২৪ অক্টোবর চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হারপিন শহরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং চিয়ে ছি , রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিন পক্ষ অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করেছে। এতে বাস্তব সহযোগিতা গভীরতর করার বিষয়ে তিন দেশের মধ্যে মতৈক্যও হয়েছে। চীন , রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়মিত বৈঠকের ব্যবস্থা তিনপক্ষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি রাজনৈতিক আস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথাযথভাবে তা অনুধাবন করেছেন । বৈঠক শেষে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি যৌথ প্রস্তাব প্রকাশ করেন।
২০০২ সাল থেকে চীন , রাশিয়া এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ নিয়ে মোট ৬বার বৈঠক করলেন। এতে তিন'পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে অনেক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এবারের বৈঠক হচ্ছে চীনে অনুষ্ঠিত তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রথম বৈঠক। বৈঠকের পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং চিয়ে ছি সংবাদ-মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন: " এবারের বৈঠক খুবই ফলপ্রসূ । তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন।তিনপক্ষের বাস্তব সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছে।"
তিনি বলেন, চীন , রাশিয়া এবং ভারতের উন্নয়ন বিশ্ব শান্তি রক্ষা এবং যৌথ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ন্যায্যতার দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনদেশ অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালাতে আগ্রহী। এ ব্যাপারে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ জোর দিয়ে বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান বহুপাক্ষিক এবং পারস্পরিক কল্যানের ভিত্তিতে হতে হবে। তিনি বলেন:" যৌথ প্রস্তাবে বিশেষভাবে কয়েকটি ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । এগুলো হচ্ছে: জাতিসংঘের ভূমিকা আরও জোরদার করা , বহুপাক্ষিকতা সার্বিকভাবে ত্বরান্বিত করা , বিশ্বের বহুমেরুকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণের উন্নয়ন ঘটানো।"
আবহাওয়ার পরিবর্তন সমস্যায় তিনপক্ষ একমত হয়েছে যে, " জাতিসংঘ আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত কাঠামো প্রস্তাব" এবং কিওটো প্রটোকোল"-এর বিষয়টি আবহাওয়া পরিবর্তন মোকাবেলার গুরুত্বপূর্ণ উপায় । একই সঙ্গে সন্ত্রাস দমন , আন্তঃদেশীয় অপরাধ এবং মাদকদ্রব্যের চোরাচালানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনপক্ষ অব্যাহতভাবে সহযোগিতা জোরদার করবে।
তিনদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা একমত হয়েছে যে, " শান্তি, উন্নয়ন এবং সহযোগিতা" হচ্ছে এশীয় পরিস্থিতি উন্নয়নের প্রধান বিষয়। তবে এর পাশাপাশি এশিয়া আরও অসম উন্নয়ন এবং প্রথা-বহির্ভূত নিরাপত্তা হুমকিসহ বিভিন্ন জরুরি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তিনদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পৃথক পৃথকভাবে বলেছেন যে, এশিয়ার নিরাপত্তা , স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য তিনদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যা ছাড়াও, বাস্তব সহযোগিতা হচ্ছে এবারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয়টি। তিনদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহযোগিতা ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়েও তিন পক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে । একই সঙ্গে কৃষি, ত্রাণ , চিকিত্সা এবং স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বলেছেন:" তিনদেশের মধ্যে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার জন্য তিনপক্ষ সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছে। এ বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারতের নয়াদিল্লীতে তিনটি দেশের শিল্পপতির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে ২০০৮ সালের শুরুর দিকে তিনটি দেশের কর্মকর্তা ও বুদ্ধিজীবীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে কৌশলগত আঞ্চলিক রাজনৈতিক নীতি সংক্রান্ত সেমিনার আয়োজন করবে।"
|