প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, সুদূর পেইচিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আমি ইয়াং ওয়েই মিং। আজকের "আমার স্বপ্ন, আমার শিক্ষা" আসরে আপনাদেরকে জানাবোশাংহাই ইউনিভার্সিটির তথ্য ।
(রি ১)
"কয়েকজন আন্টি নিয়মিত আমার রুমে এসে চা খান, গল্প করেন। মাঝে মাঝে তারা রান্না করে আমাকে ডাকেন, কেদার আসো, বন্ধুদেরকে নিয়ে খেতে আসো।"
শাংহাই ইউনিভার্সিটির নেপালী ছাত্র কেদার শ্রেষ্ঠা প্রায়ই কাছের এলাকাগুলোর আন্টিদের আমন্ত্রণ পান। তারা সবাই কেদারকে খুব পছন্দ করেন। শাংহাই ইউনিভার্সিটিতে কেদারের প্রায় ৭ বছর চলছে। এখানকার পরিবেশ তার খুব পরিচিত। প্রায় সবাই তাকে চেনে। তিনি অন্যকে সাহায্য করতে ভালোবাসেন, তাই সবাই তাকে "বড় ভাই" বলে ডাকে। স্বেচ্ছায় তিনি নতুন আসা ছাত্রছাত্রীদের নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রচুর সাহায্য করেন। তিনি বলেন:
(রি ২)
"নতুন কেউ চীনে আসলে আমি কয়েকজন শিক্ষক এবং সিনিয়র ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসের চারদিকে ঘুরে বেড়াই। পোস্ট অফিস, ব্যাংক, লাইব্রেরি, সব তাদের চিনিয়ে দেই।"
তিনি বলেছেন, ডাবল ল্যাংগুয়েজ কর্নার হলো চীনা নাগরিকদের সঙ্গে ভাববিনিময় করার একটি ভাল জায়গা। সেখানে চীনা মানুষেরা বিদেশীদের কাছ থেকে ইংরেজী শিখতে পারে, আর বিদেশীরা চীনা মানুষদের কাছ থেকে চীনা ভাষা, এমন কি শাংহাইয়ের আঞ্চলিক ভাষাও শিখতে পারে। তিনি বলেন:
(রি ৩)
"প্রতি রবিবার আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধুডাবল ল্যাংগুলেজ কর্নারে যাই। । সেখানে বিভিন্ন বয়সের চীনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। আমি তাদের কাছ থেকে অনেক শিখেছি। পরিচিত হওয়ার পর তাদের অনেকে আমাকে তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। আমরা একসঙ্গে নুডলস ও ডাম্প্লিং রান্না করি। খুব মজার।"
কেদারের অনেক চীনা বন্ধু আছে। কেউ কেউ তার কাছ থেকে নেপাল সম্বন্ধে শুনে আগ্রহী হয়ে নেপালেও গেছেন। কেদার বলেন, তার চীনা বন্ধুরা তাকে অনেক সাহায্য করেন।
(রি ৪)
"আমার একজন বন্ধু আছে, ডাক্তার হান। তিনি মাসাজ করেন। এক দিন আমার পিঠে প্রচন্ড ব্যথা ছিল। তিনি মাসাজ করে দেয়ার পর আর ব্যথা হয়নি। আমি খুব কৃতজ্ঞ। এখনো টেলিফোনে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।"
কেদারের এতো প্রিয় শাংহাই ইউনিভার্সিটি কেমন? শাংহাই ইউনিভার্সিটিতে ২২টি ইন্সটিটিউট আছে। ৬৭টি বিষয়ে স্নাতক, ১৩১টি বিষয়ে মাস্টারস এবং ৪০টি বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়া হয়। এছাড়া এমবিএ কোর্সও রয়েছে।
যে বিষয়গুলোতে বিদেশী ছাত্রছাত্রী বেশি আগ্রহী সেগুলো হলো আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য, পর্যটন শিল্প এবং বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা শিক্ষা। শাংহাই ইউনিভার্সিটির টেলিভিশন ও রেডিও সম্পাদনা, চারুকলা এবং টেলিযোগাযোগ বিষয়ও খুব ভাল।
শাংহাই ইউনিভার্সিটি ছাত্রছাত্রীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহায়িক দুই শিক্ষার ওপরেই গুরুত্ব দেয়। কতৃপক্ষ আশা করে ছাত্রছাত্রীরা যা শিখেছে তা যেন ব্যবহারিক জীবনে ভালভাবে কাজে লাগাতে পারে। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শাংহাই ইউনিভার্সিটি খুব নমনীয়। ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক মাদাম ও কুও ছেং বলেন:
