v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-10-26 09:25:40    
কৃষক এবং পশু পালকদের খুশি জীবন

cri

    আপনি বিমান যোগে তিব্বত আসলে সহজেই আবিষ্কার করবেন যে, লাসা শহরের গোংগা বিমান বন্দর থেকে শহর পর্যন্ত সড়কের দু'পাশে পাথড় ও কাঠ দিয়ে তিব্বতের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুই তলার ইমারত রয়েছে। এখান দিয়ে যাওয়ার অনেক পর্যটকের সময় মনে হয় বড় বড় নগরের বাংলো এলাকার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। তিব্বতের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার পথে এ ধরণের ইমারত সবখানে দেখা যায়। আপনি জানেন কি? এ সব সুন্দর ইমারতের মালিক হচ্ছেন তিব্বত অঞ্চলের কৃষক ও পশু পালক। বর্তমানে তিব্বতের কৃষক ও পশু পালকরা নিরাপদ ও আরামদায়ক বাড়িতে বসবাস করতে এবং পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পানি খেতে পারেন। তা ছাড়াও, তাঁরা সুবিশাল ও সমতল পথে চলেন এবং সুবিধাজনক বিদ্যুত্ ব্যবহার করেন। সেখানকার কৃষকরা ও পশু পালকরা নাগরিকদের মতো দিনের বেলায় যার যার বাড়ির এক তলায় খান আর গল্প করেন এবং রাতেরবেলায় দু'তলার শয়নকক্ষে গিয়ে ঘুমান। তাঁরা খুব আনন্দময় জীবন কাটাচ্ছেন।

    কিন্তু, শ্রোতাবন্ধুরা, হয়তো আপনারা জানেন না, আগে তিব্বত অঞ্চলের কৃষক ও পশু পালকরা তক্তা দিয়ে তৈরী ছোটখাটো ও ভেজা রুমে বসবাস করতেন। এক পরিবারের কয়েক জন শুধু একই শয়নকক্ষে ঘুমাতো। আমাদের সংবাদদাতার সহযাত্রী বা সাং বলেন,

    আগে আমাদের বাড়ির উপরে বসবাস এবং বাড়ির নীচে গরু-মহিষ পালন করতাম। তাই খুব ময়লা ছিল। এখন এ ধরণের নতুন নির্মিত বাসায় মানুষ এবং গরু-মহিষকে আলাদা করা হয়েছে এবং মিথেইন গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।

    লিনচি এলাকায় মিথেইন গ্যাসের প্রথম গ্রামের পরিচালক বলেন,

    সারা গ্রামের ৩৯টি পরিবার প্রথম দফা বাড়ির পুনঃনির্মাণ প্রকল্পে উপকৃত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আরো দশটি পরিবারের বাড়ির পুনঃনির্মাণ কাজ চলচ্ছে। আগে এখানে বিজলীবাতি ছিল না এবং শুধুমাত্র কাঠ ছাই করার উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন বাড়িতে টিভি কেন্দ্র, রিফ্রিজারেটার এবং গৃহসজ্জা সব আছে। আমাদের জীবন অনেক পরিবর্তিত হয়েছে এবং আমরা এখন খুব খুশি।

    আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে কার্যকর "কৃষক ও পশু পালকদের বাড়ির পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের" উদ্দেশ্য হলো কৃষক ও পশু পালকদের আবাসিক অবস্থা উন্নয়ন করা। তিব্বতের গ্রামাঞ্চলে বিশাল পরিবর্তন ঘটছে। এ ধরণের পরিবর্তন ঘটায় শহরের সঙ্গে তিব্বত গ্রামাঞ্চলের ব্যবধান দিন দিন কমে যাচ্ছে।

    এখন এই প্রকল্পের অগ্রগতি সুষ্ঠুভাবে চলছে। কিন্তু প্রকল্পের শুরুতেই নানা ধরণের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন ছিল।

