তার মনে এসেছে ।

    তিব্বতী ধর্মের গোপনীয়তার মতো রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী সংক্রান্ত বহু শিল্পীদের প্রচুর রহস্যময় তার অভিজ্ঞতা আছে । তার পর সাম গ্রুবও রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী নিয়ে পরিবেশন শুরু করলেন । এর পাশাপাশি তিনি মহা কাব্যে রাজা গেসারের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ভিত্তিতে একটি টুপি ও একটি কাঠের ক্রাচ বানিয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    রাজা গেসারের ব্যবহৃত চাবুকের ভূমিকার ভিত্তিতে ক্রাচ বানানো হয়েছে । এটা তার ঘোড়ার পরিচায়ক । এতে বৈচিত্র্যময় চিন্তা-ভাবনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । টুপি ও কাঠের ক্রাচ রাজা গেসার সম্পর্কিত কাব্যের শিল্পীদের প্রতিনিধিত্ব করে । সাম গ্রুব এসব নিয়ে তিব্বতের উত্তরাংশ থেকে পূর্বাংশে ঘুরে বেড়িয়েছেন ।

    যেখানে তিনি ঘুরে বেড়াতেন , সেখানে রাজা গেসার সম্পর্কিত যুদ্ধ ইতিহাস ও তাঁর বীরত্ব নিয়ে পরিবেশন করতেন। তিনি ব্যাপক তিব্বতী জনসাধারণের কদর পেয়েছেন । এতে তাঁর আয়ও বেড়ে গেছে । কাহিনী নিয়ে পরিবেশন করার জন্য তাঁকে নানা রকম অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় । লোকেরা তাঁকে শিল্পী ডাকেন ।

    সাম গ্রুব ধীরে ধীরে রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী নিয়ে পরিবেশনের মাধ্যমে খ্যাতিমান শিল্পী হয়েছেন ।

রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী যাতে বংশপরম্পরায় প্রচলিত হয় , সেজন্য তিব্বত স্বায়ত্ত্ব- শাসিত অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই মহাকাব্যের সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ জোরদার করেছে । তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয় , তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে । এর সঙ্গে সঙ্গে স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগে তাদের আবাস ও জীবনযাপনের জন্য ভর্তুকীও বিলি করা হয় ।

    ১৯৮০ সাল থেকে তিব্বতে রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী সংক্রান্ত দু' একটি গল্পভিত্তিক বই প্রকাশিত হয় । এ পর্যন্ত এই মহাকাব্য সম্পর্কিত ৩০টি বই প্রকাশিত হয়েছে । রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনী শিল্পীদের পরিবেশনের মাধ্যমে প্রচলিত হয়ে আসছে । বর্তমানে শিল্পীরা বয়স্ক হয়েছে , তাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যু বরণও করেছেন । এতে রাজা গেসার সম্পর্কিত জীবনীর সংরক্ষণ ও উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করার জন্য ব্যাপক অসুবিধা ও চাপের সৃষ্টি হয়েছে । তিব্বতের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর বিশেষজ্ঞ রিগজিন বলেছেন ,

    এই মহাকাব্য সংরক্ষণের জন্য শিল্পীদের পরিবেশনের ভিত্তিতে ভিডিও-অডিও দ্রব্য তৈরী করতে হবে এবং তা লিখিতভাবে প্রকাশনা করতে হবে । একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী , পরবর্তী ৫ থেকে ৮ বছরে সাম গ্রুবের পরিবেশিত ষাটেরও বেশি কাহিনী প্রকাশ করা হবে ।