(রি ৬)
"প্রতি বছর আমাদের তিনটি টার্ম আছে। কোর্সগুলো নির্ধারিত নয়, ছাত্রছাত্রীরা নিজের পছন্দ মতো কোর্স বেছে নিতে পারে। তারা নিজের মূল বিষয় ছাড়াও সহযোগী বিষয়গুলো পছন্দ করে নিতে পারে। কেউ তাড়াতাড়ি শেখা শেষ করতে পারলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ডিগ্রি অর্জন করতে পারে।"
শাংহাই ইউনিভার্সিটি বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস রুমের লেখাপড়ার বাইরেও বিনোদনের দিকটিকেও গুরুত্ব দেয়। তাদের জীবন আরো বৈচিত্রময় করে তোলার জন্য প্রতি টার্মে একবার ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। টার্ম শেষে তাদের নিয়ে ভ্রমণও করা হয়। মাদাম উয়ো বলেন, বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে খুব আগ্রহী। যেমন এবারের কাছি-টানাটানি প্রতিযোগিতা:
(রি ৭)
"বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা দুই দলে ভাগ হয়ে দুই সারিতে দাঁড়ায় তারপর একটি অভিন্ন রশি সজোরে নিজেদের দিকে টানতে থাকে। যদিও খেলাটি খুবই সহজ তারপরও এতে জেতার কিছু কৌশল আছে, শিক্ষকরা সেটাও তাদের শিখিয়ে দেন। তাদের হালকা অনুযোগ হচ্ছে, এবারের প্রতিযোগিতায় স্পোট আইইটেম কম হয়েছে। আগামী বছর একটু বেশি থাকবে বলে সবার আশা।"
শাংহাই ইউনিভার্সিটি আন্তর্জাতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তারা বিশ্বের বিশটিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। মাদাম ও বলেন:
(রি ৮)
"থাইল্যান্ডের সুংকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব ভাল। তাদের বাছাই করা ছাত্রছাত্রীরা এক টার্মের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। আমরা তাদের জন্য অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, চীনা সংস্কৃতি এবং শাংহাইয়ের রূপরেখা ইত্যাদি কোর্স খুলেছি। এবং তাদের সঙ্গে যৌথভাবে থাইল্যান্ডের বুকিত দ্বীপে একটি কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি।
মনসংযোগ ও নিরলস অধ্যাবসায়ের যে স্পৃহা শাংহাই ইউনিভার্সিটি তৈরি করে দেয় তা বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত জীবনে দারুন কাজে লাগে। দক্ষিণ কোরিয়ার ছাত্র লি জুং সি এখানে মাত্র তিন মাস চীনা ভাষা শিখে তরতর করে উচ্চ পর্যায়ের ক্লাসে উঠে গেছেন। তারপরও তার মনে হয় যথেষ্ট নয়।
( রি ৯)
"আমাদের ক্লাসে সবাই খুব মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। শুধু আমার চীনা ভাষা শেখার অভিজ্ঞতা কম। তাই খুব কঠিন মনে হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে।"
মাদাম উয়ো বলেন:
(রি ১০)
"আমরা আশা করি বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা কিছু সহায়ক জ্ঞান গ্রহণ করতে পারে। পাশা পাশি চীন ও শাংহাই সম্পর্কে বেশি তথ্য জেনে নিতে পারে। আশা করি তাদের মাধ্যমে চীন ও বিশ্বের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে।"
আচ্ছা বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ হলো। শাংহাই ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট হলো: www.shu.edu.cn। আগামী সপ্তাহে আমরা শাংহাই নরমাল ইউনিভার্সিটির তথ্য আপনাদের জানাবো। সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন।
|