    আগে আমাদের বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ ছিল। পরিবারে দু'জন বুড়ো-বুড়ি আছে। প্রথমে সরকার নতুন বাড়ি নির্মাণের অনুরোধ জানানোর সময় বুড়ো-বুড়িরা রাজী হয়নি। তারা মনে করতেন, বাড়ি দিয়ে বাতাস ও বৃষ্টি রোধ করলে চলতো। তাদের সংশোয় ছিল।

    রিখাইচে অঞ্চলের ইয়াতোং জেলার পার্টি সম্পাদক বলেন,

    এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ গত বছর থেকে শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত চারশ'টিরও বেশী পরিবারের বাড়ি নির্মিত হয়েছে। প্রথমে জনগণের সংশয় ছিল। তাই তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল অনেক উত্সাহজনক নীতি জারি করেছে। যেমন, কৃষক ও পশু পালকদেরকে সরকারী ভর্তুকি দেয়া এবং ব্যাংকের কাছে নিম্ন সুদসম্পন্ন ঋণের জন্য দরখাস্ত করা ইত্যাদি।

    জনগণ খুব খুশি যে, তাদের নিজের বাড়ি পুনঃনির্মাণ কাজ সরকারের বাস্তব সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছে। এটি হচ্ছে ইতিহাসে কৃষক ও পশু পালকদের বসতবাড়ীর সুযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৃহত্তম ব্যাপকতাসম্পন্ন একটি প্রকল্প। বাড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়ায় পুরোপুরিভাবে কৃষক ও পশু পালকদের বাছাই এবং তাদের জীবনের অভ্যাসের উপর সম্মান দেখানো হয়েছে।

    এখন এই প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী কৃষক ও পশু পালকদের জীবন-যাপনের সুযোগ সত্যিকারভাবেই উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে পানি ও বিদ্যুত্ ব্যবহার এবং পরিবহণ ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে। এই প্রকল্পে যারা অংশগ্রহণ করেন নি তারাও সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

    এ প্রসঙ্গে ইয়াংতোং জেলার পার্টি সম্পাদক বলেন:

    শুরুতে এই প্রকল্পের কাজ খুব কঠিন ছিল। এখন জনগণ খুব সক্রিয়। এর কারণ হচ্ছে সরকারের উত্সাহ, সমর্থন এবং সাহায্য। এর মুল কারণ হচ্ছে তিব্বতী জনগণের ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক জীবন এবং জীবনের গুণগত মান প্রসঙ্গে জনগণের দাবিরও উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে তাদের নিজেদের বসতবাড়ীর সুযোগ উন্নয়নের ইচ্ছা খুব প্রবল। এই প্রকল্পের কল্যাণে কৃষক ও পশু পালকরা যার যার নতুন বাড়িতে বসবাস করতে, কলের পানি ব্যবহার করতে, বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানসম্পন্ন টিভি দেখতে এবং সুদূর বন্ধু ও আত্নীয়স্বজনদের সঙ্গে ফোন করতে পারেন। এটি তাদেরকে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আরো বেশি লোক এতে উপকৃত হয়েছেন। তারা তিব্বত ত্যাগ করে চীনের অভ্যন্তর ভাগে লেখাপড়া ও চাকরি করেন। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার লোকের মতো জীবনের প্রতি তিব্বতের জনগণের মৌলিক মনোভাব একই। তাই নতুন গ্রামের নির্মাণ কাজে জনগণের নতুন বাড়িতে বসবাস করা হচ্ছে তাদের আনন্দময় জীবনের সূচনা। তিব্বতের জনগণের জীবনের উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রচুর সংখ্যক প্রকল্প চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমারা বিশ্বাস করি, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জনগণের ভবিষ্যত জীবন আরো ভালো, আরো সুন্দর হবে।

    আপনি তিব্বত ভ্রমণ করতে পারলে কৃষক ও পশু পালকদের নতুন বাড়িঘরে প্রবেশ করতে এবং তিব্বতের বন্ধুদের সঙ্গে পার্বত্যদেশের জীবন উপভোগ করতে পারবেন। সর্বশেষে আমরা কামনা করি, তিব্বতের কৃষক ও পশু পালকদের জীবন আরো ভালো হক। (লিলি)