v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-26 20:23:26    
শিক্ষক ইন স্যুয়েমেইর গল্প

cri
    দু'বছর আগে ৬'জন ছাত্রকে বাঁচানোর জন্য শিক্ষক ইন স্যুয়েমেই মর্মান্তিক এক গাড়ির দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান । সেই ৬'জন ছাত্র এখন কেমন আছে ? তারা সেই দুঃসহ স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে কি না ?

    সেই ৬'জন ছাত্রকে দেখলে কেউই মনে করবে না যে ,তারা মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছিল। ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ দুপুর বেলায় চিয়াংসু প্রদেশের চিনথান শহরের ছেননান প্রাথমিক স্কুলের ছাত্ররা সিনেমা দেখতে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিল । হঠাত একটি গাড়িকে ধেয়ে আসতে দেখে আতংকে তারা রাস্তার মাঝখানে থেমে গেল । এই বিপদের মুহুর্তে ৫২ বছর বয়সী শিক্ষক ইন স্যুয়েমেই নিজের দুই বাহুতে আগলে ধরে ৬ ছাত্রকে রাস্তার পাশে ঠেলে দিলেন আর গাড়ির ধাক্কায় তিনি ২৫ মিটার দূরে ছিটকে গিয়ে পড়লেন । ৬ছাত্র বেঁচে গেলো আর শিক্ষক ইন চিরকালের জন্য হারিয়ে গেলেন। ঐ ৬ চাত্র এখন দু'বছর আগের সেই ভয়াবহ স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এলেও শিক্ষক ইনকে ভোলেনি । এই দু বছরে তারা বেশ বড় হয়েছে । তারা এখন আনন্দে দিন কাটাচ্ছে । তবে দু'বছর আগের সেই দৃশ্য তাদের এখনো মনে পড়ে । কখনো তাদের প্রিয় শিক্ষক ইনকে ভুলতে পারে না । শিক্ষক ইন না থাকলে সেই মুহুর্তে তারা মরে যেত । তারা শিক্ষক ইনের স্মৃতির জন্য " পৃথিবীর মা সবই একই" শিরোনামে একটি গান রচনা করেছে ।

    শিক্ষক ইনের ছেলে ফান ফির বয়স ২২ বছর । সে এখন নানচিং মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেনীতে লেখাপড়া করছে । নিজের লেখাপড়া সম্পর্কে সে বলে , মা আমাকে মেডিক্যাল বিষয়ে পড়তে বলেছে । তিনি আমাকে প্রতি দিন বলতেন , শেষ পর্যন্ত মানুষ মরে যাবেই , মৃত্যুর কোনো ভয় নেই । মানুষকে সারা জীবনে ভাল কাজ করতে হবে । ছেলে হিসেবে তুমি কখনো সহজে কাঁদবে না । মা আমাকে সাহসী হতে শিখিয়েছেন । আমি চিরকালই মায়ের কথা মনে রাখব । ফান ফি মায়ের ভাল ছেলে । মায়ের কথা অনুযায়ী সে নিজেকে মানুষ হতে তৈরী করছ ।

    মায়ের অন্ত্যস্টিক্রিয়ায় ফান ফি মায়ের কথা রাখতে পারেনি । সে বলে , একটি পুষ্পস্তবকে লেখা ছিল, শেষ পর্যন্ত মানুষ মরে যাবেই,মৃত্যুর কোনো ভয় নেই । মানুষকে সারা জীবনে ভাল কাজ করতে হবে । লেখাটা দেখে আমার মনে হলো আমি যেন আবার মায়ের কথা শুনছি । আমি মনে করি , এটা আমার প্রতি মায়ের শেষ শিক্ষা । আমি হঠাত অজ্ঞান হয়ে পড়লাম । জ্ঞান ফিরে আসার পর আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম । মা আমাকে না কাঁদার জন্য বলেছিলেন অথচ আমি তার কথা রাখতে পারলাম না । আমার মনে হয় ,মায়ের জন্যে আকাশও কাঁদতে পারে।

    ফান ফি বলে, মা নিজের জন্মদিন পালন করতেন না । কিন্তু ছেলের জন্মদিন তিনি কখনো ভোলেননি । ছোটো বেলায় ফান ফি প্রায় মাকে জিজ্ঞেস করত, জন্ম দিনে তিনি কি উপহার চান ? মা হেসে হেসে ফান ফিকে বলতেন , তার হাত থেকে একটি রুটি খেতে চান । তাই অনেক বছর ধরে মায়ের জন্মদিনে ফান ফি তাঁকে একটি করে রুটি কিনে দিত । তার পর নিচুস্বরে মায়ের কানে কানে বলত, মা আমি তোমাকে ভালবাসি ।

    বহু বছর ধরে ফান ফির একটি স্বপ্ন ছিল। সেটি হল, মাকে পেইচিংয়ে অলিম্পিক গেমস দেখতে নিয়ে যাওয়া । সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিন থেকে ফান ফি অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করে । কিন্তু এই স্বপ্ন কোনো দিনই বাস্তবায়িত হবে না , এ কথা ভেবে ফান ফির খুব দুঃখ হয় ।

    ফান ফির সঙ্গে পরিচিত প্রতিটি মানুষ জানে , ফান ফির একটি কাপ আছে, কাপটিতে তার মায়ের ছবি আঁকা আছে । ফান ফি বলে, প্রতি দিন আমি এই কাপে পানি খাই । পানি খাওয়ার সময় আমি উষ্ণতা অনুভব করি । যেন মা এখনো আমার পাশেই আছেন । প্রত্যেক বছর শিক্ষক ইনের মৃত্যু-দিনে আদরের ছেলে ফান ফি কাপটিতে মায়ের জন্য চা বানিয়ে দেয়। তার পর মায়ের কবরস্থানের সামনে উবু হয়ে বসে মাকে সালাম করে । গেলো বছর সে নিজের বড় হওয়ার ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা কবরের পাশে বসে মাকে শুনিয়েছে ।

    ফান ফি বলে , মায়ের জন্ম দিন সে সঠিকভাবে জানে না । তবে সে ১ জুনকে মায়ের জন্ম দিন হিসেবে পালন করে । সে বলে, জীবিত থাকাকালে মা ছেলেমেয়েকে সবচাইতে বেশি ভালবাসতেন । ছেলেমেয়ের হাসিমুখকে মায়ের জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে মনে করে ফান ফি ।

    ফান ফির উচ্ছলতা ও উদারতা শিক্ষক ইনের বাঁচানো ৬'জন নির্মল ও সরল ছেলেমেয়েকে মুগ্ধ করেছে । তারা অকৃত্রিমভাবে ফান ফিকে বড় ভাই বলে ডাকে । ফান ফি বলে , তাদেরকে বাঁচানোর জন্য মা নিজের প্রাণ হারিয়েছেন বটে । তবে তারা আনন্দের সঙ্গে জীবনযাপন করছে এবং দিনদিন বড় হয়ে উঠছে দেখে আমি সত্যি আনন্দিত । আমি মনে করি , মা'ও খুশি হবেন । ফান ফি নিজের আলো দিয়ে কালো মেঘ তাড়িয়ে দিয়েছে । মায়ের মতো ভালবাসা নিয়ে তারা আনন্দের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছে । সে বলে , আমি মায়ের কথা অনুযায়ী একজন ভাল মানুষ হব এবং ভাল ডাক্তার হব ।